ছিন্নপত্র (১৯১২)/১৪৪
সাজাদপুর,
২রা জুলাই, ১৮৯৫।
কাজ করতে করতে কোনো একদিকে মুখ ফেরালেই দেখতে পাই নীল আকাশের সঙ্গে মিশ্রিত সবুজ পৃথিবীর একটা অংশ একেবারে আমাদের ঘরের লাগাও হাজির—যেন প্রকৃতিসুন্দরী কুতূহলী পাড়াগেঁয়ে মেয়ের মত আমার জানলা দরজার কাছে উঁকি মারচে; আমার ঘরের এবং মনের, আমার কাজের এবং অবসরের চারিদিকে নবীন ও সুন্দর হয়ে আছে। এই বর্ষণমুক্ত আকাশের আলোকে এই গ্রাম এবং জলের রেখা, এপার এবং ওপার, খোলা মাঠ এবং ভাঙা রাস্তা একটা স্বর্গীয় কবিতায় এপলোদেবের স্বর্ণবীণাধ্বনিতে ঝঙ্কৃত হয়ে উঠেছে। আমি আকাশ এবং আলো এত অন্তরের সঙ্গে ভালবাসি! আকাশ আমার সাকি, নীল স্ফটিকের স্বচ্ছ পেয়ালা উপুড় করে ধরেছে—সোনার আলো মদের মত আমার রক্তের সঙ্গে মিশে গিয়ে আমাকে দেবতাদের সমান করে দিচ্চে। যেখানে আমার এই সাকির মুখ প্রসন্ন এবং উন্মুক্ত যেখানে আমার এই সোনার মদ সব চেয়ে সোনালি ও স্বচ্ছ সেইখানে আমি কবি, সেইখানে আমি রাজা, সেইখানে আমার সঙ্গে বরাবর ঐ সুনীলনির্ম্মল জ্যোতির্ম্ময় অসীমতার এই রকম প্রত্যক্ষ অব্যবহিত যোগ থাক্বে।