সাজাদপুর,
২৮ জুন, ১৮৯৫।

 বসে বসে সাধনার জন্যে একটা গল্প লিখ্‌চি——খুব একটু আষাঢ়ে গোছের গল্প। একটু একটু করে লিখচি এবং বাইরের প্রকৃতির সমস্ত ছায়া আলোক বর্ণ ধ্বনি আমার লেখার সঙ্গে মিশে যাচ্চে। আমি যে সকল দৃশ্য লোক ও ঘটনা কল্পনা করচি তারই চারিদিকে এই রৌদ্রবৃষ্টি, নদীস্রোত এবং নদীতীরের শরবন, এই বর্ষার আকাশ, এই ছায়াবেষ্টিত গ্রাম, এই জলধারাপ্রফুল্ল শস্যেরক্ষেত ঘিরে দাঁড়িয়ে তাদের সত্যে ও সৌন্দর্য্যে সজীব করে তুল্‌চে! কিন্তু পাঠকেরা এর অর্দ্ধেক জিনিষও পাবে না। তারা কেবল কাটা শস্যই পায় কিন্তু শস্যক্ষেত্রের আকাশ বাতাস, শিশির এবং শ্যামলতা সমস্তই বাদ পড়ে যায়। আমার গল্পের সঙ্গে যদি এই মেঘযুক্ত বর্ষাকালের স্নিগ্ধরৌদ্ররঞ্জিত ছোট নদীটি এবং নদীর তীরটি, এই গাছের ছায়া, এবং গ্রামের শান্তিটি এমনি অখণ্ডভাবে তুলে দিতে পারতুম তাহলে সবাই তার সত্যটুকু একেবারে সমগ্রভাবে একমুহূর্ত্তে বুঝে নিতে পারত। অনেকটা রস মনের মধ্যেই থেকে যায়, সবটা পাঠককে দেওয়া যায় না। যা নিজের আছে তাও পরকে দেবার ক্ষমতা বিধাতা মানুষকে সম্পূর্ণ দেন নি।