শিলাইদা,

২৮শে নবেম্বর, ১৮৯৪।

 দিগন্তের শেষ প্রান্ত পর্য্যন্ত বালির চর ধুধু করচে—তাতে না আছে ঘাস, না আছে গাছ, না আছে বাড়িঘর, না আছে কিছু। আকাশের শূন্যতা সমুদ্রের শূন্যতা আমাদের চিরাভ্যস্ত, তার কাছে আমরা আর কিছু দাবি করিনে,—কিন্তু ভূমির শূন্যতাকে সব চেয়ে বেশি শূন্য বলে মনে হয়। কোথাও গতি নেই, জীবন নেই, বৈচিত্র্য নেই; যেখানে ফলে শস্যে তৃণে পশুপক্ষীতে ভরে যেতে পারত সেখানে একটি কুশের অঙ্কুর পর্য্যন্ত নেই,—কেবল একটা উদাস কঠিন নিরবচ্ছিন্ন বৈধব্যের বন্ধ্যাদশা। ঠিক পাশ দিয়ে পদ্মা চলে যাচ্চে, ওপারে ঘাট, বাঁধা নৌকা, স্নানরত লোকজন, নারকেল এবং আমের বাগান, অপরাহ্নে নদীর ধারের হাটে কলধ্বনি—দূরে পাবনার পারে তরুশ্রেণীর ঘননীল রেখা—কোথাও গাঢ়নীল, কোথাও পাণ্ডুনীল, কোথাও সবুজ, কোথাও মাটির ধূসরতা—আর তারই মাঝখানে এই রক্তশূন্য মৃত্যুর মত ফ্যাকাসে সাদা। সন্ধ্যাবেলা সূর্য্যাস্তের সময় এই চরের উপর আর কিছুই নেই, কেউ নেই, কেবল আমি একলা।