ছিন্নপত্র (১৯১২)/৭৬
কটক,
মার্চ্চ, ১৮৯৩।
এক একজন লোক আছে যারা কোন কিছু না করলেও যেন আশাতীত ফল দান করে—সু—সেই দলের লোক। ও যে খুব পাশ করবে, প্রাইজ্ পাবে, লিখ্বে, বড় কাজ কিম্বা ভাল চাক্রি করবে তা যেন তেমন আবশ্যক মনে হয় না—মনে হয় যেন কিছু না করলেও ওর মধ্যে একটা চরিতার্থতা আছে। অধিকাংশ লোককেই অকর্ম্মণ্য হয়ে থাকা শোভা পায় না, তাতে তাদের অপদার্থতা পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। কিন্তু সু— কিছুই না করলেও ওকে কেউ অযোগ্য বলে ঘৃণা করতে পারবেনা। কাজকর্ম্মের ব্যস্ততা মানুষের পক্ষে একটা আচ্ছাদনের মত, সমস্ত কমন্প্লেস্ লোকের সেটা ভারি আবশ্যক—তাতে তাদের দৈন্য তাদের শীর্ণতা ঢাকা পড়ে—কিন্তু যারা স্বভাবতই পরিপূর্ণ প্রকৃতির লোক, তারা সমস্ত কর্ম্মাবরণমুক্ত হলেও একটি শোভা এবং সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারে। সু—র মতন অমন ষোলআনা শৈথিল্য আর কোন ছেলের দেখ্লে নিশ্চয় অসহ্য বোধ হত—কিন্তু সু—র কুঁড়েমিতে একটি মাধুর্য্য আছে। সে আমি ওকে ভালবাসি বলে নয়—তার প্রধান কারণ হচ্চে চুপচাপ বসে থেকেও ওর মনটি বেশ পরিণত হয়ে উঠ্চে এবং ওর আত্মীয় স্বজনের প্রতি ওর কিছুমাত্র ঔদাসীন্য নেই। যে কুঁড়েমিতে মূঢ়তা এবং অন্যের প্রতি অবহেলা ক্রমাগত স্ফীত হয়ে গোলগাল তেলচুক্চুকে হয়ে উঠ্তে থাকে সেইটেই যথার্থ ঘৃণ্য। সু—একটি সহৃদয় এবং সুবুদ্ধি আলস্যের দ্বারা যেন মধুর-রস-সিক্ত হয়ে আছে। যে গাছে সুগন্ধ ফুল ফোটে সে গাছে আহার্য্য ফল না ধরলেও চলে। সু—কে যে সকলে ভালবাসে সে ওর কোন কাজের দরুণ, ক্ষমতার দরুণ, চেষ্টার দরুণ নয়, ওর প্রকৃতির অন্তর্গত একটি সামঞ্জস্য ও সৌন্দর্য্যের দরুণ।