ছাড়পত্র/চারাগাছ
চারাগাছ
ভাঙা কুঁড়ে ঘরে থাকি:
পাশে এক বিরাট প্রাসাদ
প্রতিদিন চোখে পড়ে;
সে প্রাসাদ কী দুঃসহ স্পধায় প্রত্যহ
আকাশকে বন্ধুত্ব জানায়;
আমি তাই চেয়ে চেয়ে দেখি।
চেয়ে চেয়ে দেখি আর মনে মনে ভাবি—
এ অট্টালিকার প্রতি ইটের হৃদয়ে
অনেক কাহিনী আছে। অত্যন্ত গোপনে
ঘামের, রক্তের আর চোখের জলের।
তবু এই প্রাসাদকে প্রতিদিন হাজারে হাজারে
সেলাম জানায় লােকে, চেয়ে থাকে বিমূঢ় বিস্ময়ে।
আমি তাই এ প্রাসাদে এতােকাল ঐশ্বর্য দেখেছি,
দেখেছি উদ্ধত এক বনিয়াদী কীর্তির মহিমা।
হঠাৎ সেদিন
চকিত বিস্ময়ে দেখি
অত্যন্ত প্রাচীন সেই প্রাসাদের কার্ণিশের ধারে
তাশ্বত্থ গাছের চারা!
অমনি পৃথিবী
আমার চোখের আর মনের পর্দায়
আসন্ন দিনের ছবি মেলে দিলো একটি পলকে।
ছােট ছােট চারাগাছ—
রসহীন খাদ্যহীন কার্ণিশের ধারে
বলিষ্ঠ শিশুর মতাে বেড়ে ওঠে দুরন্ত উচ্ছ্বাসে।
হঠাৎ চকিতে,
এ শিশুর মধ্যে আমি দেখি এক বৃদ্ধ মহীরুই
শিকড়ে শিকড়ে আনে অবাধ্য ফাটল
উদ্ধত প্রাচীন সেই বনিয়াদী প্রাসাদের দেহে।
ছােট ঘােট চারাগাছ—
নিঃশব্দে হাওয়ায় দোলে, কান পেতে শােনে:
প্রত্যেক ইটের নীচে ঢাকা বহু গােপন কাহিনী
রক্তের, ঘামের আর চোখের জলের।
তাইতাে অবাক আমি দেখি যত অশ্বখচারায়
গােপনে বিদ্রোহ জমে, জমে দেহে শক্তির বারুদ;
প্রাসাদ-বিদীর্ণ-করা বন্যা আসে শিকড়ে শিকড়ে।
মনে হয় এই সব অশ্বথ-শিশুর
রক্তের, ঘামের আর চোখের জলের
ধারায় ধারায় জন্ম,
ওরা তাই বিদ্রোহের দূত॥