ছিন্নপত্র (১৯১২)/৬
মাভৈঃ মাভৈঃ। সপ্তাহের পর সপ্তাহ আসবে কিন্তু “সপ্তাহ”[১] আর বের হবে না। অতএব বন্ধুবান্ধবেরা সকলে নিশ্চিন্ত হৌন। ভেবে দেখুন কি করতে বসেছিলুম! সপ্তাহ বের করবার ছল করে জীবন থেকে সপ্তাহগুলো একেবারে লোপ কর্ত্তে বসেছিলুম। এখন যেমন আমি সপ্তাহে সাতটা দিন করে পাই তখন সপ্তাহে সাতটা দিন বাদ পড়ত। মাসের পর মাস আস্ত—কিন্তু সপ্তাহ নেই; দিনগুলো আমাকে লাঠি হাতে তাড়া করে বেড়াত। আমি কোথায় গিয়ে দাঁড়াব ভেবে পেতুম না। হরিশ্চন্দ্র যেমন বিশ্বামিত্রকে সমস্ত পৃথিলী দান করে বিব্রত হয়ে পড়েছিলেন অবশেষে স্বর্গ টা পর্য্যন্ত অদৃষ্টে জুট্লনা— আমিও তেম্নি আমার সমস্ত সময় পরের হাতে দিয়ে অবশেষে স্বর্গ পর্য্যন্ত খোয়াতুম— কারণ খবরের কাগজ লিখে এ পর্য্যন্ত কেউ অমরলোক প্রাপ্ত হয় নি। এই বসন্তকাল এসেছে—দক্ষিণের হাওয়া বয়েছে—এ সময়টা একটু আধটু গানবাজনার সময়—এ সময়টা যদি কেবলি রুস, চীন, পাঠানের অরাজকত্ব, মগের মুলুক, আবকারী ডিপার্টমেণ্ট, লুনের মাশুল, তারের খবর এবং পৃথিবীর যত সয়তানের প্রতি নজর রাখতে হয় তাহলে ত আর বাঁচিনে। পৃথিবীর গুপ্তচর হয়ে বেঁচে কোন সুখ নেই। জীবনে ত বসন্তকাল বেশী আসে না। যতদিন যৌবন ততদিন গোটাকতক বসন্ত হাতে পাওয়া যায়—সে কটা না খুইয়ে মনে করচি বুড়ো বয়সে একটা খবরের কাগজ খুল্ব—তখন হয়ত প্রাণ খোলা নেই, গান বন্ধ, সেই সময়টা ভাঙাগলায় পলিটিক্স প্রচার করা যাবে। এখনো অনেক কথা বলা বাকী আছে সে গুলো হয়ে যাক্ আগে। কি বলেন!—আপনার চিঠিতে রাণী শরৎসুন্দরীর বিবরণ পড়ে আমার বড় ভাল লাগল। আপনি তাঁর স্নেহ ভোগ করেচেন এ আপনার নিতান্ত সৌভাগ্যের কথা। তার জীবনসম্বন্ধে কিছু লিখলে ভাল হয়। আমাদের মহদ্দৃষ্টান্ত নানা কারণে আমাদের নজরে পড়ে না সে গুলো যাতে আমাদের দৃষ্টিপথে পড়ে সে চেষ্টা করা উচিত।
- ↑ সপ্তাহ নামক সাপ্তাহিক পত্র বাহির করার আয়োজন উপলক্ষ্যে লিখিত।