শিলাইদা
১৬ই ফাল্গুন, ১৮৯৫।

 নিজের সেই সুগভীর স্বপ্নাবিষ্ট বাল্যকালের উদ্ভ্রান্ত কল্পনার কথা মনে পড়চে—খুব বেশি দিনের কথা বলে ত মনে হচ্চে না—অথচ এবারকার মানবজন্মের অর্দ্ধেক দিন ত চলে গেছেই। আমরা প্রত্যেক মুহূর্ত্ত মাড়িয়ে মাড়িয়ে জীবনটা সম্পূর্ণ করি কিন্তু মোটের উপরে সবটা খুবই ছোট; দুটিঘণ্টাকালের নির্জ্জন চিন্তার মধ্যে সমস্তটাকে ধারণ করা যেতে পারে। শেলি ত্রিশটা বছর প্রতিদিন সহস্র কাজে সহস্র প্রয়াসে জীবন ধারণ করে দুটিমাত্র ভলুম জীবনচরিতের সৃষ্টি করেছেন; তার মধ্যেও ডাউডেন সাহেবের বাজে বকুনি বিস্তর আছে। আমার জীবনের ত্রিশটা বছরে বোধকরি একখানা ভলুমও পোরে না। এইত ব্যাপার, এইটুকুমাত্র কাণ্ড, কিন্তু এরই কত আয়োজন কত দুশ্চেষ্টা। এইটুকুর রসদ জোগাবার জন্যে কত ব্যবসা, কত জমিদারী, কত লোকজন। আছি ত এই দেড় হাত চৌকিতে চুপটি করে বসে কিন্তু কত রকমে পৃথিবীর কত জায়গাই জুড়ে আছি,—সেই সমস্ত বাদসাদ পড়ে কেবল বাকি থাকে দুটি ঘণ্টার চিন্তা—তাও বেশি দিনের জন্যে নয়। আজকের আমার এই একলা বোটের দুপুরবেলাকার মনের ভাব, এই একটা দিনের কুঁড়েমি সেই কয়েকখানা পাতার মধ্যে কোথায় বিলুপ্ত হয়ে থাক্‌বে। এই নিস্তরঙ্গ পদ্মাতীরের নিস্তব্ধ বালুচরের উপরকার নির্জ্জন মধ্যাহ্ণটি আমার অনন্ত অতীত ও অনন্ত ভবিষ্যতের মধ্যে কি কোথাও একটি অতি ক্ষুদ্র সোনালি রেখার চিহ্ণ রেখে দেবে?