ছাড়পত্র/ফসলের ডাক: ১৩৫১
ফসলের ডাকঃ ১৩৫১
কাস্তে দাও আমার এ হাতে
সােনালী সমুদ্র সামনে, ঝাঁপ দেবো তাতে।
শক্তির উন্মুক্ত হাওয়া আমার পেশীতে
স্নায়ুতে স্নায়ুতে দেখি চেতনার বিদ্যুৎ বিকাশ:
দু-পায়ে অস্থির আজ বলিষ্ঠ কদম;
কাস্তে দাও আমার এ হাতে।
দু-চোখে আমার আজ বিচ্ছুরিত মাঠের আগুন,
নিঃশব্দে বিস্তীর্ণ ক্ষেতে তরঙ্গিত প্রাণের জোয়ার
মৌসুমী হাওয়ায় আসে জীবনের ডাক:
শহরের চুল্লী ঘিরে পতঙ্গের কানে।
বহুদিন উপবাসী নিঃস্ব জনপদে,
মাঠে মাঠে আমাদের ছড়ানাে সম্পদ;
কাস্তে দাও আমার এ হাতে।
মনে আছে একদিন তােমাদের ঘরে
নবান্ন উজাড় করে পাঠিয়েছি সােনার বছরে,
নির্ভাবনার হাসি ছড়িয়েছি মুখে
তৃপ্তির প্রগাঢ় চিহ্ন এনেছি সম্মুখে,
সেদিনের লক্ষ্য সেবার বিনিময়ে
আজ শুধু কাস্তে দাও আমার এ হাতে।
আমার পুরানাে কাস্তে পুড়ে গেছে ক্ষুধার আগুনে,
তাই দাও দীপ্ত কাস্তে চৈতন্য প্রখর
যে কাস্তে ঝলসাবে নিত্য উগ্র দেশপ্রেমে।
জানি আমি মৃত্যু আজ ঘুরে যায় তােমাদেরও দ্বারে
দুর্ভিক্ষ ফেলেছে ছায়া তােমাদের দৈনিক ভাণ্ডারে;
তােমাদের বাঁচানাের প্রতিজ্ঞা আমার,
শুধু আজ কাস্তে দাও আমার এ হাতে।
পরাস্ত তানেক চাষী: ক্ষিপ্রগতি নিঃশব্দ মরণ
জ্বলন্ত মৃত্যুর হাতে দেখা গেল বুভুক্ষুর আত্মসমর্পণ,
তাদের ফসল পড়ে, দৃষ্টি জলে সুদূর সন্ধানী
তাদের ক্ষেতের হাওয়া চুপিচুপি করে কানাকানি—
আমাকেই কাস্তে নিতে হবে!
নিয়ত আমার কানে গুঞ্জরিত ক্ষুধার যন্ত্রণা,
উদ্বেলিত হাওয়া আনে মাঠের সে উচ্ছ্বসিত ডাক,
আমার কাছে জীবনের সুতীব্র সংকেত:
তাই আজ একবার কাস্তে দাও আমার এ হাতে।