সাজাদপুর 
২৮শে জুন, 

১৮৯২। 

 আজকের চিঠির মধ্যে একজায়গায় অ—র গানের একটুখানি উল্লেখ আছে। পড়ে মনটা কেমন হঠাৎ হূহু করে উঠ্‌ল। জীবনের অনেকগুলি ছোট ছোট উপেক্ষিত মুখ, যারা সহরের গোলমালের মধ্যে কোন আমল পায় না, বিদেশে এলে তারা সময় বুঝে হৃদয়ের কাছে আপন আপন দরখাস্ত পাঠিয়ে দেয়। আমি গানবাজনা এত ভালবাসি এবং সহরেও এত কণ্ঠ এবং বাদ্য আছে কিন্তু দিনের পর দিন চলে যায় এক দিনও কর্ণপাত করিনে। যদিও সব সময়ে বুঝতে পারিনে কিন্তু মনের ভিতরটা কি তৃষিত হয়ে থাকে না? আজকের চিঠি পড়বামাত্রই অ—র মিষ্টিগান শোনবার জন্যে আমার এমনি ইচ্ছা করে উঠ্‌ল যে তখনি বুঝতে পারলুম প্রকৃতির অনেকগুলি ক্রন্দনের মধ্যে এও একটা ক্রন্দন ভিতরে ভিতরে চাপা ছিল। বড় বড় দুরাশার মোহে জীবনের ছোট ছোট আনন্দগুলিকে উপেক্ষা করে আমাদের জীবনকে কি উপবাসী করেই রাখি! যখন বিলেতে যাচ্ছিলুম আমার একটা কল্পনার সুখের ছবি এই ছিল যে কেউ একজন পিয়ানো বাজাচ্চে, খোলা দরজা জানলার ভিতর দিয়ে আলো এবং বাতাস আস্‌চে, খানিকটা সুদূর আকাশ ও গাছপালা দেখা যাচ্চে,—আমি একটা খোলা জানলার কাছে কৌচের উপর পড়ে বাইরে চোখ রেখে শুনচি। এটা যে একটা দুর্লভ দুরাশা তা বল্‌তে পারিনে কিন্তু তিনশো পঁয়ষট্টি দিনের মধ্যে ক’দিন অদৃষ্টে এ সুখ পাওয়া যায়! এই সমস্ত সুলভ আনন্দের অপরিতৃপ্তি জীবনের হিসাবে প্রতিদিন বেড়ে উঠ্‌চে —এর পরে এমন একটা দিন আসতেও পারে যখন মনে হবে যদি আবার জীবনটা সমস্তটা ফিরে পাই তাহলে আর কিছু অসাধ্য সাধন করতে চাইনে কেবল জীবনের এই প্রতিদিনের অযাচিত ছোট ছোট আনন্দগুলি প্রতিদিন উপভোগ করে নিই।