শিলাইদহ,

১০ই মে, ১৮৯৩।

 ইতিমধ্যে দেখ্‌চি খুব ফুলো ফুলো বড় বড় কতকগুলো মেঘ চতুর্দ্দিক থেকে জমে এসেছে—আমার এই চারিদিকের দৃশ্যপট থেকে কাঁচা সোনালী রোদ্দুরটুকু যেন মোটা মোটা ব্লটিংপ্যাড্‌ দিয়ে একেবারে চুপ্‌সে তুলে নিয়েচে। আবার যদি বৃষ্টি আরম্ভ হয় তাহলে ধিক্‌ ইন্দ্রদেবকে! মেঘগুলোর তেমন ফাঁকা দরিদ্র চেহারা দেখ্‌চিনে, বাবুদের মত দিব্যি সজলশ্যামল টেবোটোবো নধর নন্দন ভাব। এখনি বৃষ্টি আরম্ভ হল বলে—হাওয়াটাও সেইরকম কাঁদো কাঁদো ভিজে ভিজে ঠেক্‌চে। এখানে এই মেঘরৌদ্রের যাওয়াআসা ব্যাপারটা যে কতটা গুরুতর, আকাশের দিকে যে কত লোক হাঁ করে তাকিয়ে আছে, সিমলার সেই অভ্রভেদী পর্ব্বতশৃঙ্গে বসে তা ঠিকটি কল্পনা করা শক্ত হবে। আমার এই দরিদ্র চাষীপ্রজাগুলোকে দেখ্‌লে আমার ভারি মায়া করে, এরা যেন বিধাতার শিশুসন্তানের মত নিরুপায়। তিনি এদের মুখে নিজের হাতে কিছু তুলে না দিলে এদের আর গতি নেই। পৃথিবীর স্তন যখন শুকিয়ে যায়, তখন এরা কেবল কাঁদতে জানে—কোনমতে একটুখানি ক্ষুধা ভাঙলেই আবার তখনি সমস্ত ভুলে যায়। সোশিয়ালিষ্ট্‌রা যে সমস্ত পৃথিবীময় ধন বিভাগ করে দেয় সেটা সম্ভব কি অসম্ভব ঠিক জানিনে—ঘদি একেবারেই অসম্ভব হয় তাহলে বিধির বিধান বড় নিষ্ঠুর, মানুষ ভারি হতভাগ্য! কেননা পৃথিবীতে যদি দুঃখ থাকে ত থাক্‌, কিন্তু তার মধ্যে এতটুকু একটু ছিদ্র একটু সম্ভাবনা রেখে দেওয়া উচিত যাতে সেই দুঃখমোচনের জন্যে মানুষের উন্নত অংশ অবিশ্রাম চেষ্টা করতে পারে, একটা আশা পোষণ করতে পারে! যারা বলে, কোনোকালে পৃথিবীর সকল মানুষকে জীবনধারণের কতকগুলি মূল আবশ্যক জিনিষও বণ্টন করে দেওয়া নিতান্ত অসম্ভব অমূলক কল্পনামাত্র, কখনই সকল মানুষ খেতে পরতে পাবেনা, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ চিরকালই অর্দ্ধাশনে কাটাবেই, এর কোন পথ নেই, তারা ভারি কঠিন কথা বলে। কিন্তু এ সমস্ত সামাজিক