ছিন্নপত্র (১৯১২)/৫১

শিলাইদহ, 
৩১ শে জ্যৈষ্ঠ, 
১৮৯২। 

 এ সব শিষ্টাচার আর ভাল লাগে না—আজকাল প্রায় বসে বসে আওড়াই “ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুয়িন!” বেশ একটা সুস্থ সবল উন্মুক্ত অসভ্যতা। ইচ্ছা করে দিনরাত্রি বিচার আচার বিবেক বুদ্ধি নিয়ে কতকগুলো বহুকেলে জীর্ণতার মধ্যে শরীরমনকে অকালে জরাগ্রস্ত না করে একটা দ্বিধাহীন চিন্তাহীন প্রাণ নিয়ে খুব একটা প্রবল জীবনের আনন্দ লাভ করি। মনের সমস্ত বাসনা ভাবনা ভালই হোক্‌ মন্দই হোক্, বেশ অসংশয় সঙ্কোচ এবং প্রশস্ত যেন হয়—প্রথার সঙ্গে বুদ্ধির, বুদ্ধির সঙ্গে ইচ্ছার, ইচ্ছার সঙ্গে কাজের কোনরকম অহর্নিশি খিটিমিটি না ঘটে। একবার যদি এই রুদ্ধ জীবনকে খুব উদ্দাম উচ্ছৃঙ্খলভাবে ছাড়া দিতে পারতুম, একেবারে দিগ্বিদিকে ঢেউ খেলিয়ে ঝড় বাহিয়ে দিতুম, একটা বলিষ্ঠ বুনো ঘোড়ার মত কেবল আপনার লঘুত্বের আনন্দ-আবেগে ছুটে যেতুম! কিন্তু আমি বেদুয়িন নই বাঙালী। আমি কোণে বসে বসে খুঁৎ খুঁৎ করব বিচার করব তর্ক করব, মনটাকে নিয়ে একবার ওল্টাব একবার পাল্টাব।—যেমন করে মাছ ভাজে, ফুটন্ত তেলে একবার এ পিট চিড়বিড় করে উঠবে একবার ওপিঠ চিড়বিড় করবে, —যাক্‌গে, যখন রীতিমত অসভ্য হওয়া অসাধ্য তখন রীতিমত সভ্য হবার চেষ্টা করাই সঙ্গত—সভ্যতা এবং বর্ব্বরতার মধ্যে লড়াই বাধাবার দরকার নেই।