ছিন্নপত্র (১৯১২)/১৩২
শুক্লসন্ধ্যার চরে যখন একলা বেড়াই, খানিকবাদে শ—প্রায় আসে। কালও সে এসেছিল কাজকর্ম্মের কথা কওয়ার পর যেই একটু চুপ করেছি অমনি হঠাৎ দেখ্লুম অনন্ত জগৎ সেই সন্ধ্যার আকাশে নীরবে আমার সম্মুখে দাড়িয়ে। কানের কাছে একটি মানুষের তুচ্ছ কথায় এই অসীম আকাশভরা একটি আবির্ভাব আবৃত হয়ে গিয়েছিল। যেই মানুষ চুপ করলে অমনি দেখ্তে দেখ্তে নিস্তব্ধ নক্ষত্রলোক হতে শান্তি নেমে এসে আমার হৃদয় পরিপূর্ণ করে তুললে;—যে সভার মধ্যে অনন্তকোটি জ্যোতিষ্ক নীরবে সমাগত আমিও সেই সভার একপ্রান্তে স্থান পেলুম। অস্তিত্ব নামক এক মহাশ্চর্য্য ব্যাপারের মধ্যে ওরা এবং আমি এক আসন পেয়েছি।
সকাল সকাল বেড়াতে বেরই। যতক্ষণ না শ—আসে ততক্ষণ মনটাকে শান্তশীতল করে নিই। তারপরে হঠাৎ শ—এসে যখন জিজ্ঞাসা করে, আজ দুধ খেয়ে কেমন ছিলেন, কিম্বা আজ কি মাসকাবারী হিসাব দেখা শেষ হয়ে গেছে তখন বড় খাপছাড়া শুনতে হয়। আমরা নিত্য এবং অনিত্যের ঠিক এমন মাঝখানে পড়ে দুই দিকের ধাক্কা খেয়ে চলে যেতে থাকি। যখন আধ্যাত্মিক কথা হচ্চে তখন গায়ের কাপড় এবং পেটের ক্ষিদের কথা আনলে ভারি অসঙ্গত শুনতে হয়, অথচ আত্মা এবং পেটের ক্ষিদে চিরকাল একত্রেই যাপন করে এল। যেখানটাতে জ্যোৎস্নালোক পড়চে সেইখানেই আমার জমিদারী,—অথচ জ্যোৎস্না বলচে তোমার জমিদারী মিথ্যা, জমিদারী বলচে তোমার জোৎস্নাটা আগাগোড়াই ফাঁকি। আমি ব্যক্তি এরি ঠিক মাঝখানে।