ছাড়পত্র

ছাড়পত্র

সুকান্তভট্টাচার্য

প্রকাশক
প্রশান্ত ভট্টাচার্য
সারস্বত লাইব্রেরী
২০৬ কর্ণওয়ালিস ষ্ট্রীট্
কলিকাতা ৬

প্রচ্ছদশিল্পী
দেবব্রত মুখোপাধ্যায়

প্রথম প্রকাশ
আষাঢ়: ১৩৫৪
দ্বিতীয় সংস্করণ
অগ্রহায়ণ: ১৩৫৫
তৃতীয় সংস্করণ
বৈশাখ: ১৩৫৮
পুনর্মুদ্রণ
শ্রাবণ: ১৩৫৯
পুনমুদ্রণ
ফাল্গুন: ১৩৬০
পুনর্মুদ্রণ
জ্যৈষ্ঠ: ১৩৬২

দাম: দু’ টাকা

মুদ্রাকর
শ্রীনিবারণচন্দ্র ভট্টাচার্য
সারস্বত প্রিণ্টিং ওয়ার্কস
২০৬ কর্ণওয়ালিস ষ্ট্রীট্
কলিকাতা ৬

শ্রদ্ধেয় মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ-কে

প্রথম সংস্করণের ভূমিকা

সুকান্ত তার নিজের প্রথম কবিতার বই দেখে যেতে পারল না—চিরদিন আমাদের এই আক্ষেপ থেকে যাবে। সুকান্তর বই প্রকাশের ভার আমরাই গ্রহণ করেছিলাম; তাই আমাদের প্রত্যেকটা ভুলত্রুটি আজ পর্বতপ্রমাণ হয়ে স্মৃতিকে ভারাক্রান্ত করে তুলছে।

সুকান্তর মৃত্যুর কয়েকটা দিন আগের কথা আজ বড় বেশী মনে পড়ছে। এই বইয়ের সমস্ত কবিতার ছাপানো ফাইল হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে যখন সুকান্তর হাতে দিলাম, তখন আনন্দে উঠে বসেছিল সুকান্ত। বই তাহ’লে সত্যিই বেরোচ্ছে। আসার সময় সুকান্তকে কথা দিয়ে এসেছিলাম—বই বেরোতে আর এক সপ্তাহ। সে সপ্তাহ না যেতেই সুকান্ত আমাদের ছেড়ে চলে গেল।

নামকরণের জন্যেই বইটা বেরোতে এত দেরি হচ্ছিল। বই যখন প্রেসে দেওয়া হয়, সুকান্ত তখন শয্যাগত—বইয়ের নাম তখনও সে ঠিক ক’রে উঠতে পারেনি। পরে সে এত বেশী অসুস্থ হয়ে পড়ল যে, নামকরণের ভার আমাদেরই নিতে হয়। কিন্তু কোন নামই আমাদের পছন্দ হচ্ছিল না। কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে যখন নাম ঠিক হ'ল, প্রচ্ছদপটও আঁকতে দেওয়া হ’ল—তখন অকস্মাৎ বজ্রাঘাতের মত এল সুকান্তর মৃত্যুর খবর। তারপর বইয়ের নাম বদ্‌লে প্রথম কবিতার নামে বইয়ের নাম রাখা হ’ল ‘ছাড়পত্র’।

‘ছাড়পত্রে’র সমস্ত কবিতাই ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৭-এর মধ্যে লেখা। এ ছাড়াও, বইতে নেই এমন বহু কবিতা এখানে সেখানে ছড়িয়ে আছে। তাড়াতাড়িতে গোড়ার দিকে সেগুলো সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। সুকান্তর মৃত্যুর পরে তার লেখার ঝুলিতে আরও বহু অপ্রকাশিত কবিতা পাওয়া যায়। এই সংকলনের সঙ্গে সেই সমস্ত কবিতাও জুড়ে দেবার কথা হয়। কিন্তু তা করতে গেলে আরও বেশী সময় লাগবে এবং বইটাও আকারে বেশী বড় হয়ে যাবে,—এই আশঙ্কা ক’রে ‘ছাড়পত্র’কে বর্তমান আকারেই বার করা এবং অন্যান্য কবিতা নিয়ে সুকান্তর দ্বিতীয় একটি কবিতা-সংগ্রহ বার করার সিদ্ধান্ত হয়। এই অনিশ্চয়তার জন্যে বই প্রকাশে আরও বেশী বিলম্ব হয়ে গেল; ‘ছাড়পত্র’ প্রকাশের ব্যাপারে আমি গোড়া থেকে জড়িত ছিলাম বলেই এই বিলম্বের জন্য প্রকাশকদের পক্ষ থেকে পাঠকসমাজের কাছে ক্ষমা চাইছি।

‘ছাড়পত্রে’র কবিতাগুলি রচনার কালানুক্রমে সাজানো হয় নি। পর পর সাজানোর ব্যাপারে মোটামুটি ভারসাম্য ও ছন্দোবৈচিত্রের দিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। তার ফলে প্রথম দিকে বহু নতুন ও শেষের দিকে বহু পুরানো কবিতাকে স্থান দিতে হয়েছে। ‘চারাগাছ’, ‘প্রার্থী’, ‘একটি মোরগের কাহিনী', ‘সিঁড়ি’, ‘সিগারেট' প্রভৃতি কবিতা সুকান্তর রোগশয্যায় লেখা; ‘ফসলের ডাক’, ‘কৃষকের গান’, ‘এই নবান্নে’, ‘আঠারো বছর বয়স’ প্রভৃতি কবিতা চার-পাঁচ বছর আগেকার লেখা—সুকান্তর বয়স তখন পনেরো ষোল। ‘রবীন্দ্রনাথের প্রতি’, ‘প্রস্তুত’, ‘দুরাশার মৃত্যু’, সম্ভবত তারও আগের লেখা।

১৯৪৩ থেকে ১৯৪৭ সাল—যুগসন্ধির এই পাঁচটা বছর ধরে ‘ছাড়পত্রে’র রচনাকাল। একদিকে মৃত্যুকীর্ণ যুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষ, বন্যা আর মহামারী, অন্যদিকে জীবনপ্রতিষ্ঠার মৃত্যুপণ সংগ্রাম—জয়পরাজয় আর উত্থানপতনে, সুখদুঃখ আর আশানিরাশায় ঘেরা এই পাঁচটা বছর ‘ছাড়পত্রে’ উৎকীর্ণ হয়ে আছে। কোটি কোটি মানুষের বলিষ্ঠ আশা কবির কণ্ঠে নির্ভীক ঘোষণায় ফুটে উঠেছে।

—সুকান্ত নতুন যুগের সার্থক কবি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে এমন একাত্মতা, সহজ কথা সোজাসুজি বলতে পারার এমন দুঃসাহসী ক্ষমতা লুকাস্তর সমসাময়িক আর কোন কবি দেখাতে পেরেছেন কিনা সন্দেহ। বয়সে সর্বকনিষ্ঠ হয়েও কবিত্বশক্তিতে সুকান্ত ছিল অগ্রগণ্যদের একজন। ইস্কুলের ছাত্র অবস্থায় দেশজোড়া এত বিরাট খ্যাতি বাংলার আর কোন কবির ভাগ্যেই বোধহয় জোটেনি। এই বয়সেই বিদেশে সুকান্তর একাধিক কবিতার অনুবাদ হয়েছে, তার কবিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

সুকান্তর কবিতা যাঁরা পড়বেন, তাঁরা একথা স্বীকার করবেন যে, সুকান্তর কবিতা শুধুই বিরাট সম্ভাবনার ইঙ্গিত নয়, তাতে আছে মহৎ পরিণতির সুস্পষ্ট পদধ্বনি। ‘ছাড়পত্র’ তাই বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন পাবে।

কবিতার বিচিত্র কলাকৌশলে, ছন্দের আশ্চর্য দক্ষতায়, শব্দনির্বাচনের অশেষ নৈপুণ্যে এই কবি কিশোর রাজনৈতিক বিরুদ্ধবাদীদেরও অভিভূত করেছে। কিন্তু আঙ্গিকের মায়ায় সুকান্ত কখনও বাঁধা পড়েনি। ‘ছাড়পত্রে’র প্রথম যুগের কবিতার সঙ্গে পরের যুগের কবিতা মিলিয়ে দেখলে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। ‘ঠিকানা’ কিম্বা ‘বোধনে’র সঙ্গে ‘প্রার্থী’র তফাৎ অনেক। ‘প্রার্থী’তে এসে সুকান্ত সম্পূর্ণ একটা নতুন পথের সন্ধান পেয়েছে। পদ্যছন্দ বর্জন ক’রে সহজ নিরাভরণ গদ্যে সে যে আকুতি প্রকাশ করেছে, তা অন্য কোন উপায়ে প্রকাশ করা সম্ভব ছিল না। ‘আর উত্তাপ দিও রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে’—করুণা বা অনুকম্পার কথা নয়, জ্বলন্ত বিশ্বাসের অগ্নিগর্ভ বাণী।

সুকান্তর প্রথম দিকের কবিতায় তার জীবনদর্শন একটু বেশী রকমের প্রকট মনে হতে পারে। হয়ত অতটা স্পষ্টবাদিতা অনেকের পছন্দ হবে না। যেখানে সমাজের শত্রুদের সে নাম ক’রে ক’রে চিনিয়ে দিয়েছে, যেখানে সে সংগ্রামের অগ্নিবর্ণ পথে পাঠকদের হাত ধ’রে ডেকেছে—সেখানে কবিতার সীমানা নিয়ে মতান্তর হতে পারে। কিন্তু সুকান্তর শেষের দিকে লেখা ‘খবর’, ‘চিল’, ‘প্রার্থী’ প্রভৃতি কাউকেই মুগ্ধ না ক’রে পারে না। শেষোক্ত কবিতাগুলি যে অনেক বেশী গভীর, অনেক বেশী মর্মস্পর্শী—এ বিষয়ে আমার সন্দেহ নেই।

‘ছাড়পত্রে’র কাব্যবিচার আমার উদ্দেশ্য নয়, সে ক্ষমতাও আমার নেই। সুকান্তর কবিতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে আমার যেটুকু পরিচয়, সেইটুকুই শুধু এখানে ধরিয়ে দেবার চেষ্টা করেছি।

সুকান্তর সেই সমস্ত অজ্ঞাতনামা বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যাঁরা কষ্ট ক’রে কবিতাগুলি বিভিন্ন পত্রিকা থেকে সংগ্রহ ক’রে দিয়েছিলেন। ‘ছাড়পত্রে’র প্রচ্ছদপট এঁকে দিয়েছেন খ্যাতনামা শিল্পী সত্যজিৎ রায়—তাঁকে অজস্র ধন্যবাদ। এ ছাড়াও অন্যান্য বহু বন্ধু নানাভাবে সাহায্য ক’রে বাধিত করেছেন। পরবর্তী সংস্করণ যাতে ত্রুটিহীন হ’য়ে উঠতে পারে তার জন্যে পাঠকপাঠিকাদের সহযোগিতা কামনা করি।

সুভাষ মুখোপাধ্যায়

দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা

অনেকদিন আগেই ‘ছাড়পত্রে’র প্রথম সংস্করণ নিঃশেষিত হয়। কিন্তু নানা অসুবিধার দরুণ এতদিন প্রকাশকদের পক্ষে দ্বিতীয় সংস্করণ ছাপানো সম্ভব হয়ে উঠেনি।

এই সংস্করণ সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলবার নেই। কয়েকটি নতুন কবিতা এই সংস্করণে দেওয়া হ’ল—‘দেশলাই কাঠি’, ‘সেপ্টেম্বর ’৪৬’ এবং পদ্য ছন্দে ‘কাশ্মীর’।

যারা এতদিন অধীর আগ্রহ নিয়ে ‘ছাড়পত্রে’র দ্বিতীয় সংস্করণের জন্যে অপেক্ষা করেছেন, তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

সু. মু.

তৃতীয় সংস্করণের ভূমিকা

‘ছাড়পত্রে’র তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হ’ল—এই সানন্দ ঘোষণা ছাড়া নতুন ক’রে বলবার কিছু নেই। তৃতীয় সংস্করণে নতুন কোন কবিতা যোগ করা হয় নি; কিন্তু দুটি জায়গায় সামান্য সংশোধন করা হয়েছে। ‘কাশ্মীর’ শীর্ষক ২নং কবিতাটির শেষের দিকে ‘কাশ্মীর চঞ্চল—স্রোত লক্ষ’ বদলিয়ে ‘কাশ্মীর আজ চঞ্চল—স্রোত লক্ষ’ এবং ‘সেপ্টেম্বর ১৯৪৬’ কবিতার শেষের দিকে ‘আজকের কলকাতার প্রার্থনার’ জায়গায় ‘আজকের কলকাতার এ প্রার্থনা’ করা হয়েছে। তার কারণ, এই দুটি জায়গায় পড়তে গেলে আট্‌কায়। সুকান্তর হস্তলিখিত কপি যোগাড় ক’রে উঠতে না পারায় ছাপানো কবিতার সঙ্গে মূল লেখা মিলিয়ে দেখা সম্ভব হ’ল না। যাই হ’ক আশা করা যায় আগামী সংস্করণ বার হবার আগে কবিতাটি মিলিয়ে দেখে নিঃসংশয় হওয়া যাবে।

কাগজ ও ছাপার দর বৃদ্ধির দরুণ বর্তমান সংস্করণটির মূল্য সামান্য বাড়াতে হ’ল। আশা করি পাঠকেরা মার্জনা করবেন।
সু. মু.

সূচীপত্র।
১৩
 ··· 
১৪
১৫
১৬
 ··· 
১৮
২০
২১
২২
২৪
২৬
 ··· 
২৭
২৯
৩০
৩২
 ··· 
৩৪
 ··· 
৩৬
৩৮
৩৯
৪১
৪৩
৪৫
 ··· 
৪৭
৪৮
৪৯
৫০
৫৩
৫৫
৫৬
 ··· 
৫৮
 ··· 
৫৯
 ··· 
৬৩
৬৬
 ··· 
৬৭
৬৮
৭০
৭১
৭২
৭৪

জন্ম: ৩০শে শ্রাবণ ১৩৩৩
মৃত্যু: ২৯শে বৈশাখ ১৩৫৪

এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পর (স্বনামে ও জীবদ্দশায় প্রকাশিত) বা প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর (বেনামে বা ছদ্মনামে এবং মরণোত্তর প্রকাশিত) পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে তাঁর সকল রচনার কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত (বা পূর্বে মৃত লেখকের) সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।