শিলাইদা
২৮শে ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৫

 আজ আমি এক অনামিকা চিঠি পেয়েছি—তার আরম্ভেই আছে—

পরের পায়ে ধরে প্রাণদান করা
সকল দানের সার।

আমাকে লেখক কখনো দেখেনি; আমার সাধনার লেখা থেকে পরিচয়। লিখেছে:— “তোমার সাধনায় রবিকর পড়িয়াছে, তাই রবি-উপাসক যত ক্ষুদ্র যত দূরে থাকুক্ তবুও তার জন্যও আজি রবিকর বিকীর্ণ হইতেছে। তুমি জগতের কবি, তবুও সে ভাবিতেছে আজি তুমি তাহারো কবি।” ইত্যাদি। মানুষ প্রীতিদানের জন্য এত ব্যাকুল যে শেষকালে নিজের আইডিয়াকেই ভালবাস্‌তে থাকে। আইডিয়াকে রিয়ালিটির চেয়ে কম সত্য কেন মনে করি! ইন্দ্রিয়ের দ্বারা যা পাচ্চি সেটা বস্তুত যে কি তারই ঠিকানা মিলচে না; আর আইডিয়া দিয়ে যেটা পাই সেই মনের সৃষ্টির প্রকৃত সত্তার প্রতিই বা কেন তার চেয়ে বেশি অনাস্থা করতে যাব? মানুষমাত্রের মধ্যেই একটি আইডিয়াল মানুষ আছে তাকে কেবল মাত্র ভক্তিপ্রীতিস্নেহের দ্বারা খানিকটা নাগাল পাওয়া যায়। প্রত্যেক ছেলের মধ্যে যে একটি বৃহৎ আইডিয়াল আছে সে কেবল ছেলের মা সমস্ত মনপ্রাণ দিয়ে অনুভব করে, অন্য ছেলের মধ্যে সেই অনির্বচনীয়টিকে দেখতে পায় না। মা তার ছেলেকে যা মনে করে’ প্রাণ দেয় সেইটেই কি মায়া আর যা মনে করে’ আমরা দিতে পারিনে সেইটেই সত্য? প্রত্যেক মানুষই অনন্ত যত্নের ধন, তার মধ্যে সৌন্দর্য্যের সীমা নেই। কি কথা থেকে কি কথা উঠ্‌ল! আসল কথাটা হচ্চে, এক হিসাবে আমি আমার ভক্তটির প্রীতিউপহার গ্রহণের যোগ্য নই—অর্থাৎ যদি সে আমাকে আমার প্রত্যহের আবরণের মধ্যে দেখ্‌ত তাহলে এরকম প্রীতি অনুভব করতেই পারত না,—আর এক হিসাবে আমিও এই পরিমাণে, এমন কি, এর চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে প্রীতি পাবার অধিকারী।