বালিয়া, মঙ্গলবার;
ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৩।

 আমার কিন্তু আর ভ্রমণ করতে ইচ্ছে করচে না। ভারি ইচ্ছে করচে একটি কোণের মধ্যে আড্ডা করে একটু নিরিবিলি হয়ে বসি। ভারতবর্ষের দুটি অংশ আছে, এক অংশ গৃহস্থ, আর এক অংশ সন্ন্যাসী, কেউ বা ঘরের কোণে থেকে নড়ে না, কেউ বা একেবারে গৃহহীন। আমার মধ্যে ভারতবর্ষের সেই দুই ভাগই আছে। ঘরের কোণও আমাকে টানে, ঘরের বাহিরও আমাকে আহ্বান করে। খুব ভ্রমণ করে দেখে বেড়াব ইচ্ছে করে, আবার উদ্ভ্রান্ত শ্রান্ত মন একটি নীড়ের জন্যে লালায়িত হয়ে ওঠে। পাখীর মত ভাব আর কি! থাকবার জন্যে যেমন ছোট্ট নীড়টি, ওড়বার জন্যে তেমনি মস্ত আকাশ। আমি যে কোণটি ভালবাসি সে কেবল মনকে শান্ত করবার জন্যে। আমার মনটা ভিতরে ভিতরে এমনি অশ্রান্তভাবে কাজ করতে চায়, লোকজনের ভিড়ের মধ্যে তার কর্ম্মোদ্যম এমনি পদে পদে প্রতিহত হতে থাকে যে সে অস্থির হয়ে ওঠে, খাঁচার ভিতর থেকে আমাকে কেবলি যেন আঘাত করে। একটু নিরালা পেলে সে বেশ সাধ মিটিয়ে ভাবতে পারে, চারিদিকে চেয়ে দেখতে পারে, ভাবগুলিকে মনের মত করে প্রকাশ করতে পারে। দিবারাত্রি সে অখণ্ড অবসর চায়—সৃষ্টিকর্ত্তা আপনার সৃষ্টির মধ্যে যেমন একাকী সে আপনার ভাবরাজ্যের মধ্যখানে তেমনি একলা বিরাজ করতে চায়।