১৮

 ছেলেবেলায় পুরীর পাণ্ডাঠাকুর আসত বাড়িতে, বছরে একবার। এলেই জগন্নাথ দেখবার ইচ্ছে জাগত মা পিসিমা ছেলেমেয়ে দাসী পাড়াপড়শি সকলেরই মনে। সে যে কি ঔৎসুক্য জগন্নাথ দেখবার। পাণ্ডাকে ঘিরে বলতে থাকতুম, ‘ও পাণ্ডাঠাকুর, কবে ঠাকুর দেখাবে বল না।’ দাসীরা একজন করে বেরিয়েও পড়ত তার সঙ্গে।

 তার অনেক কাল পরে, বড় হয়েছি ছেলেপিলে নাতিনাতনি হয়েছে, রবিকা বাড়ি কিনলেন পুরীতে, বলুও কিনল, আমাদেরও বললেন জমি কিনতে। জগন্নাথ দেখবার ইচ্ছে মারও বরাবর। কিছু জমি কিনে নীলকুঠির একটা বাড়ি ভেঙে মশলাপাতি পাওয়া গেল খানিকটা, হাতেও টাকা এসে পড়ল কয়েক হাজার, তাই দিয়ে বাড়ি তৈরি হল পুরীতে, নাম হল ‘পাথারপুরী’।

 তখনকার দিনে পুরী যাওয়া ছিল যেন মুসলমানের মক্কা যাওয়া। মা বউ ঝি ছেলেপুলে নিয়ে চললুম পুরীতে জগন্নাথ দৰ্শন করতে। কি উৎসাহ সকলের। মা সারারাত রইলেন জেগে বসে। আমরা শুয়ে আছি যে যার বেঞ্চিতে লম্বা হয়ে। কটক না কোন্‌ স্টেশনে উড়ে পালকিবেহারাদের ‘হুম্প হুয়া হুম্পা হুয়া’ কানে আসতেই মা বললেন, ‘ওঠ্‌, ওঠ্‌, এসে পড়েছি এবারে উড়েদের দেশে।’ ধড়মড় করে সব উঠে বসলুম। এমন মজা লাগল সে শব্দ শুনে, মনে হল যেন পুরীর জগন্নাথের সাড়া পাওয়া গেল, জগন্নাথের শব্দদূত। পালকির ‘হুম্পা হুয়া’য় বহুকাল আগে পাণ্ডাঠাকুরের শব্দ জ্যান্ত হয়ে আক্রমণ করলে। ট্রেন চলেছে হু হু করে, ভিতরে আমরা মুখ বাড়িয়ে আছি জানলা দিয়ে, কে আগে মন্দিরের চূড়ো দেখতে পাই। খানিক যেতে না-যেতেই ভোর হয়ে এল, দূরে দেখা দিল জগন্নাথের মন্দিরের চূড়া, দেখে কি আনন্দ। মনে হল এই রকম কি এর চেয়ে বেশি আনন্দই বুঝি পেয়েছিলেন চৈতন্যদেব, যদিও রেলে যাচ্ছি আমি। তার পর আর-এক আনন্দ সমুদ্র দেখার। স্টেশনের কাছেই বাড়ি, বাড়িতে এসেই তাড়াতাড়ি বারান্দায় গেলুম। দেখি কি চমৎকার নীল সেদিকটায়, চোখ জুড়িয়ে যায়, আর কি শব্দ, কি হাওয়া—যেন জগন্নাথের শাঁখ বাজছে।

 দু-একদিনের মধ্যেই গুছিয়ে বসলুম। মা এক-এক করে সবাইকে পাঠিয়ে দিতে লাগলেন জগন্নাথদর্শনে। বাড়ির ছোট বড় দাসী চাকর কেউ বাদ নেই। আমিও তিন-চারদিন মন্দির ঘুরে দেখে এলুম সবকিছু। কেবল মাই বাকি। যাবার তেমন তাড়াই নেই। বলি, ‘পালকি ঠিক করে দিই, জগন্নাথ দৰ্শন করে আসুন।’ মা সে কথায় কানই দেন না—দিব্যি নিশ্চিন্ত, ভাবখানা যেন জগন্নাথ দর্শন হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে পালকি চড়ে সমুদ্রের ধারে খানিক হাওয়া খান, বেশির ভাগ বাড়িতেই বসে বসে ঘর সংসার খাওয়াদাওয়ার তদারক করেন আর সবাইকে ঠেলে ঠেলে মন্দিরে পাঠান।

 একদিন হঠাৎ মা আমায় বললেন, ‘তুই জগন্নাথকে দেখেছিল?’

 ‘জগন্নাথ? না, তা তো দেখিনি।’

 মা বললেন, ‘সে কি কথা! মন্দিরে গেলি অথচ বেদির উপরে ঠাকুর দেখলিনে? তোকে তা হলে জগন্নাথ দেখা দেননি, পাপ আছে তোর মনে, তাই।’

 তা হবে। কতবার মন্দিরে গেছি—ঘুরে ঘুরে নিখুঁতভাবে সব কারুকাজ দেখেছি, কোথায় জগন্নাথের চন্দন বাটা হচ্ছে, কোথায় মালা গাঁথে, কোথায় ফুলের গয়না তৈরি করে মেয়েরা ব’সে, কোথায় সে সব ফুলের বাগান, কোথায় মাটির তলায় বটকৃষ্ণমূর্তি, সব দেখেছি। কিন্তু মা যখন ওই কথা বললেন তখন খেয়াল হল মন্দিরের ভিতরেও গেছি, অন্ধকারের মধ্যে প্রদীপের আলোতে ভিড় দেখেছি লোকজনের, কিন্তু জগন্নাথকে দেখিনি। আসলে আমি জগন্নাথকে দেখতে যাইনি; যা দেখতে গেছি তাই দেখেছি। যে যা দেখতে চায় তাই তো দেখতে পায়। মার কথা শুনে পরদিন আবার গেলুম মন্দিরে জগন্নাথকে দেখতে পাণ্ডা সঙ্গে নিয়ে, পাণ্ডাকে পাশে দাঁড় করিয়ে একেবারে ভিতরে গিয়ে জগন্নাথকে দেখে তাঁর সোনার চরণ স্পর্শ করে এলুম।

 তখন মা বললেন, ‘এবারে আমায় দেখিয়ে আনতে পারিস?’

 ‘নিশ্চয়ই।’

 পালকি ঠিক। পাণ্ডাকে বলে সব ব্যবস্থা করলুম যাতে না ভিড়ে মার কষ্ট হয়, বেশি না হাঁটতে হয়। বকশিশের লোভে সে ভিড় সরিয়ে ফাঁকা রাখল নাটমন্দির কিছুক্ষণের জন্য। তখন আমিই পাণ্ডা, যা বলছি তাই হচ্ছে। মাকে গরুড়স্তম্ভ, আনন্দবাজার, বৈকুণ্ঠ যা যা দেখবার সব এক-এক করে দেখিয়ে নিয়ে গেলুম ঠিক জগন্নাথের সামনে। অন্ধকারে ভয় পান এগতে, পড়ে যান বুঝিবা। বললুম, আমায় ধরুন ভাল করে; জগন্নাথের পা ছুঁয়ে আসবেন। পাণ্ডা পিদিম নিয়ে ‘বাবু উঁচা নিঁচা’ ‘উঁচা নিঁচা’ বলে, আর এক-এক সিঁড়ি নামে। এই করে করে বেদির কাছে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলুম মাকে। জগন্নাথের পা ছোঁওয়া হল, এবারে প্রদক্ষিণ করতে হবে। প্রদক্ষিণ করা মানে অনেকখানি জায়গা ঘুরে আসা। অন্ধকারে আরসোলাগুলো ফড়ফড় করে উড়ছে, ভয় হতে লাগল মাকে নিয়ে এ কোথায় এলুম। যাক্‌, সব সেরে তো বাইরে এলুম। মা খুব খুশি। বারে বারে আমার মাথায় হাত দিয়ে আশীৰ্বাদ করতে লাগলেন, ‘তোরই জন্য আমার জগন্নাথ দৰ্শন হল।’

 উড্‌রফ, ব্লাণ্টও আসতেন, আমাদের বাড়িতেই উঠতেন এসে, কোনারকের ঝোঁক ছিল তাঁদের।

 কত মজা করেছি পুরীতে শোভনলাল-মোহনলালদের নিয়ে। সেদিন ওদের জিজ্ঞেস করলুম, ‘সমুদ্র মনে আছে?’ বললে, ‘নেই।’ কি করে বা থাকবে, ওরা তখন কতটুকু-টুকু সব। ওদের নিয়ে সমুদ্রের পারে কাঁকড়া ধরতুম, কাঁকড়ার গর্তে রুটি ফেলে দিতুম। ঝোঁক গেল সমুদ্রে জাহাজ চালাতে হবে। ম্যানেজারকে লিখে খেলনার একটা বড় জাহাজ আনিয়ে তাতে সুতো বেঁধে পারে নাটাই হাতে আমি বসে রইলুম। চাকরকে বললুম জাহাজ নিয়ে জলে ছেড়ে দিতে। ইচ্ছে ছিল জাহাজ ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভেসে যাবে, আমিও নাটাইয়ের সুতো খুলে দেব, পরে আবার টেনে তীরে আনব। কিন্তু সমুদ্রের সঙ্গে পরিচয় হতে দেরি হয়েছিল। চাকর হাঁটুজলে জাহাজ নিয়ে ছেড়ে দিলে। ওমা, এক ঢেউয়ে খেলার জাহাজ বালুতে বানচাল হয়ে গেল উলটে পড়ে। সমুদ্রে জাহাজ চালাবার শখ সেখানেই শেষ।

 একদিন মোহনলাল বললে, ‘দেখ দেখ দাদামশায়, লাল চাঁদ উঠেছে?’ চেয়ে দেখি সূর্যোদয় হচ্ছে। মনে হয় একেবারে মাটি থেকে উঠছে যেন। বলি, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, তাই তো, লাল চাঁদই তো বটে।’ আমারও অবস্থা তার মতই। সেদিন ছেলেমানুষের চোখে আমিও দেখলেম লাল চাঁদ।

 বুড়ো ছাত্র জুটল এক সেখানে। বেশ তৈরি হয়ে গিয়েছিল কিছুকালের মধ্যেই। পরে পুরীতে আর্টের মাস্টার হয়ে চলে গেল। সাক্ষীগোপালে বাড়ি। একদিন বসে আছি, মাথায় একটা ঝুড়ি নিয়ে বুড়ো ছাত্র এল দুপুর রৌদ্রে। কি? না, ‘আম এনেছি আপনার জন্য।’

 পাঁচ বছর উপরি-উপরি পুরীতে গিয়েছিলুম। সমুদ্রের হাওয়া যতদিন বইত, মা থাকতেন। উলটো দিকে হাওয়া বইতে থাকলেই মা চলে আসতেন; বলতেন, আর নয়।

 একবার জ্যেঠামশায় এলেন পুরীতে, অসুখে ভুগে শরীর সারাতে। বাড়ির কাছেই বাড়ি ঠিক করে দিলেম, সঙ্গে কৃতী ভায়া, হেমলতা বোঠান ও মুনীশ্বর চাকর। জ্যেঠামশায় এসেছেন, গেলুম দেখা করতে। দেখি মুনীশ্বর দোতলার ছাদে একটা তক্তা তুলছে। কি ব্যাপার। জোঠামশায় বললেন, ‘এ কি রকম বাড়ি, আমি ভেবেছিলুম ঠিক সমুদ্রের উপরেই বাড়ি হবে—বসে বসে কেমন সুন্দর দেখব। কিন্তু এ তে তা নয়, কতখানি অবধি বালি, তার পর সমুদ্র।’ বললুম, ‘এইরকমই তো সকলের বাড়ি পুরীর সমুদ্রের ধারে। একেবারে বাড়ির তলা দিয়ে সমুদ্র বয়ে যাবে, তা কি করে হবে এখানে।’ জ্যেঠামশায়ের মন ভরে না বারান্দায় বসে সমুদ্র দেখে। দোতলার চিলঘরের সামনে একটা তক্তার উপরে কৌচ পেতে তার উপরে বসে সমুদ্র দেখে তবে খুশি। হেসে বলেন, ‘তোমাদের ওখান থেকে কি এইরকম দেখতে পাও?’ মাথা চুলকে বলি, ‘তা এইরকমই দেখতে বই কি খানিকটা।’

 আত্মভোলা মানুষ ছিলেন জ্যেঠামশায়। একদিন বিকেলে বললেন, ‘চল সতুর বাড়িতে বেড়িয়ে আসি।’ সঙ্গে আমি ও কৃতী। খানিকক্ষণ গল্পসল্প করবার পর চুপচাপ বসে আছি সবাই। কিই বা আর বলবার থাকতে পারে। সন্ধ্যে হয়ে এল। আমরা উসখুস করছি। জ্যেঠামশায় দেখি নিৰ্বিকার হয়ে বসে আছেন, ওঠবার নামও নেই। ক্রমে রাত হয়ে এল, জ্যেঠামহাশয়ের খাবার সময় হল। হঠাৎ একসময়ে ‘মুনীশ্বর মুনীশ্বর’ বলে ডেকে উঠলেন। কৃতী বললে, ‘মুনীশ্বর তো এখানে আসেনি, সে তো বাড়িতে আছে।’ ‘ও, তাই বুঝি। এ বাড়ি তবে কার? আমি আরো ভাবছিলুম মুনীশ্বর আমায় খাবার দিচ্ছে না কেন, রাত হয়ে গেল। আচ্ছা ভুল হয়ে গিয়েছিল তো আমার।’ বলে হো হো করে হাসি।

 মেজজ্যেঠামশায়ও এসেছিলেন পুরীতে সেবারে। আমরা তিনটে পরিবার পাশাপাশি। সুরেনও ছিল; জয়া, মঞ্জু ছোট ছোট। একদিন যা কাণ্ড। সুরেন চলেছে সমুদ্রের ধার দিয়ে ভিজে বালির উপরে। সঙ্গে জয়া মঞ্জু; সুরেনের সে খেয়াল নেই। এখন এক ঢেউয়ে নিয়েছে ভাসিয়ে জয়াকে। গেল গেল। সুরেন দেখে ঢেউয়ে চুল দেখা যাচ্ছে, টপ করে চুল ধরে টেনে তুললে মেয়েকে। কি সর্বনাশই হত আর একটু হলে।

 কত বলব সেদেশের ঘটনা। পর পর কত কিছুই না মনে পড়ে—সে বিস্তর কথা। একবার আমি হারিয়ে গিয়েছিলুম সেও এক কাণ্ড। পুরীতে অনেক দিন আছি, ভেবেছি সব আমার নখদর্পণে। একদিন হাঁটতে হাঁটতে চক্রতীর্থ পেরিয়ে গেছি সমুদ্রের ধার দিয়ে, রাস্তা ছাড়িয়ে বালির উপর ধপাস ধপাস করে চলেইছি। কত দূর এসে পড়েছি কে জানে। হঠাৎ চটকা ভাঙল, দেখি সূর্যাস্ত হচ্ছে। যেদিকে চাই চতুর্দিকে ধু ধু বালি। না নজরে পড়ে জগন্নাথের মন্দির, না রাস্তা, না কিছু। শুধু শব্দ পাচ্ছি সমুদ্রের। কোন্‌ দিকে যাব ঘোর লেগে গেছে। তারা ধরে চলব, তারও তো কোনো জ্ঞান নেই। একেবারে স্তম্ভিত। শেষে সমুদ্রের শব্দ শুনে সেইদিকে চলতে লাগলুম। খানিক বাদে দেখি এক বুড়ি চলেছে লাঠি হাতে বললে, ‘কোথায় যাচ্ছ?’ বললুম, ‘চক্রতীর্থে।’ ভাবলুম চক্রতীর্থে পৌঁছতে পারলেই এখন যথেষ্ট। বুড়ি বললে, ‘তা যেদিকে যাচ্ছ সেদিকে সমুদ্র। আমার সঙ্গে এস, আমি যাচ্ছি চক্রতীর্থে।’ বুড়ির সঙ্গে চক্রতীর্থে ফিরে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। নয়তো সারারাত সেদিন ঘুরে বেড়ালেও কিছু খুঁজে পেতুম না। ‘ভূতপত্রী’তে আছে এই বর্ণনা। অন্ধকারে সমুদ্রের ধারে বালির উপর হাঁটতে কেমন ভুতুড়ে মনে হয়—মনসাগাছগুলিও কেমন যেন।

 সেইবারেই আমি ভূত দেখি। সত্যিই।

 উড্‌রফ, ব্লাণ্ট কোনারক দেখে এসে বললেন, ‘যাও, দেখে এস আগে সে মন্দির।’ একদিন রওনা হলুম কোনারকে, চারখানা পালকিতে লাঠি লণ্ঠন লোকজন স্ত্রীপুত্রকন্যা সব সঙ্গে নিয়ে। ‘পথে বিপথে’ বইয়ে আছে এই বর্ণনা। কুড়ি মাইল পথ বালির উপর দিয়ে। যাচ্ছি তো যাচ্ছি, সারারাত। পান তামাক খাবার জলের কুঁজো পালকির ভিতরে তাকে ঠিক ধরা, মিষ্টান্নের ভাঁড়ও একটি, পাশে লাঠিখানা। পালকি চলেছে হুম্পাহুয়া। পুরী ছাড়িয়ে সারারাত চলেছি—ভয়ও হচ্ছে, কি জানি যদি বালির মাঝে পালকি ছেড়ে পালায় বেহারারা। আমার আগে আগে চলেছে তিনখানা পালকি; মাঝে মাঝে হাঁক দিচ্ছি, ‘ঠিক আছিস সবাই?’ সুনসান বালি, কোথায় যে আছি বাতাসে না পৃথিবীতে কিছু বোঝবার উপায় নেই। থেকে থেকে ধপাস ধপাস শব্দ, বেহারাদের আট-দশটা পা পড়ছে বালিতে। এক জায়গায় শুনি বাপ ঝপ ঝপ ঝপ শব্দ।

 ‘কি হল রে?’

 ‘বাবু, নিয়াখিয়া নদী আসি গেলাম।’

 ‘ও, আচ্ছা বেশ।’

 নিয়াখিয়া নদী পেরিয়ে এলুম। শেষ রাত, চাঁদ অস্ত গেল, আবছা অন্ধকার, সকাল হতে আরো খানিকক্ষণ বাকি। সারারাত ভয়ে জেগে কাটিয়ে এলুম, এবারে একটু ঘুমও পাচ্ছে। সে সময়ে ভূতের ভয়ও একবার জেগেছিল মনে। সামনের পালকিগুলো আর দেখা যাচ্ছে না, বেহারাদের ডেকে বলি, ‘ও বেহারা, সব ঠিক আছে তো?’

 ‘সব ঠিক আছে বাবু, সব ঠিক আছে।’

 এমন সময় দেখি, একটা লোক, একহাতে লাঠি একহাতে লণ্ঠন, চলেছে আমার পালকির খোলা দরজার পাশে পাশে।

 বলি, ‘ও বেহারা, এ কে রে?’

 ‘আঃ বাবু, ওদিকে দেখো না, ওসব দেউতা আছে।’ বলে ওদিকের দরজা বন্ধ করে দিলে।

 দেউতা বলে ওরা ভূতকে। বলি, ‘ওকি, লণ্ঠন হাতে দেউতা কি রে।’

 খানিক বাদে দেখি ঘোড়ায় চড়ে একটা সাহেব টুপি মাথায় পাশ কাটিয়ে গেল।

 ‘বাবু, তুমি শুয়ে পড়।’ বলে শুধু বেহারারা।

 শুনেছিলুম কোন্‌ এক মিলিটারিকে ওখানে মেরে ফেলেছিল, ভূত হয়ে সে ফেরে, অনেকেই দেখে।

 রাত্তিরবেলা লণ্ঠন হাতে লোকটাকে দেখে আমার বরং ভালোই লেগেছিল।

 যাক, এই করতে করতে এসে পৌঁছলুম সমুদ্রের ধারে কি একটা মন্দিরের কাছে, মেয়েরা সব নেমে দেখতে গেল। ছোট্ট একটি পাহাড়ের মতো, তার উপরে ছোট্ট মন্দিরটি। মণিলাল ছিল সঙ্গে, তাকে বললুম, ‘ঠিক আছ তো সবাই। এইবার তবে আমি একটু পাশ মোড় দিয়ে নিই।’ তারপর আমার পালকি পড়ল গিয়ে একেবারে কোনারকের ধারে। সিন্ধুতটে চলেছে পালকি হু হু করে। দরজা খুলে দেখলুম ঢেউগুলো পাড়ে এসে পড়ছে, আবার চলে যাচ্ছে পালকির নিচে দিয়ে। জলে ফসফরাস, ঢেউ আসে যায়, যেন একটা আলো চলে যায়। মনে হয় সমুদ্রের উপর দিয়ে ভেসে চলেছি, দানবরা কাঁধে করে নিয়ে চলেছে আমায়।

 এইভাবে চলবার পর আবার একটা পালকি হু হু করে চলে গেল সামনে দিয়ে কোনারকের মন্দিরের দিকে, সঙ্গে আবার লণ্ঠন। ও কি, পালকি ওদিকে কোথায় গেল। নেমে দেখলুম আমাদের চারটে পালকি ঠিকই আছে। তবে ওটা কি?

 বেহারারা ওই এক কথাই বলে, ‘দেখো না বাবু, তুমি শুয়ে পড়। কি দেখলুম তা হলে ওটা? মরীচিকা না কি কে জানে, তবে দেখেছিলুম ঠিকই। সকাল হয়ে গেছে, ভয় নেই। মণিলালদের জিজ্ঞেস করলুম, ‘দেখেছ কিছু?’

 বললে, ‘না।’

 ভূতুড়ে কাণ্ড দেখে কোনারকের মন্দিরে পৌছলুম। মেয়েরা নেমেই মন্দির দেখবে বলে ছুটল।

 কোনারকের মত অমন সুন্দর সমুদ্র পুরীর নয়। গেলুম ধারে, আহা, যেন আছোঁয়া বালি সাদা জাজিমের মত বিছানো, তার কিনারায় নীল গভীর সমুদ্র। মানুষকে কাছে যেতে দেয় না। যেন বিরাট সভা, মানুষ সেখানে প্রবেশ করতে পারে না সহজে। তার ওদিকে সোনার ঘটের মত সূর্য উঠছে, সামনে সূর্যমন্দির। সূর্যোদয়ের আলোটা পড়ে এমন ভাবে, যেন সূর্যদেব উঠে এসে রথের শূন্য বেদি পূর্ণ করে বসবেন। সব তৈরি, এবার রথ চললেই হয়। বুঝেই ঠিক জায়গায় ঠিক রথটি নির্মাণ করেছিলেন শিল্পীরা।

 মন্দিরও বড় ভালো লেগেছিল। কি তার কারুকাজ। ওই দেখেই তো বলেছিলেম ওকাকুরাকে, ‘যাও, সূর্যমন্দির দেখে এসো।’ মন্দিরের সামনে বালির উপরে পড়ে আছে একটি মূর্তি, আধখানা বালির নিচে পোঁতা—যেন পাষাণী অহল্যা পড়ে আছে মন্দিরের দুয়ারে। অহল্যা আঁকতে হলে ওই মূর্তিটি এঁকো।

 সারাদিন কোনারকের মন্দির দেখে ডাকবাংলোতে থেকে বেলা কাটিয়ে বিকেল তিনটের সময় পালকি ছাড়লুম। আসছি আসছি। ফিরতি পথের শোভা, দূরে মৃগযূথ সব চলেছে—থেকে থেকে এক একবার দাঁড়ায় শিং তুলে, ঘাড় ফিরিয়ে। সে ছবি এঁকেছি। এই রকম চলতে চলতে আবার নিয়াখিয়া নদী পার হয়ে এলুম। সন্ধ্যে হয়ে এল, দেখলুম জগন্নাথের মন্দিরের ঠিক পিছনদিকে সূর্য অস্ত যাচ্ছে। ঝপ করে পালকি নামিয়ে দিয়ে বেয়ারার জগন্নাথের মন্দির ছাড়িয়ে অনেক দূরে চূড়োর উপরে প্রকাশ পাচ্ছে যে সূর্য তারই দিকে তাকিয়ে দু-হাত জুড়ে প্রণাম করে বললে, ‘জয় মহাপ্রভু! জয় মহাপ্রভু!’

 কিন্তু সত্যি বলব, এত সুন্দর সুন্দর মূর্তিগুলো দেখে লোভ হত। মনে হত রাবণের মত কোলে করে ঘরে নিয়ে যাই তাদের। সেই যে বালুর চরে আধখানা পোঁতা নায়িকা শুয়ে আছে আকাশের দিকে চেয়ে, দানবের শক্তি পেলে তুলে নিয়ে আসতুম।

 একবার সত্যি সত্যিই মূর্তি চুরি করতে গিয়েওছিলুম। সংগ্রহের বাতিক চিরকালেরই তা তো জানো? সমুদ্রের ধারে পাথর পড়ে থাকে, যেতে আসতে দেখি, খেয়াল করিনে তেমন। একদিন নুলিয়াদের দিয়ে পাথরখানা ঘরে নিয়ে এলুম, দেখি তাতে ভৈরবী কাটা। মা বললেন, ‘এ ভালো নয়, কোনো ঠাকুর-টাকুর হবে। পুরীর মাটিও ঘরে নিয়ে যাওয়া দোষ। ও তুই ফিরিয়ে দে যেখানকার জিনিস সেখানে।’ পরে এক সাহেব নিয়ে গেল তা, আমার ভাগ্যে হল না। কি আর করি? মূর্তি ভাগ্যে নেই, নুড়িটুড়ি সংগ্রহ করে বেড়াই।

 জগন্নাথের মন্দিরেও ঘুরি রোজ। নাটমন্দিরের ধারে ছোট্ট একটি ঘর, ছোট্ট দরজা, বন্ধই থাকে বেশির ভাগ। পাণ্ডা বললে, ভোগমূর্তি থাকে এখানে। জগন্নাথের বড় মূর্তি সব সময়ে নাড়াচাড়া করা যায় না, ওই মূর্তি দিয়েই কাজ চালায়। সে ঠিক ঘর নয়, একটি কুঠরি বললেই হয়। বললুম, ‘দেখতে চাই আমি।’ পাণ্ডা দরজা খুলে দিলে। দেখি চমৎকার চমৎকার ছোট্ট ছোট্ট মূর্তি সব। দেখেই লোভ হল। ছোট আছে, নিয়ে যাবারও সুবিধে। পাণ্ডাকে জিজ্ঞেস করলুম। সে বললে, ‘হবে না, ও হবে না বাবু।’ ফুসলে ফাসলে কিছু যখন হল না, দেখি তা হলে হাতানো যায় কিনা কিছু। ঘুরে ঘুরে সব জেনে শুনে সাহসও বেড়ে গেছে।

 তখন স্নানযাত্রা। জগন্নাথকে নিয়ে রথ চলেছে, সবাই সেখানে, মন্দির খালি। আমার মন পড়ে আছে ছোট ছোট মূর্তিগুলোর উপর। আমি চুপি চুপি মন্দিরে ঢুকে সোজা উপস্থিত সেই পুতুলঠাসা কুঠরির কাছে, দেখি দরজা খোলা, ভিতর অন্ধকার। মস্ত সুবিধে, এবার চৌকাঠ পেরলেই হয়। আর দেরি নয়। দরজার কাছে গিয়ে উঁকি দিয়েছি কি অন্ধকার থেকে এক মূর্তি বলে উঠল, ‘কি বাবু, আপনি? আজ তো এখানে কিছু নেই, সব স্নানযাত্রায় চলে গেছে।’ কি রকম থমকে গেলুম। ভিতরে যে কেউ বসে আছে একটুও টের পাইনি।

 যাক, বাড়ি ফিরে এলুম ভাঙা মনে। সে রাত্রে স্বপ্ন দেখি, আমি যেন সেই কুঠরিতে ঢুকে একটা মূর্তি তুলে আনব ভেবে যেই তাতে হাত দিয়েছি মূর্তি হাত আর ছাড়ে না। চীৎকার করছি, ‘ওমা দেখ দেখ, হাত তুলে আনতে পারছিনে।’ দম বন্ধ হয়ে আসে স্বপ্নে। সকালে উঠে মাকে বললুম সব। মা বললেন, ‘খবরদার, কিছুতে হাত দিসনে, তবে সত্যিই হাত আটকে যাবে। সাবধান, ঠাকুরদেবতা নিয়ে কথা, আর কিছু নয়।’

 কিন্তু কি বলব—এমন সুন্দর মূর্তি, তাকে চুরি করারও লোভ জাগায়।

 তার পর আর-একদিন আর-একটা মূর্তি দেখলুম। নরেন্দ্রসরোবরের ধারে অনেক মূর্তি আছে, পাণ্ডারা ঘুরে ঘুরে দেখালে। তেমন কিছু নয়, পয়সা ফেলে ফেলে যাচ্ছি। একপাশে ছোট্ট একটা মন্দির, ভাঙা দরজা। বললুম, ‘এটাতে কি আছে দেখাও।’ পাণ্ডা বললে, ‘ওতে কিছু নেই, বাবু। ওটা এক বুড়ির মন্দির।’

 বুড়িকে বললুম, ‘দেখা না বুড়ি তোর মন্দির।’ সে বললে, ‘দেখবে এসো।’ দরজাটি খুলে দেখাতেই একটি কালো কষ্টিপাথরের বংশীধারী মূর্তি, মানুষপ্রমাণ উঁচু, একটি হাত ভাঙা, যাকে বলে চিকনকালা বংশীধারী। কি তার সূক্ষ্ম কাজ, কি তার ভঙ্গি! কোথাও এমন দেখিনি। বুড়িকে বলেছিলুম, ‘মন্দির গড়িয়ে দেব, নতুন মূর্তি তৈরি করিয়ে দেব, এটি আমায় দে।’ রাজি হল না। নন্দলালদের বলেছিলুম, ‘যদি যাও, ভালো মূর্তি দেখতে চাও, সেটি দেখে এসো।’ এখনো সেই বুড়ি আছে কিনা, মূর্তি আছে কিনা কে জানে। পাণ্ডারা আমল দেয় না। বোধ হয় ভাঙা বলে ফেলে দিয়েছিল, বুড়ি তাকে পূজো করত। প্রাণ ঠাণ্ডা হয়ে গেল, কিন্তু ঘরে আনতে পারলেম না এই দুঃখ রইল।

 তোমরা ‘ভারতশিল্প’‘ভারতশিল্প’ কর, দরদ কি আছে কারো? না পুরীর রাজার, না ম্যানেজারের, না পাণ্ডাদের, দরদ কারো নেই। প্রমাণ দিই।

 জগন্নাথের মাসির বাড়ি মেরামত হবে। পাণ্ড খবর দিলে, ‘বাবু, দুটো হরিণ যদি কিনতে চাও মাসির বাড়ির, বিক্রি হবে।’

 বললুম, ‘সে কি রে? পোষা হরিণ সেখানে বড় হয়েছে। আমার দরকার নেই সে হরিণের। ভাঙা মূর্তি থাকে তো বল্‌।

 পাণ্ডা বললে, ‘সে কত চাই বাবু, বলুন। অনেক মিলবে।’

 বললুম, ‘আজই চল্‌ তবে সেখানে দেখি গিয়ে।’

 গেলুম, তখন সন্ধ্যেবেলা। সে গিয়ে যা দেখি। মাসির বাড়ি যেন ভূমিকম্পে উলটে পালটে গেছে। চুড়োর সিংহ পড়েছে ভুঁয়ে, পাতালের মধ্যে যে ভিত শিকড় গেড়ে দাঁড়িয়ে ছিল এতকাল সে শুয়ে পড়েছে মাটির উপরে, সব তছনছ। বড় বড় সিংহ নিয়ে কি করব? ছোটখাটো মূর্তি পেলে নিয়ে আসা সহজ। ভিতরে গেলুম। সেখানেও তাই। এখানকার জিনিস ওখানে। কেমন একটা ত্রাস উপস্থিত হল। পাণ্ডাকে শুধালেম, এই পাথরের কাজ ঝেড়ে ঝুড়ে পরিষ্কার করে যেমন ছিল তেমনি করে তুলে দেওয়া হবে তো মেরামতের সময়?

 তার কথার ভাবে বুঝলেম এই সব জগদ্দল পাথর ওঠায় যেখানকার সেখানে, এমন লোক নেই। বুঝলেম এ সংস্কার নয়, সৎকার। ভাঙা মন্দিরে মানুষের গলার আওয়াজ পেয়ে একজোড়া প্রকাণ্ড নীল হরিণ চার চোখে প্রকাণ্ড একটা বিস্ময় নিয়ে আমার কাছে এগিয়ে এল। কতকালের পোষা হরিণ, এই মন্দিরের বাগানে জন্ম নিয়ে এতটুকু থেকে এত বড়টি হয়েছে—আজ এদের বিক্রি করা হবে। আর, এদের সঙ্গে সঙ্গে যে বাগান বড় হতে হতে প্রায় বন হয়ে উঠেছে, বনস্পতি যেখানে গভীর ছায়া দিচ্ছে, পাথি যেখানে গাইছে, হরিণ যেখানে খেলছে, সেই বনফুলের পরিমলে ভরা পুরোনো বাগানটা চষে ফেলে যাত্রীদের জন্য রন্ধনশালা বসানো হবে।

 আমার যন্ত্রণাভোগের তখনও শেষ হয়নি। তাই ঘুরতে ঘুরতে একটা ডবল তালা দেওয়া ঘর দেখিয়ে বললেম, ‘এটাতে কি? পাণ্ডা আস্তে আস্তে ঘরটা খুললে, দেখলেম, মিণ্টন আর বর্‌ন্‌ কোম্পানির টালি দিয়ে অতবড় ঘরখানা ঠাসা।

 ‘এত টালি কেন?’

 ‘মাসির বাড়ি ছাওয়া হবে।’

 আঃ সর্বনাশ, এরি নাম বুঝি মেরামত? ভাঙার মধ্যে, ধ্বংসের স্তূপে, রস আর রহস্য, নীল দুটি হরিণের মত বাসা বেঁধে ছিল। সেই যে শোভা, সেই শান্তি মনে ধরল না; ভালো ঠেকল দুখানা চকচকে রাঙা মাটির টালি!

 ভাবলুম, এ ঠেকাতে হবে যে করেই হোক। সময় নেই, পরদিনই চলে আসছি কলকাতায়। বাড়ি ফিরে মণিলালের সঙ্গে পরামর্শ করে পুরীর কমিশনারের কাছে চিঠি লিখলুম।—‘আমি দেখে এসেছি এই কাণ্ড, ভ্যাণ্ডালিজ্‌মএর চূড়ান্ত। যে করে পারো তুমি থামিয়ো।’ ইংরেজ-বাচ্চা, যেমন চিঠি পাওয়া মাসির বাড়িতে নিজে গিয়ে হাজির। তখনি যেখানে যে পাথরটি ছিল তেমনি তুলিয়ে দিয়ে মেরামত করলে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে। কথা রাখলে সে। এই একটা পুণ্যকার্য করে এসেছি পুরীতে বলতে পার। জগন্নাথের মাসির বাড়ির শোভা নষ্ট হতে বসেছিল আর একটু হলেই।

 সেবারেই নাচ দেখেছিলুম মন্দিরে দেবদাসীর। নাচ দেখা হয়নি, এ না দেখে যাওয়া হতে পারে না। নাচ আগে দেখি, পরে খাতায় সই দেব। পাণ্ডা কিছুতে ঘাড় পাতে না, বলে, ‘অনেক টাকা লাগবে।’ বললুম, ‘তা দেওয়া যাবে, সেজন্য আটকাবে না। দেবতার সামনে নাচ দেখব।’ সইয়ের লোভ, টাকার লোভ; পাণ্ডা রাজি হল অনেক গাঁইগুঁই করার পর। বললে, ‘কাল তবে খুব ভোরে এসে আপনাকে নিয়ে যাব। তৈরি থাকবেন।’

 ভোরে আমি একলাই গেলুম তার সঙ্গে। তখনো মন্দিরে লোকজনের ভিড় হয়নি, অন্ধকারে দু-একটি মাথা দেখা যায় এখানে ওখানে, বোধ হয় পাণ্ডাদেরই। পাণ্ডা আমাকে নিয়ে নাটমন্দিরে বসিয়ে দিলে। একপাশে একটি মাদল বাজছে, একটি মশাল জ্বলছে, একটি দেবদাসী নাচছে। দেবদাসী নাচের সঙ্গে ঘুরছে ফিরছে, সঙ্গে সঙ্গে মশালও সেইদিকে ঘুরছে, আলো পড়ছে তার গায়, যেন জগন্নাথ দেখছেন তাকে আর কোণায় বসে দেখছি আমি। কত ভাব জানাচ্ছে দেবতার কাছে।

 অভিনয়ে নটীর পূজা দেখে ছবি আঁকো তোমরা। আমি সত্যিসত্যিই দেবমন্দিরের ভিতরে গিয়ে দেবদাসীর নৃত্য দেখেছি। চমৎকার ব্যাপার সে। সেইবারেই ফিরে এসে দেবদাসীর ছবিখানি আঁকি। আর আঁকি কাজরী ছবিখানি। তাও দেখেছিলুম পুরীতেই কমিশনারের বাড়িতে। বাগানে পার্টি, মেঘলা আকাশ, টিপ টপ করে দু-একফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে, কয়েকটা বড় ফুলের গাছ, তার পাশে নাচছিল কয়েকটি ওড়িয়া মেয়ে। কাজরী ছবিখানি পরে তা থেকেই হল।