ছিন্নমুকুল/পঞ্চত্রিংশ পরিচ্ছেদ

পঞ্চত্রিংশ পরিচ্ছেদ

বেহাত

 ঘণ্টা কয়েক পরে একটা প্যাসেঞ্জার গাড়ী কলিকাতায় যাইবে, সেই গাড়ীতেই যাত্রা করিবেন ভাবিয়া হিরণকুমার ক্ষুণ্ন হতাশচিত্তে ষ্টেষণের বেঞ্চের উপর আসিয়া বসিলেন।

 তখন প্রয়াগ হইতে রাত্রিকালেই উর্দ্ধ নিম্ন উভয় পথগামী মেল যাত্রা করিত। কিছু পূর্ব্বে প্রয়াগের মেলগাড়ী কলিকাতায় গিয়াছে, কিছু পরে কলিকাতার মেলগাড়ী প্রয়াগে আসিয়া লাগিল। গাড়ী প্লাটফর্ম্মে লাগিতেই ষ্টেষণ জনতাকোলাহলে পূর্ণ হইয়া উঠিল, তৃতীয় ক্লাসের কামরা হইতে স-চীৎকারে দলে দলে পিপীলিকা শ্রেণীর মত লোক নামিতে লাগিল। প্রথম দ্বিতীয় ক্লাশ কইতেও অল্পস্বল্প যাত্রী নামিলেন। হিরণকুমার বিষণ্ণচিত্তে অন্য মনে তাহাদের দিকে চাহিয়া দেখিতে দেখিতে ভাবিতে লাগিলেন এখনো এক ঘণ্টাকাল তাঁহাকে ষ্টেষণে অপেক্ষা করিতে হইবে। কিন্তু কি আশ্চর্য্য সহসা যাত্রীদিগের মধ্যে কাহাকে দেখিয়া চমকিত হইলেন, এ যে যামিনীনাথ! যাহার নিকট যাইবার জন্য হিরণকুমার এত ব্যস্ত সে যে স্বয়ং তাহার নিকট আসিয়া হাজির!

 তাঁহার নবভৃত্য রামধন পোর্টম্যাণ্টোটা দক্ষিণ জানুর নীচে রাখিয়া দেয়ালে ঠেশান দিয়া নাক ডাকাইয়া নিদ্রা দিতেছিল। পায়ের নীচে হইতে তাড়াতাড়ি তোড়ঙ্গটা টানিয়া লওয়ায় সে ত্রন্তে উঠিয়া দাঁড়াইয়া জিজ্ঞাসা করিল “গাড়ী এসেছে?” তিনি তোড়ঙ্গটা খুলিতে খুলিতে বলিলেন “না, আজ আর কলকাতায় যেতে হবে না, তোমার বাবু এখানে এসেছেন, আমি তাঁর কাছে যাচ্ছি, তুমিও শীঘ্র এস।” বলিয়া পিস্তলটা তোড়ঙ্গ হইতে বাহির করিয়া পকেটে পুরিয়াই তিনি দ্রুতপদে চলিয়া গেলেন। খোলা তোড়ঙ্গটা বন্ধ করিয়া চাবিটা পকেটে রাখিয়া রামধন স্বগতঃ বলিল “বাবু এসেছে? তা যাচ্ছি, মোদ্দা আমি দূরে দূরে থাকব, বাবুকে আজ দেখা দিচ্ছিনে।”

 যামিনীনাথ তাঁহার দ্রব্য সামগ্রী কুলির জিম্মায় দিয়া, কুলিকে ভৃত্যের জিম্মায় সমর্পণ করিতেছেন এমন সময় হিরণকুমার আসিয়া বলিলেন “আপনার সঙ্গে একটা কথা আছে।” হিরণকে দেখিয়া যামিনীনাথ আশ্চর্য্য হইলেন। একটা কেমন অজ্ঞাত অনির্দ্দিষ্ট অমঙ্গল ভয়ে শঙ্কিত হইয়া বলিলেন “আমার সঙ্গে আপনার কথা! আর এক সময়ের জন্য রেখে দিলে হয় না, এই মাত্র শ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে এসে পৌঁছেছি।”

 হিরণকুমার তখন উত্তেজিত, অপ্রকৃতিস্থ; যেন যামিনীকে দোষী সাব্যস্ত করিতে পারিলেই তাঁহার ভাগ্যস্রোত এই মুহূর্ত্তে ফিরিবে। তিনি অধীরভাবে বলিলেন “বিশেষ জরুরী কথা, আপনি এসে পড়লেন নইলে আমিই আপনার কাছে কলকাতায় যাচ্ছিলুম।”

 যামিনী ভৃত্যকে বলিলেন “একটা ভাড়াটে গাড়ী ঠিক করে জিনিসপত্র ওঠা, আমি এখনি আসছি।” ভৃত্য কুলিকে লইয়া চলিয়া গেল। যামিনী হিরণকুমারের সহিত একটু তফাতে বিজন স্থলে আসিয়া বলিলেন “আপনি আমার কাছে কলকাতায় যাচ্ছিলেন, ব্যাপারখানা কি! এত সৌভাগ্য আমার কিসের জন্য বলুন দেখি?

 হিরণকুমার তাঁহার জোব্বার ভিতর হইতে পিস্তলটি বাহির করিয়া বলিলেন “এই জিনিষটিকে ধন্যবাদ দিন, এরই অনুগ্রহে। চিনতে পারেন কি পিস্তলটি কার?”

 যামিনী চমকিয়া উঠিলেন, যে পিস্তলটি হিরণকে মারিবার জন্য পাঠানকে দেন তাহা ফিরিয়া পান নাই মনে পড়িল, বিপদ আশঙ্কা করিলেন, কিন্তু প্রত্যুপন্নমতিত্ব বলে সপ্রতিভভাবে বলিলেন “এ কথা আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন কেন? আমি কি করে জানব?”

 হি আপনি যদি না জানেন তবে আমিই বলি। এ আপনারি পিস্তল— আমি আপনার চাকরের হাতে—

 যামিনী ক্রুদ্ধ স্বরে বলিলেন “আপনি কি পাগল না মাতাল কিম্বা কি কিছুই ত বুঝতে পারছিনে! প্রমোদ যদি আপনাকে মনঃক্ষুণ্ণ করে থাকেন তার শোধ আমার উপর তোলাটা নিতান্তই অভদ্রের কাজ।

 হিরণ এই কথায় বৃশ্চিকদষ্টের ন্যায় আহত হইয়া বলিলেন “যামিনীনাথ তোমার মত নরাধম সংসারে নেই!”

 যামিনী ক্রুদ্ধ স্বরে বলিলেন “মুখ সামলে কথা কবেন, আপনার হাতে পিস্তল, এখনি পুলিষ ডাকব।”

 “যে দিন প্রমোদকে খুন করতে পাঠান, সেদিন পুলিষের ভয় হয় নি? পুলিষ ডাকলে আমার ভয় সেই, আপনারি ভয়।” হিরণকুমার পিগুলের মুদ্রাঙ্কিত নাম পড়িয়া বলিলেন “যামিনীনাথ রায়।”

 যামিনীর মস্তকে যেন বজ্র পড়িল, তিনি মুহূর্ত্তকাল বাক্শক্তিহীন হইয়া পড়িলেন। এতক্ষণ তাঁহার বিশ্বাস ছিল, তাঁহার নামাঙ্কিত পিস্তল তিনি পাঠানকে দেন নাই, সেই জন্য এতক্ষণ বেশ সজোরে কথা কহিতেছিলেন। সহসা যখন ভ্রম সংশোধিত হইল, দেখিলেন মনের বাগ্রতা বশতঃ তাড়াতাড়িতে না দেখিয়া আপন নামাঙ্কিত পিত্তলই হস্তান্তর করিয়াছেন তখন মুহূর্ত্তকাল জ্ঞানশূন্য হইয়া পড়িলেন। আত্মরক্ষার আকুলতায় হিরণকুমারের হাত হইতে পিস্তলটা কাড়িবার অভিপ্রায়ে অজ্ঞাতভাবে হস্ত বাড়াইলেন, হিরণ তাঁহার মনোভাব বুঝিয়া ত্রস্তে সরিয়া দাঁড়াইলেন। মুহূর্ত্তের মধ্যে যামিনী আত্মস্থ হইয়া বুঝিলেন— পিস্তল কাড়িতে গেলেই যথার্থ দোষী বলিয়া প্রমাণিত হইবেন, অথচ কৃতকার্য্য হইবারও সম্ভাবনা নাই। তিনি হৃদয়ের ভাব লুকাইয়া সরোষে বলিলেন “এ কি? কি আশ্চর্য্য? চুরীর পিস্তল আপনি পেলেন কোথা?”

 তাহার অতিরিক্ত সাহস দেখিয়া হিরণ একটু হাসিয়া বলিলেন “চুরীর জিনিষ! সে প্রমাণে যা হয় হবে।”

 যা। কি প্রমাণ? আপনি যা বলেছেন তাইত প্রমাণ সাপেক্ষ। আপনার হাতে চোরা মাল আমিই এখনি আপনাকে চোর বলে ধরব।

 হি। প্রমাণসাপেক্ষ বটে! কিন্তু প্রমাণের অভাব নেই। আপনার আগেকার চাকর রামধন সর্দারকে মনে আছে ত? সে হাজির।

 হিরণ সেই ভৃত্যের জন্য একবার এদিকে ওদিকে চাহিয়া দেখিলেন— কিন্তু তাহাকে কাছাকাছি দেখিতে পাইলেন না। কোথা হইতে এ সমস্ত প্রকাশ হইয়াছে যামিনী তখন বুঝিলেন, বুঝিয়া সক্রোধে বলিলেন “তাকে চোর বলে তাড়িয়ে দিয়েছি— সে মিথ্যা করে কি না বলতে পারে? কিন্তু তার মিথ্যা অপবাদে আমার কিছুই হবে না — সে জন্য আমি কিছুমাত্র ভীত নই”

 হি। না তা ভীত হবেন কেন? শুধু এ খুনের কথা নয়—নীরজার হরণ বৃত্তান্তও প্রকাশ হয়েছে। আজ রাতেই আমি প্রমোদকে চিঠি লিখব। সেখানেও আর আপনার স্থান নেই জানবেন। প্রমোদ যদি এখনো এ সব জেনে না থাকেন ত আজই জানবেন।

 যামিনী বুঝিলেন—সে কথা প্রমোদ তবে এখনও শুনেন নাই। একটুখানি যেন তাহাতে আশ্বস্ত বোধ করিয়া কহিলেন, “যদি নিতান্তই নিজের মন্দ করতে ইচ্ছা হয়ে থাকে ত আমার নামে মিথ্যা দোষ আনবেন, যা করতে ইচ্ছা হয় করবেন। এখন আমি চল্লেম, এ রকম অপমান আর দাঁড়িয়ে সহ্য করতে পারিনে।” বলিয়া ব্যগ্র চিত্তে এই আসন্ন বিপদ হইতে রক্ষা পাইবার উপায় চিন্তা করিতে করিতে সেখান হইতে চলিয়া গেলেন।

 ভৃত্য ঠিকা গাড়ীতে জিনিষ উঠাইয়া প্রভুর অপেক্ষায় গাড়ীর কাছে দাঁড়াইয়া ছিল, যামিনী সেখানে আসিয়া গাড়ী চড়িয়া হুকুম দিলেন, “মিত্রালয়ে চল।”

 যামিনীনাথ অবশ্য প্রমোদের কাছেই আসিতেছিলেন, কিন্তু তাঁহাকে বিস্ময়ে ফেলিবেন বলিয়া পূর্ব্ব হইতে সংবাদ দেন নাই। ইতিমধ্যে এইরূপ ঘটনা ঘটায় সহসা মতলব বদল করিয়া ‘মিত্রালয়ে’ থাকাই শ্রেয়ঃজ্ঞান করিলেন।

 যামিনীনাথ চলিয়া গেলে রামধন হিরণকুমারের নিকট আসিয়া কহিল—“বাবুকে আমার দেখা দেবার ইচ্ছা ছিল না তাই দূরে ছেলাম। বড় ভয় করে মশায়। আমি এখানে আছি জানলে চোর বলে যদি পুলিষেই ধরিয়ে দেন। কিন্তু আপনার সঙ্গে কলকাতায় গিয়ে নিশ্চয়ই আমি আদালতে সাক্ষী দেব— তাতে সন্দেহ করবেন না। কবে যাওয়া হচ্ছে?”

 হিরণ বলিলেন—“এখন, ঠিক বলতে পারছিনে দেখি কি রকম দাঁড়ায়।—"

 ভৃ। তবে আমাকে দুদিন ছুটি দিতে হুকুম হোক, মাসীর বাড়ী গিয়ে থাকি, আবার ডাকলেই আসব।

 হিরণ দরখাস্ত মঞ্জুর করিলেন, সে মাসীর বাড়ী গেল, তিনি গৃহাভিমুখী হইলেন। বাড়ী আসিয়া দেখিলেন তখনো রাত্রি অধিক হয় নাই, ১০টা মাত্র, তৎক্ষণাৎ তিনি প্রমোদকে একখানি পত্র লিখিয়া পাঠাইলেন।

 হিরণের ভৃত্য পত্র হস্তে প্রমোদের বাটী অভিমুখে যাইতেছিল। যদিও রাত্রি গভীর হয় নাই, তথাপি ইহার মধ্যেই পথ জনশূন্য বলিলেই হয়, কদাচিৎ দুটি একটি লোক পথে চলিতেছে, রাস্তার ধারে ধারে এখানে ওখানে দুই একটি মুক্ত দোকানে মাত্র মনুষ্যজীবনের ব্যস্ততা এখনো দেখা যাইতেছে, তাহা ছাড়া চারিদিক নিস্তব্ধ। সমস্ত দিনের পরিশ্রমের পর নিষ্কৃতি পাইয়া কোন দোকানী দিব্য আরামে দেওয়াল ঠেস দিয়া তামাক টানিতেছিল, কেহ বা কোন খরিদ্দারের সহিত এখনো দাম চুক্তি করিতেছিল, কেহ বা দৈনিক লাভের তালিকায় দ্বিগুণ লাভ দেখিয়া মনের স্ফূর্ত্তিতে কল্পনার সপ্তম স্বর্গে উঠিতে উঠিতে বাদসাহের কন্যাকেও বিবাহের আশা করিতেছিল। যাহা হউক, প্রায় দোকানদারেরাই সমস্ত দিনের পরিশ্রমের পর, কোন না কোন আমোদে নিযুক্ত। একটি দোকানে পাশাখেলা চলিতেছিল, ভৃত্যটি পাশাথেলার বিশেষ অনুরাগী; সে লোভ সামলাইতে না পারিয়া খেলা দেখিতে পত্র হস্তে সেই দোকানের সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইল, তখনি রাস্তার আর একদিক হইতে অপর একজন সেখানে আসিয়া বলিল, “আঃ। চাকরী করা কি অধর্ম্মের ভোগ! একে ত সমস্ত দিনেও একটু অবসর নেই, তার উপর একটু ত্রুটি হলেই সর্ব্বনাশ!”

 চাকরীর কথায় ভৃত্যের চিঠির কথা মনে পড়িল, সে খেলা হইতে চোক উঠাইয়া নবাগতের দিকে চাহিয়া বলিল, “ঠিক্ বলেছ, দেখ দশটা বেজে গেছে এখনো আমার ছুটি নেই; এই দেখ আবার চিঠি নিয়ে চলেছি।”

 নবাগত বলিল,—“তুমি চিঠি নিয়ে যাচ্ছ? আমিও এইমাত্র চিঠি দিয়েই আসছি, বলব কি দুঃখের কথা, বাবুর জরুরী চিঠি, না দিলে আমার মাথা থাকতো না, আবার এদিকে প্রমোদ বাবুর দরজা বন্ধ হয়ে গেছে, কত কষ্ট যে দরজা খুলিয়ে চিঠিখানা দিয়ে এসেছি তা ভগবানই জানেন।

 ভৃত্য বলিল,

 "সে কি কথা! আমিও যে প্রমোদ বাবুকে জরুরি চিঠি দিতে যাচ্ছি, যদি দরজা বন্ধ হয়ে থাকে তো কি হবে? তুমি কি করে দিলে?”

 সে ব্যক্তি বলিল, “ফটকের বাইরে যে দরোয়ান থাকে, সে আমার বন্ধু। তাকে বিশেষ ক'রে ধরায় দরজা খুলে সে চিঠি খানি একজন চাকরের হাতে দিলে, তাই রক্ষে।”

 হিরণের ভৃত্য বলিল, “তবে কি আজ অন্য কারো চিঠি সে দরোয়ান প্রমোদ বাবুর কাছে নিয়ে যাবে না?

 অপরিচিত বলিল, “না, তা যাবে না—”

 এই কথায় ভৃত্য ভাবিতে ভাবিতে বলিল, “তবে কি করব, তবে কি ফিরে যাব? কিন্তু বাবু বলেছেন, খুব জরুরি চিঠি—একবার বাড়ী পর্য্যন্ত গিয়ে দেখেই আসি।”

 সে ব্যক্তি বলিল “যাওয়া মিথ্যে, আমি তো এই আসছি। দশটার সময় তাঁদের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।”

 ভৃত্য বলিল, “তবে আজ যাই, কাল আসব।”

 অপরিচিত বলিল, “এ কি বিশেষ দরকারী চিঠি? আজ কি না দিলেই নয়?”

 ভৃ। বাৱু তো বলেছেন খুব দরকারী।

 সে ব্যক্তি বলিল, “আহা, তবে অমনি ফিরে যাবে, তাতে তো তোমার মনীব রাগ করবেন?”

 ভৃ। তা এতে আমার কি দোষ?

 সে ব্যক্তি একটু দুঃখের সুরে বলিল,

 মনীবরা তা বুঝলে কি আর ভাবনা থাকত? তা ত তাঁরা বোঝেন না, যত দোষ নন্দঘোষের উপর চাপান্। এই আজ যদি আমি অত কষ্ট ক’রে এই চিঠি খানি প্রমোদ বাবুকে না দিয়ে আসতাম, বাবু তাহ'লে নিশ্চয়ই আমার উপর রাগ করতেন।”

 ভৃ। কিন্তু আমি কি করব বল? আমার তো আর তোমার মত সেখানে কেউ জানবি বন্ধু লোক নেই।

 তাহার কথায় সে ব্যক্তির বড়ই সহানুভুতি হইল, সে বলিল,

 “ভাই, বুঝেছি। আহা! অমনি ফিরে যাবে, তোমার মনীব কতই রাগ করবেন। দাও তবে আমিই নিয়ে যাই, আর একবার বন্ধুত টীকে ব’লে ক’য়ে চিঠি খানি প্রমোদ বাবুকে দিয়ে আসি।”

 তাহার দয়া দেখিয়া ভৃত্য বড়ই আপ্যায়িত হইল, বড়ই আহ্লাদিত হইয়া বলিল, “তা আমার জন্যে আবার তুমি সেখানে যাবে? বন্ধু কি আবার তোমার কথা রাখবে?”

 অপরিচিত। আহা তোমার মনীব তোমাকে কত বকবেন, তোমাকে বাঁচাবার জন্য আমি আর এইটুক করতে পারিনে? তুমিও চাকর, আমিও চাকর, আমরা একজন অন্যজনের জন্য একটু কষ্ট করব না? একটু বিশেষ করে ধরলেই বন্ধু আমার কথা আবার রাখবে এখন।”

 তখন ভৃত্য আহ্লাদে চিঠিখানি তাহার হস্তে দিল, তাহাকে কিছুমাত্র সন্দেহ করিল না। চিঠি লইয়া যে কাহারও কোন কাজে লাগিতে পারে, ইহা সে বেচারার বুদ্ধির অতীত। পত্র লইয়া অপরিচিত ব্যক্তি প্রমোদের বাড়ী অভিমুখে গমন করিল, দেখিয়া ভৃত্যও বাড়ী ফিরিয়া আসিয়া হিরণকে বলিল,

 “প্রমোদ বাবুর দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, কত ক'রে চিঠি খানি দিয়ে এসেছি।”

 হি। উত্তর কোথায়?

 ভৃ। বাবুর সঙ্গে তো আর আমার দেখা হয় নাই, আমি বাবুর দরওয়ানের হাতে চিঠি দিয়ে চোলে এসেছি।

 পত্রখানি আজই প্রমোদ পাইয়াছেন জানিয়া হিরণ নিশ্চিন্ত হইলেন। কিন্তু পত্র খানি কাহার হস্তগত হইল, তাহা বলা বাহুল্য। যামিনী মিত্রালয়ে বেশ পরিবর্তন করিয়া ভৃত্য সাজিয়া এই চিঠির জন্য প্রমোদের বাটীর কাছে পথে অপেক্ষা করিতেছিলেন।