ছিন্নমুকুল/দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

পথহারা

 আট দশ বৎসর অতীত হইয়া গিয়াছে। আজ শরৎকালের এই প্রশান্ত অপরাহ্ন সময়ে পূর্ণযৌবনা রমণীর মত ভাগীরথী হেলিতে দুলিতে কানপুরের ক্রোড়দেশ দিয়া আপনার আবেশেই বহিয়া যাইতেছে। পশ্চিম সূর্য্যের সহস্র কিরণে আকাশের সহস্র ছিন্নবিছিন্ন ভগ্নবিভগ্ন জলদখণ্ড সুরঞ্জিত হইয়া গঙ্গার বক্ষে প্রতিফলিত হইয়াছে।

 সেই শোভাময়ী ভাগীরথীর অপর পারে একটি নিবিড় বনশ্রেণী দীর্ঘভাবে দূর পর্য্যন্ত ব্যাপিয়া রহিয়াছে। বনশ্রেণী কোথাও সঙ্কীর্ণ, কোথাও বিস্তৃত, কোথাও নিবিড়। সেখানে কোথাও অশ্বত্থ বটের বিশাল শাখায় বসিয়া নানা বর্ণের পক্ষিগণ ঘোর কলরব করিতেছে, কোথাও ঝোপ ঝাপের মধ্য দিয়া কখনো দু একটি বন্য শৃগাল, বন্য বরাহ ছুটিয়া যাইতেছে, কখনো বা দুই একটী মৃগদম্পতি অস্পষ্টভাবে দেখা দিয়া জঙ্গলে মিশাইয়া যাইতেছে। অনেক দূর পর্য্যন্ত মনুষ্যের বসতির চিহ্ন মাত্র নাই; যে দিকে চাও কেবলি বনশ্রেণী। সহসা আজ অপরাহ্নে এই নিভৃত নিস্তব্ধ অরণ্য বন্দুকের গর্জ্জনে প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিল। দুই একটি বন্য পশু যাহাদিগকে ইতিপূর্ব্বে বিচরণ করিতে দেখা গিয়াছিল, তাহারা সভয়ে নিবিড় বৃক্ষশ্রেণীর মধ্যে লুকাইল, ভীতস্বরে কোলাহল করিয়া পক্ষিগণ নিকটস্থ ঝোপ-ঝাপ হইতে উড়িয়া স্থানান্তরে গিয়া বসিল। দেখিতে দেখিতে সম্মুখের অশ্বত্থ-বৃক্ষস্থিত দুইটি সুন্দর পক্ষিযুগলের মধ্যে একটি সেই বন্দুকের গুলিবিদ্ধ হইয়া বৃক্ষচ্যুত পল্লবের ন্যায় ঘুরিতে ঘুরিতে ভূমে লুটাইয়া পড়িল; আর একটি প্রাণভয়ে উড়িয়া দূরস্থিত অন্য বৃক্ষের উপর গিয়া বসিল। শীকারী যুবক সহর্ষে ভূপতিত পক্ষীটির প্রতি বারেক দৃষ্টি নিবদ্ধ করিয়া সঙ্গীকে বলিলেন “পাখীটি থলিতে রাখ আমি অন্যটির উদ্দেশে যাই।” বলিয়া তিনি তাঁর বেগে ছুটিলেন। যামিনী বন্ধুর কথামত মৃত পক্ষীটিকে স্কন্ধের থলিতে রাখিয়া বলিলেন—“কিন্তু প্রমোদ মনে রেখো—পাখীটি আমি মেরেছি।

 আট বৎসর পূর্ধ্বে পাবেল পাহাড়ে আমরা যে দুরন্ত বালক প্রমোদকে খেলিতে দেখিয়া আসিয়াছিলাম, সেই বালকই এখনকার এই পরিণতবয়স্ক যু।—পুরুষ। পাল্যকালের সৌন্দর্য্য তাহার মুর্তিতে এখন পরিস্ফটভাবে প্রকাশ পাইতেছে। সে সৌন্দর্য্যে তখন যাহা কিছুর অভাব ছিল, এখন যৌবনে তাহা পূর্ণতা লাভ করিয়াছে। কিন্তু এখনও প্রমোদের মনোবৃত্তি কিছুমাত্র সংযত হয় নাই, বাল্যকালের দুরন্ত চঞ্চলচেতা প্রমোদ হইতে এখনকার যুবা প্রমোদ স্বভাবে অতি অল্পই পরিবর্তিত। বাল্যকালের মত যদিও আর প্রমোদ কোদাল পাড়ে না, ফুল তুলিলে ভগিনীকে মারে না, কিন্তু তথাপি এখনও প্রমোদ সেই প্রমোদ। সেইরূপ ক্রীড়ার পরিবর্ত্তে এখন সে শাঁকারপ্রিয়, নানাবিধ ব্যায়ামের অনুরাগী এবং কলেজে ঝগড়া করিতে বড় পটু। তাহার দৌরাত্ম্যে কলেজের কোন ছাত্রের দুষ্টামি করিয়া পার পাইবার যো নাই। দুষ্ট ছাত্রের সে যম। এক কথায়, তখনকার সেই উদারচঞ্চল বালক, এখনকার উদারদুরন্ত যুবা। প্রনোদ এখন কালকাতায় থাকিয়া কলেজে পড়েন, ছুটীতে কখনও কথনও এলাহাবাদে বাড়ী আসেন মাত্র। ‘এবার আশ্বিন মাসে পূজার ছুটীতে প্রমোদ বাড়ী না গিয়। একটি বন্ধুর সহিত প্রথমেই কানপুরে বেড়াইতে আসিয়াছেন।

 আমরা পূর্ব্বেই বলিয়াছি প্রমোদ বড় শীকারপ্রিয়। কানপুরে আসিয়া গঙ্গার এ পারে শীকারের উপযুক্ত স্থান দেখিয়। শীকারের আশায় বন্ধুর সহিত এই জঙ্গলে আসিয়াছেন। কিন্তু বন্য পশু বধ করা তাঁহাদের অদৃষ্টে খটিল না, বন্দুকের শব্দে কেহই আর বাসস্থান হইতে নির্গত হইল না, বরং দুই একটি বিচরণশীল পশুও সে শব্দে বাসস্থানে লুকাইল, সুতরাং নিরীহ পাখীগণকে মারিয়াই তাঁহাদের শীকার সাধ মিটাইতে হইল। যে বৃক্ষে সেই পলাতক পক্ষীটি আশ্রয় লইয়াছিল তাহার তলে আসিয়া প্রমোদ তাহাকে আর দেখিতে পাইলেন না। তাহার পরিবর্ত্তে উভয়ে মিলিয়া একের পর একে বহু বিহঙ্গ বধ করিলেন বটে কিন্তু তথাপি সেই বিশেষ পক্ষাটি মারিতে না পারার প্রমোদের নৈরাশ্য ঘুচিল না। শীকার শেষে তাঁহারা বৃক্ষতলে বসিয়াছেন—সহসা পত্রান্তরালে প্রমোদ তাহাকে দেখিতে পাইলেন, তৎক্ষণাৎ উৎফুল্ল হৃদয়ে উঠিয়া অতি সন্তর্পণে তাহার প্রতি লক্ষ্য করিয়া বন্দুক ছুঁড়িলেন কিন্তু এবারও লক্ষ্য বিফল হইল। পাখীটি অন্যবৃক্ষে উড়িয়া গেল। প্রমোদের ক্ষোভের সীমা রহিল না। তিনি মনের আবেগে, সেই পলাতক পক্ষীর অনুসরণ করিয়া, বৃক্ষতল হইতে বৃক্ষতলে ছুটিতে লাগিলেন। কিন্তু সম্ভবতঃ বহু জন্মের পুণ্যফলে বিহঙ্গপ্রবর প্রতিবারেই তাঁহার লক্ষ্য বার্থ করিতে লাগিল। ক্রমে সন্ধ্যা উপস্থিত; কিন্তু প্রমোদ শীকারের উৎসাহে এত উন্মত্ত যে, সেদিকে ভ্রূক্ষেপই নাই। যামিনীনাথ প্রমোদের এইরূপ নিরর্থক আগ্রহ দেখিয়া তাঁহাকে নিরস্ত করিবার জন্য দুই তিন বার বিফল চেষ্টা করিলেন। শ্রমক্লান্ত, ঘর্ম্মাক্ত, তথাপি প্রমোদ উৎসাহের সহিত সেই পক্ষীর উদ্দেশে অন্য একটি দূববর্ত্তী বৃক্ষের দিকে গমন করিলেন; যামিনীনাথকেও অগত্যা বন্ধুর অনুসরণ করিতে হইল। তাঁহারা বখন বৃক্ষতলে আসিয়া দাঁড়াইলেন তখন অন্ধকার হইয়া পড়িয়াছে, সুতরাং পাখীটিকে তখন আর দেখিতে পাইলেন না। হতাশ মনে বিশ্রাম করিবার জন্য তাঁহারা সেই বৃক্ষতলে বসিলেন। দেখিতে দেখিতে অগণ্য নক্ষত্র আকাশে ফুটিয়া উঠিল, ঝোপ-ঝাপে খদ্যোতপুঞ্জ জ্বলিতে আরম্ভ করিল, তাঁহারা তখন বাড়ী যাইবার মানসে বৃক্ষতল হইতে উঠিলেন। কানপুরে আসিয়া তাঁহারা এই অল্পদিনের জন্য যে বাড়ীতে ছিলেন, এই বনের সন্নিহিত নদীর পরপারে সেই বাড়ী। তাঁহারা উঠিয়া, অন্ধকারে পথ চিনিয়া চিনিয়া চলিতে লাগিলেন, কিন্তু কিছুক্ষণের পর বুঝিলেন, সেই অপরিচিত নূতন স্থান হইতে পথ চিনিয়া বাড়ী যাওয়া তাঁহাদের পক্ষে সহজ নহে। দেখিলেন তাঁহারা যত চলিতেছেন, কিছুতেই জঙ্গল ফুবায় না, যে পথে যান, আবার ঘুরিয়া সেই জঙ্গলেই আসিয়া পড়েন। এইরূপে অনেকক্ষণ ঘুরিয়া শ্রান্ত ক্লান্ত হইয়া যামিনী প্রমোদের উপর ক্রোধ প্রকাশ করিতে লাগিলেন। নিজের দোষ বুঝিয়া লজ্জিত ও অনুতপ্তভাবে প্রমোদ বলিলেন—“তাই ত এমন বিপদ ঘটবে তাকি জানি। এখন কোনরকমে যে গঙ্গার ধারটা পর্য্যন্ত পৌঁছতে পারলে বাঁচি।”

 যামিনীনাথ বলিলেন, “আমার তো আর চলবার শক্তি নেই, আজ দেখছি এইখানেই পড়ে থাকতে হবে।” কথা কহিতে কহিতে সেই অরণ্যবাসী পশুর রবে তাঁহাদের কর্ণকুহর ধ্বনিত হইতে লাগিল। অন্ধকারময় ঝোপঝাপ ভেদ করিয়া, দুই একটি বন্য জীব তাঁহাদের নিকট দিয়া দ্রুতগতিতে চলিয়া যাইতে লাগিল। তদ্দৃষ্টে প্রমোদের শীকার-লালসা আবার জ্বলিয়া উঠিল, প্রমোদ সেই অন্ধকারেই লক্ষ্য করিয়া বন্দুক ছুঁড়িলেন। শান্ত বনস্থল সহসা আবার ঝটিকাকম্পনে যেন আলোড়িত হইয়া উঠিল। বন্য পশুগণ ব্যস্ত ত্রস্ত হইয়া স্ব স্ব বাসস্থানে পলায়ন করিল, বৃক্ষস্থিত নিদ্রিত পক্ষিগণ সে শব্দে চমকিয়া একবার অস্পষ্ট স্বরে ডাকিয়া উঠিল, তাহাদের সভয় চমকে বৃক্ষপত্রগণ একবার কাঁপিয়া উঠিল, কিন্তু পরক্ষণেই সমস্ত থামিয়া গেল, অরণ্যটি পূর্ব্ববৎ নিস্তব্ধ হইয়া পড়িল। এদিকে তাঁহারা পরিশ্রমে কাতর, ক্ষুধা তৃষ্ণায় আকুল ও প্রতিপদে লতাগুল্মজালে বাধা প্রাপ্ত হইতে হইতে সেই অন্ধকার জনশূন্য অরণ্যে অসহায় পথহারা হইয়া চলিতে লাগিলেন। ক্রমে নিতান্ত অবসন্ন, ক্লান্ত ও হতাশ হইয়া, অগত্যা একটি বৃক্ষতলে আশ্রয় গ্রহণ করিলেন। সহসা তাঁহাদের কর্ণকুহর মুগ্ধ করিয়া নীরব নৈশ গগনে সঙ্গীতধ্বনি উথলিয়া উঠিল। বনমধ্যে মনুষ্যের কণ্ঠস্বর শুনিয়া তাঁহাদের দেহে যেন প্রাণ সঞ্চারিত হইল। সঙ্গীত ধ্বনি ক্রমে বাতাসে তাঁহাদের দিকেই আসিতে লাগিল। গানটী শুনিতে তাঁহারা এক মনে কান পাতিলেন। প্রথমে কেবল সুরমাত্র, পরে অস্পষ্ট, পরিশেষে স্পষ্ট কথাগুলি তাঁহাদেব কর্ণে প্রবেশ করিল, তাঁহারা শুনিলেন—

[১]সুশীতল মহীরুহ-সুশীতল ছায়
তেয়াগি অনলকুণ্ডে ঝাঁপিতে যে চায়,
রমণীর বেলা-ভূমি করি পরিহার,
উন্মত্ত সাগর মাঝে যেতে সাধ যার,
দুর্গ ছাড়ি সহিবে যে সমর-পীড়ন,
যাক্ সে এ বন ছাড়ি যথা তার মন।
এমন সুখদ কানন-বাস,
পশে না হেথায় শোকের শ্বাস,
হেথায় শান্তি বিরাজমান,
কলহের হেথা নাহিক স্থান,
এ ছেড়ে কি দেবধামে কারো মন ধায়।

 আকাশে পূর্ণচন্দ্র ভাসিয়া উঠিল, অন্ধকারের বিকট মুর্ত্তি ধীরে ধীরে উজ্জ্বলতার মধ্যে আত্মলোপ করিয়া দিল; বনানী সেই মধুর জ্যোৎস্নায় একখানি মধুর সুন্দর ছবির মত প্রতিভাত হইতে লাগিল। সহসা এ কি দৃশ্য! জ্যোৎস্না মূর্ত্তিমতী হইয়া কি বনানীর অস্ফূট অপূর্ণ সৌন্দর্য্য সহসা পরিস্ফুট সম্পূর্ণ করিয়া দিলেন? সুমধুর সঙ্গীততানে রজনীর নিস্তব্ধতা অরণ্যের ভীষণতা দূর করিয়া কোন্ উপ্যাসের কোন্ পরী রাণী এ— এসময় এই কাননে আসিয়া উদয় হইলেন?

 রমণী গাহিতে গাহিতে বন-মধ্যে ভ্রমণ করিতে লাগিল, যুবকেরা বিস্মিত নেত্রে তাহাকে দেখিতে লাগিলেন। বালিকার পৃষ্ঠে লম্বিত বেণী, অঙ্গে আকণ্ঠলগ্ন ক্ষুদ্র অঙ্গরক্ষা, পরিধানে জটিল গ্রন্থিযুক্ত কুঞ্চনবহুল গৈরিকবসন; বেশভূষায় বালা হিন্দুস্থানী ললনা; কিন্তু তৎকণ্ঠনির্গত গীতপদাবলীর উচ্চারণবিশুদ্ধতায় সে বঙ্গবালারূপে স্বপ্রকাশ।

 অল্পক্ষণের মধ্যেই তাঁহাদের যেন মোহ ভাঙ্গিল, তাঁহারা উঠিয়া দাঁড়াইলেন, রমণীকে কি জিজ্ঞাসা করিবার অভিপ্রায়ে তাহার নিকটে গমন করিলেন। রমণী বনমধ্যে রজনীকালে অপরিচিত বন্দুকধারী মনুষ্য মূর্ত্তি দেখিয়া সহসা সভয়ে সবিস্ময়ে গান বন্ধ করিল। যামিনীনাথ সবিনয়ে বলিলেন—

 “আমরা শীকার করতে এসে পথ হারিয়েছি—আপনি বোধহয় এখানকার অধিবাসিনী, অনুগ্রহ করে পথ বলে দিতে পারেন?”

 বালা তখন আশ্বস্তচিত্তে উত্তর করিল—“পথ? আপনারা কে? কোথায় যাবেন?”

 প্রমোদ কোনও কথা কহিলেন না; সেই নিস্তব্ধ নিশীথে, জোৎস্নালোকিত অরণ্যে জ্যৎস্নামধুর রমণীমূর্ত্তি তাঁহাকে বিস্ময়াভিভূত করিয়াছিল। যামিনী বলিলেন—“আমরা কে তা চিনবেন্ না, অদৃষ্টফেরে এখানে শীকার করতে এসে পথ হারিয়েছি—এখন আপনার শরণাপন্ন—যদি এ গোলকধাঁধা থেকে নিষ্কৃতি দিতে পারেন তবেই আমরা নদীতীরে পৌঁছতে পারি”।

 রমণী বলিল—“নদীতীরে? তা পারি,—আমার সঙ্গে আসুন।”

 বালিকার অনুসরণে বন্ধু দুইজন অনতিবিলম্বে নদীকূলে আসিয়া পৌঁছিলেন। কিন্তু সেখানে একখানি খেয়ানৌকাও নাই—নদীও দুস্তরণীয়। সেতু কোথায়—তাহাও বালিকা বলিতে পারিলনা। দুস্তর বিপদে পড়িয়া প্রমোদের উপর যামিনীর অসংগত ক্রোধ জন্মিল, তীব্র স্বরে বলিলেন—

 “আর যদি তোমার সঙ্গে কোথাও যাই ত আমার নামই মিথ্যে! এমন প্রলয়ঙ্করী বুদ্ধি যদি স্ত্রীলোকেরও দেখে থাকি! এথন বাড়ী যাই কি করে বল দেখি?”

 প্রমোদ হাসিয়া বলিলেন,—“তা এত রাগ করছ কেন হে? নাহয় রাতটা এখানেই কাটান যাবে?”

 যামিনী আরও ক্রুদ্ধ স্বরে বলিলেন “রাতটা এখানে কাটান যাবে! তুমি কাটাও—পাখী শীকার করতে এসে বাঘভাল্লুকের শীকার হও ভালই—কিন্তু আমার সে ইচ্ছা মোটেই নেই—”

 বালিকা তাঁহাদের কথা শুনিয়া নিঃশব্দে হাসিতেছিল,—সহসা দয়ার্দ্র স্বরে বলিল—“নিকটেই নদীতীরে আমাদের মন্দির—অনেক পথিক যাত্রা সময়ে অসময়ে এখানে আশ্রয় গ্রহণ করেন,—আজ রাত্রের মত মন্দিরে বাস করবেন?”

 যামিনী বলিলেন —“এখন অন্য উপায় নেই অভাব পক্ষে সেই ভাল,—ক্ষিদেতে মরে যাচ্ছি—ফলটল কিছু পেলেও এ যাত্রা বেঁচে যাই।”

 প্রমোদ বলিলেন—“আপনার করুণায় আমাদের প্রাণদান দিলেন।”

 বালিকা একটু যেন সবিস্ময়ে বলিলেন—“এ মন্দির ত পথিককে আশ্রয় দেবার জন্যেই।

 যুবকেরা কৃতজ্ঞ হৃদয়ে যুবতীর অনুসরণ করিলেন।

 যুবতী তখন, কেন তাঁহারা এখানে আসিলেন, কি করিয়া পথ হারাইলেন, তাঁহাদের নাম কি, এই সকল জিজ্ঞাসা করিতে করিতে পথ দেখাইয়া চলিল।

  1. রাগিণী বাহার।