ছিন্নপত্র (১৯১২)/৪৬

বোলপুর, 
৮ই জ্যৈষ্ঠ; 
১৮৯২। 

 রসিকতা জিনিষটা বড় বিপদের জিনিষ—ও যদি প্রসন্ন সহাস্যমুখে আপনি ধরা দিলে ত অতি উত্তম, আর ওকে নিয়ে যদি টানাটানি করা যায় তবে বড়ই “ব্যাভ্রম” হবার সম্ভাবনা। হাস্যরস প্রাচীনকালের ব্রহ্মাস্ত্রের মত, যে ওর প্রয়োগ জানে সে ওকে নিয়ে একেবারে কুরুক্ষেত্র বাধিয়ে দিতে পারে—আর যে হতভাগ্য ছুঁড়তে জানে না অথচ নাড়তে যায়, তার বেলায় “বিমুখ ব্রহ্মাস্ত্র আসি অস্ত্রীকেই বধে,” হাস্যরস তাকেই হাস্যজনক করে তোলে।

 মেয়েরা রসিকতা করতে গিয়ে যদি মুখরা হয়ে পড়ে তবে সেটা ভারি অশোভন দেখ্‌তে হয়। আমার ত মনে হয় “কমিক্‌” হতে চেষ্টা করে সফল হলেও মেয়েদের সাজে না—নিষ্ফল হলেও মেয়েদের সাজে না। কারণ “কমিক্” জিনিষটা ভারি গাব্‌দা এবং প্রকাণ্ড। “সাব্লিমিটি”র সঙ্গে “কমিক্যালিটি”র একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে—সেইজন্যে হাতি কমিক্‌, উট্ কমিক্, জিরাফ্ কমিক্, স্থূলতা কমিক্। সৌন্দর্য্যের সঙ্গে বরঞ্চ প্রখরতা শোভা পায় যেমন ফুলের সঙ্গে কাঁটা—তেমনি শাণিত কথা মেয়েদের মুখে বড্ড বাজে বটে তেমনি সাজেও বটে। কিন্তু যে সকল বিদ্রূপে কোনরকম স্থূলত্বের আভাসমাত্র দেয় তার দিক দিয়েও মেয়েদের যাওয়া উচিত হয় না;— সে হচ্চে আমাদের সাব্লাইম স্বজাতীয়ের জন্যে। পুরুষ ফল্‌ষ্টাফ্‌ আমাদের হাসিয়ে নাড়ি ছিঁড়ে দিতে পারে কিন্তু মেয়ে ফলৃষ্টাফ্ আমাদের গা জ্বালিয়ে দিত।