কলকাতা,
২১শে জুন, ১৮৯৩।

 এবারকার ডায়ারিটাতে ঠিক প্রকৃতির স্তব নয়—মননামক একটা সৃষ্টিছাড়া চঞ্চল পদার্থ কোনো গতিকে আমাদের শরীরের মধ্যে প্রবেশ করাতে যে কিরকম একটা উৎপাত হয়েচে তৎসম্বন্ধে আলোচনা করা গেছে। আসলে, আমরা খাব পরব্‌ বেঁচে থাকব এইরকম কথা ছিল—আমরা যে বিশ্বের আদিকারণ অনুসন্ধান করি, ইচ্ছাপূর্ব্বক খুব শক্ত একটা ভাব ব্যক্ত করবার প্রয়াস করি, আবার তার মধ্যে পদে পদে মিল থাকা দরকার মনে করি; আপাদমস্তক ঋণে নিমগ্ন হয়ে ও মাসে মাসে ঘরের কড়ি খরচ করে সাধনা বের করি, এর কি আবশ্যকতা ছিল! ওদিকে নারায়ণ সিং দেখ ঘি দিয়ে আটা দিয়ে বেশ মোটা মোটা রুটি বানিয়ে তার সঙ্গে দধি সংযোগ করে আনন্দমনে ভোজনপূর্ব্বক দু এক ছিলিম তামাক টেনে দুপুরবেলাটা কেমন স্বচ্ছন্দে নিদ্রা দিচ্চে এবং সকালে বিকালে লোকেনের সামান্য দুচারটে কাজ করে’ রাত্রে অকাতরে বিশ্রাম লাভ করচে। জীবনটা যে ব্যর্থ হল বিফল হল এমন কখন তার স্বপ্নেও মনে হয় না, পৃথিবীর যে যথেষ্ট দ্রুতবেগে উন্নতি হচ্চে না সেজন্যে সে নিজেকে কখনো দায়িক করেনা। জীবনের সফলতা কথাটার কোনো মানে নেই—প্রকৃতির একমাত্র আদেশ হচ্চে বেঁচে থাক। নারায়ণ সিং সেই আদেশটির প্রতি লক্ষ্য রেখেই নিশ্চিন্ত আছে। আর যে হতভাগার বক্ষের মধ্যে মন নামক একটা প্রাণী গর্ত্ত খুঁড়ে বাসা করেছে, তার আর বিশ্রাম নেই, তার পক্ষে কিছুই যথেষ্ট নয়, তার চতুর্দ্দিকবর্ত্তী অবস্থার সঙ্গে সমস্ত সামঞ্জস্য নষ্ট হয়ে গেছে; সে যখন জলে থাকে তখন স্থলের জন্যে লালায়িত হয়, যখন স্থলে থাকে তখন জলে সাঁতার দেবার জন্যে তার “অসীম আকাঙ্ক্ষার” উদ্রেক হয়। এই দুরন্ত অসন্তুষ্ট মনটাকে প্রকৃতির অগাধ শান্তির মধ্যে বিসর্জ্জন করে একটুখানি স্থির হয়ে বসতে পারলে বাঁচা যায়, কথাটা হচ্চে এই।