ছিন্নপত্র (১৯১২)/৪৭
৯ই জ্যৈষ্ঠ;
১৮৯২।
কাল যে ঝড় সে আর কি বল্ব! আমার সাধনার নিত্যনৈমিত্তিক লেখা সেরে চা খাবার জন্যে উপরে যাচ্চি, এমন সময়ে প্রচণ্ড ঝড় এসে উপস্থিত। ধুলোয় আকাশ আচ্ছন্ন হয়ে গেল এবং বাগানের যত শুক্নো পাতা একত্র হয়ে লাটিমের মত বাগানময় ঘুরে ঘুরে বেড়াতে লাগ্ল, যেন অরণ্যের যত প্রেতাত্মাগুলো হঠাৎ জেগে উঠে ভুতুড়ে নাচন নাচ্তে আরম্ভ করে দিলে। বাগানের সমস্ত গাছপালা পায়ে শিক্লি-বাঁধা প্রকাণ্ড জটায়ুপাখীর মত ডানা আছড়ে ঝট্পট্ ঝট্পট্ করতে লাগ্ল। সে কি গর্জ্জন, কি মাতামাতি, কি একটা লুটোপুটি ব্যাপার! ঝড়টা দেখে আমার মনে পড়্ছিল, আমেরিকার Ranch সম্বন্ধে মাঝে মাঝে যে রকম বর্ণনা পড়া যায়—হঠাৎ কোন একটা বেড়া ভেঙে ফেলে ছ সাতশো বুনো ঘোড়া ধুলো উড়িয়ে ঊর্দ্ধশ্বাসে ছুটে পালাচ্চে, আর তার পিছনে পিছনে তাদের তাড়িয়ে ফিরিয়ে আনবার জন্যে বড় বড় ফাঁস হাতে অনেকগুলো অশ্বারোহী ছুটেছে—মাঝে মাঝে যেখানে যাকে পাচ্চে সাঁই সাঁই শব্দে দিচ্চে চাব্কে্— বোলপুরের অবারিত আকাশ এবং মাঠের মধ্যে যেন সেই রকমের একটা উচ্ছৃঙ্খল পলায়ন এবং পশ্চাদ্ধাবন চল্চে—দৌড় দৌড় ধর্ধর পালা’ পালা’ হুড়মুড় দুড়দাড় ব্যাপার।