শিলাইদা,
১৪ই ডিসেম্বর, ১৮৯৪।

 এই চরগুলো একসময়ে জলের নীচে ছিল কি না সেইজন্যে এক এক জায়গায় অনেক দূর পর্য্যন্ত বালির উপর জলের ঢেউখেলানো পদচিহ্ণ পড়ে গেছে। সেই সমস্ত থাকে থাকে ভাঁজ করা বালির উপর নানারঙের চিকন আভা পড়ে ঠিক যেন একটা প্রকাণ্ড সাপের নানারঙা খোলসের মত দেখাচ্ছিল। আমি মনে করলুম, পদ্মা ত একটা প্রকাণ্ড নাগিনীই বটে। সে এক সময় এই বৃহৎ চরের উপর বাস করত, এখন সেখানে কেবল তার একটা বৃহৎ খোলস সন্ধ্যার আলোয় পড়ে চিক্‌চিক্ করচে। বর্ষার সময় সে আপনার সহস্র ফণা তুলে ডাঙার উপর ছোবল মারতে মারতে গর্জ্জন করতে করতে কেমন করে আপনার প্রকাণ্ড বাঁকা লেজ আছড়াতে আছড়াতে ফুলতে ফুলতে চলত সেই দৃশ্যটাও মনে পড়ল। এখন সে শীতকালের সরীসৃপ বিবরের মধ্যে অর্দ্ধপ্রবিষ্ট হয়ে সুদীর্ঘ শীতনিদ্রায় প্রতিদিন ক্ষীণতর হয়ে যাচ্চে।

 বেড়াতে বেড়াতে ক্রমে এত বিচিত্র রং কখন আস্তে আস্তে মিলিয়ে এল—কেবল জোৎস্নার একরঙা শুভ্রতায় জলস্থল মণ্ডিত হয়ে গেল। একসময় যে পূর্ব্বদিকে দিনের উদয় হয়েছিল জগতে কোথাও তার আর কোনো স্মৃতিচিহ্ন‍ই রহিল না।