কলিকাতা,
১৬ই এপ্রিল, ১৮৯৩।

 ভ্রমণের গোলমালের মধ্যে হোটেলে বসে এটা পড়ে কিরকম লাগ্‌বে সন্দেহ আছে। কোথায় সেই পুরীর সমুদ্র আর কোথায় আগ্রার হোটেল! এই পৃথিবীর সঙ্গে সমুদ্রের সঙ্গে আমাদের যে একটা বহুকালের গভীর আত্মীয়তা আছে, নির্জ্জনে প্রকৃতির সঙ্গে মুখোমুখী করে অন্তরের মধ্যে অনুভব না করলে সে কি কিছুতেই বোঝা যায়! পৃথিবীতে যখন মাটি ছিল না সমুদ্র একেবারে একলা ছিল, আমার আজকেকার এই চঞ্চল হৃদয় তখনকার সেই জনশূন্য জলরাশির মধ্যে অব্যক্তভাবে তরঙ্গিত হতে থাক্‌ত; সমুদ্রের দিকে চেয়ে তার একতান কলধ্বনি শুন্‌লে তা যেন বোঝা যায়। আমার অন্তরসমুদ্রও আজ একলা বসে বসে সেইরকম তরঙ্গিত হচ্চে, তার ভিতরে ভিতরে কি একটা যেন সৃজিত হয়ে উঠ্‌ছে। কত অনির্দিষ্ট আশা, অকারণ আশঙ্কা, কতরকমের প্রলয়, কত স্বর্গনরক, কত বিশ্বাস সন্দেহ, কত লোকাতীত প্রত্যক্ষাতীত প্রমাণাতীত অনুভব এবং অনুমান, সৌন্দর্য্যের অপার রহস্য, প্রেমের অতল অতৃপ্তি—মানবমনের জড়িত জটিল সহস্র রকমের অপূর্ব্ব অপরিমেয় ব্যাপার! বৃহৎ সমুদ্রের তীরে কিম্বা মুক্ত আকাশের নীচে একলা না বস্‌লে সেই আপনার অন্তরের গোপন মহারহস্য ঠিক অনুভব করা যায় না। কিন্তু তা নিয়ে আমার মাথা খুঁড়ে মরবার দরকার নেই— আমার যা মনে উদয় হয়েছে আমি তাই বলে খালাস্—তার পরে সমুদ্র সমভাবে তরঙ্গিত হতে থাকুক্ আর মানুষ হাঁস্‌ফাঁস্ করে ঘুরে ঘুরে বেড়াক্।