কটক,
মার্চ, ১৮৯৩।

 তারপরে সাহেবের গান শুনলুম, সাহেবকে গান শোনালুম, তালি দিলুম এবং তালি পেলুম। এই যে বাহবাটুকু পাওয়া যায় একি যথার্থ হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করে? একি কতকটা কৌতূহলপরিতৃপ্তি নয়? সত্যি কি আমার যা ভাল লাগে ওদের তাই ভাল লাগে? এবং ওদের যা ভাল লাগে না তাই বাস্তবিক ভাল নয়? তাই যদি না হয় তবে ঐ করতলের তালিতে আমার এতই কি সুখ হবে? ইংরেজের তালিকে যদি আমরা অতিরিক্ত মূল্য দিতে আরম্ভ করি তাহলে আমাদের দেশের অনেক ভালকে ত্যাগ করতে হয় এবং ওদের দেশের অনেক মন্দকে গ্রহণ করতে হয়। তাহলে পায়ের মোজাটি খুলে বেরতে আমাদের হয়ত লজ্জা হবে কিন্তু ওদের নাচের কাপড় পরতে লজ্জা হবে না। আমাদের দেশের শিষ্টাচার সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করতে কিছুই সঙ্কোচ হবেনা এবং ওদের দেশের কোন প্রচলিত অশিষ্টাচারও অম্লানমুখে গ্রহণ করতে পারব। আমাদের দেশের আচ্‌কানকে সম্পূর্ণ মনের মত ভাল দেখ্‌তে নয় বলে ত্যাগ করব কিন্তু ওদের দেশের টুপিকে বদ্‌দেখ্‌তে হলেও শিরোধার্য্য করব। আমরা জ্ঞাত এবং অজ্ঞাতসারে ঐ করতালির নির্দ্দেশমত আপনার জীবনকে গঠিত করতে থাকি এবং তাকে অত্যন্ত ক্ষুদ্র করে ফেলি। আমি নিজেকে সম্বোধন করে বলি—“হে মৃৎপাত্র, ঐ কাংস্যপাত্রের কাছ থেকে দূরে থেকো;—ও যদি রাগ করে’ তোমাকে আঘাত করে তাতেও তুমি চূর্ণ হয়ে যাবে, আর ও যদি সোহাগ করে’তোমার পিঠে চাপড় মারে তাতেও তুমি ফুটো হয়ে অতলে মগ্ন হয়ে যাবে—অতএব বৃদ্ধ ঈসপের উপদেশ শোন, তফাৎ থাকাই সার কথা। উনি থাকুন বড় ঘরে, আর আমার সামান্য ঘরে সামান্য পাত্রের হয়ত ছোটখাট কাজ আছে—কিন্তু সে যদি আপনাকে ভেঙে ফেলে তবে তার বড় ঘরও নেই ছোট ঘরও নেই, তবে সে মাটির সমান হয়ে যাবে। তখন হয়ত আমাদের বড়ঘর— বড়ঘরওয়ালা ব্যক্তিটি ঐ খণ্ড জিনিষকে তাঁর ড্রয়িংরুমের ক্যাবিনেটের এক পার্শ্বে সাজিয়ে রাখ্‌তে পারেন—সে কিন্তু ক্যুরিয়সিটির স্বরূপে—তার চেয়ে ক্ষুদ্র গ্রামের কুলবধুর কক্ষে বিরাজ করেও গৌরব আছে।”