ছাড়পত্র/ঠিকানা
ঠিকানা
ঠিকানা আমার চেয়েছাে বন্ধু—
ঠিকানার সন্ধান,
আজও পাওনি? দুঃখ যে দিলে করবাে না অভিমান?
ঠিকানা না হয় না নিলে বন্ধু,
পথে পথে বাস করি,
কখনাে গাছের তলাতে
কখনাে পর্ণ কুটির গড়ি।
আমি যাযাবর, কুড়াই পথের নুড়ি,
হাজার জনতা যেখানে, সেখানে
আমি প্রতিদিন ঘুরি,
বন্ধু, ঘরের খুঁজে পাইনাকো পথ,
তাইতাে পথের নুড়িতে গড়বাে
মজবুত ইমারত।
বন্ধু, আজকে আঘাত দিও না
তােমার দেওয়া ক্ষতে
আমার ঠিকানা খোঁজ করাে শুধু
সূর্যোদয়ের পথে।
ইন্দোনেশিয়া, যুগােশ্লাভিয়া
রুশ ও চীনের কাছে,
আমার ঠিকানা বহুকাল ধ’রে।
জেনাে গচ্ছিত আছে।
আমাকে কি তুমি খুঁজেছো কখনো
সমস্ত দেশ জুড়ে?
তবুও পাওনি? তাহ’লে ফিরেছো
ভুল পথে ঘুরে ঘুরে।
আমার হদিশ জীবনের পথে
মন্বন্তর থেকে
ঘুরে গিয়েছে যে কতদূর
মুক্তির পথে বেঁকে।
বন্ধু, কুয়াশা, সাবধান এই
সূর্যোদয়ের ভােরে;
পথ হারিও না আলাের আশায়
তুমি এক ভুল ক’রে।
বন্ধু, আজকে জানি অস্থির
রক্ত, নদীর জল,
নীড়ে পাখী আর সমুদ্র চঞ্চল।
বন্ধু, সময় হ’য়েছে এখনাে
ঠিকানা অবজ্ঞাত
বন্ধু, তােমার ভুল হয় কেন এতাে?
আর কতদিন দু-চক্ষু কচলাবে,
জালিয়ানওয়ালায় যে পথের শুরু
সে পথে আমাকে পাবে,
জালালাবাদের পথ ধ ’রে ভাই
ধর্মতলার পরে,
দেখবে ঠিকানা লেখা প্রত্যেক ঘরে
ক্ষুব্ধ এদেশে রক্তের অক্ষরে।
বন্ধু, আজকে বিদায়!
দেখেছাে উঠলাে যে হাওয়া ঝােড়াে,
ঠিকানা রইলাে,
এবার মুক্ত স্বদেশেই দেখা ক’রো॥