কটক
১০ই ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৩।

 এখানকার একটা উৎকট ইংরেজ—প্রকাণ্ড নাক, ধূর্ত্ত চোখ, দেড়হাত চিবুক, গোঁফদাড়ি কামানো, মোটা গলা, একটা পূর্ণপরিণত জনবৃষ। গবর্মেণ্ট আমাদের দেশের জুরিপ্রথার উপর হস্তক্ষেপ করতে চেয়েছিল বলে চারদিকে একটা আপত্তি উঠেছে। লোকটা জোর করে সেই বিষয়ে কথা তুলে ব—বাবুর সঙ্গে তর্ক করতে লাগ্‌ল। বল্লে এদেশের moral standard low এখানকার লোকের life-এর sacredness সম্বন্ধে যথেষ্ট বিশ্বাস নেই, এরা জুরি হবার যোগ্য নয়। একজন বাঙালীর নিমন্ত্রণে এসে বাঙালীর মধ্যে বসে যারা এরকম করে বল্‌তে কুণ্ঠিত হয় না, তারা আমাদের কি চক্ষে দেখে! খাবার টেবিল থেকে যখন ড্রয়িংরুমের এক কোণে এসে বস্‌লুম আমার চোখে সমস্ত ছায়ার মত ঠেকছিল। আমি যেন আমার চোখের সাম্‌নে সমস্ত বৃহৎ ভারতবর্ষ বিস্তৃত দেখ্‌তে পাচ্ছিলুম—আমাদের এই গৌরবহীন বিষণ্ণ জন্মভূমির ঠিক শিয়রের কাছে আমি যেন বসেছিলুম,—এমন একটা বিপুল বিষাদ আমার সমস্ত হৃদয়কে আচ্ছন্ন করেছিল সে আর কি বল্‌ব! অথচ চোখের সাম্‌নে ঈভনিং ড্রেসপরা মেমসাহেব, এবং কানের কাছে ইংরেজি হাস্যালাপের গুঞ্জনধ্বনি— সবসুদ্ধ এম্‌নি অসঙ্গত। আমাদের চিরকালের ভারতবর্ষ আমার কাছে কতখানি সত্য—আর এই ডিনার টেবিলের বিলিতি মিষ্টহাসি, ইংরিজি শিষ্টালাপ আমাদের পক্ষে কত ফাঁকা, কত ফাঁকি!