জোড়া পাপী/দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ।
আমার ইঙ্গিত পাইয়া ইন্সপেক্টারবাবু তখনই একজন কনষ্টে বলকে সেই সকল, দ্রব্য আনয়ন করিতে আদেশ করিলেন। আদেশ মাত্র সে ঐ সকল দ্রব্য লইয়া আমার নিকট আসিল এবং আমার সম্মুখে মাখিয়া প্রস্থান করিল।
আমি তখন অতি মনোযোগের সহিত উহাদিগকে পরীক্ষা করিতে লাগিলাম। ট্রাঙ্কটীর চাবি বন্ধ ছিল। সুতরাং সহজে খুলতে পারিলাম না। অগ্রে অপর চাবি দিয়া খুলিতে চেষ্টা করিলাম, কিন্তু খোলা গেল না। অগত্যা উহাকে ভাঙ্গিয়া ফেলিবার আদেশ দিলাম। কথামত ট্রাঙ্কটী তখনই ভাঙ্গিয়া ফেলা হইল। ভিতরে খানকয়েক কাপড়, তিনটা জামা, একখানা শাল ও দুইখানা বিছানার চাদর ছিল। আমি প্রত্যেক জিনিষট তন্ন তন্ন করিয়া পরীক্ষা করিলাম। মনে করিয়াছিলাম, বাবুর নাম ও তাহার বাড়ীর সন্ধান পাওয়া যাইবে, কিন্তু ট্রাঙ্কের ভিতরে যে সকল দ্রব্য পাওয়া গেল, তাহাতে আমার অভিপ্রায় সিদ্ধ হইল না।
ট্রাঙ্কটা বন্ধ করিয়া বিছানাটা পরীক্ষা করিলাম, বালিস, কম্বল, বালিসের ওয়াড় প্রভৃতি একে একে সকলগুলিই বিশেষ করিয়া দেখিলাম, কিন্তু তাহাতেও কোন ফল হইল না।
বিছানার সঙ্গে একখানি পাখা ছিল। আর আর সকল দ্রব্য দেখিবার পর সেই পাখাখানি আমার নয়নগোচর হইল। আমি তখনই উহা গ্রহণ করিলাম, এবং বিশেষ সতর্কতার সহিত ইহার উভয় দিক লক্ষ্য করিতে লাগিলাম।
কিছুক্ষণ দেখিবার পর আমার অভিপ্রায় সিদ্ধ হইল। পাখার একটী কোণে অতিক্ষুদ্র করিয়া “নরেন্দ্র নাথ মুখো, হাটখোলা” এই কয়টা কথা লেখা ছিল। আন্তরিক অনিন্দিত হইয়া আমি ঐ নাম ও ঠিকানা মনে করিয়া রাখিলাম এবং পাখাখানিও পুনরায় যথা স্থানে রক্ষা করিলাম। ইন্সপেক্টারবাবুও আমার এই নুতন আবিষ্কারের বিষয় জানিতে পারিলেন না। আমিও তখন সে কথা আয় কাহাকেও বলিতে সাহস করিলাম না।
আরও কিছুক্ষণ ইন্সপেক্টারবাবু সহিত কথা কহিয়া আমি কোচমানকে বিদায় দিলাম। তাহার মুখেই শুনিয়াছিলাম, গাড়ীখানি হাওড়া স্টেশনের নিকটস্থ হোসেনগালি নামক সর্দারের আস্তাবলে থাকে।
এখন কি প্রকারে যে এই খুনের আস্কারা করিব, তাহার কিছুই স্থির করিতে পারিলাম না। কিরূপে কাহার দ্বারা রমণী সেই গতিশীল গাড়ী হইতে নিক্ষিপ্ত হইলেন, কে তাহার সঙ্গে ছিল? তিনিই বা কোথায়, কেমন করিয়া পলায়ন করিলেন, এই সকল প্রশ্নের কোনও সদুত্তর করিতে পারিলাম না।
পাথার উপর যে লোকের নাম লেখা ছিল, রমণীর সহিত তাহার সম্বন্ধ কি? তিনিই কি রমণীকে হত্যা করিবার সংকল্প করিয়া ঐরূপে ফেলিয়া দিয়াছিলেন?
এইরূপ নানাপ্রকার চিন্তা করিয়া ভাবিলাম, যতক্ষণ না সেই লোকের সন্ধান করিতে পারিতেছি, ততক্ষণ এই খুনের অস্কার। করতে পারিব না। এই স্থির করিয়া আমি ইন্সপেক্টারবাবুর নিকট বিদায় গ্রহণ করিলাম।