ঝঙ্কার/প্রভাতী
একদিন প্রভাতেতে কহিল পরাণ মোরে—
চল যাই ভেসে ওই দূর কাননেতে;
যথায় মাধবী এক লতিকা সহিত,
খেলে প্রফুল্ল মনেতে,—
সাঙ্গ করে জীবনেতে,
সে অদ্ভূত প্রেম যাহা হৃদয়ে কথিত!
পাগল পরাণ মোর,
ধাইল অমনি সেই—
মহোল্লাস কানন মাঝারে।
দেখে এক বালিকা তথায়,
আকাশের পানে চেয়ে,
গাহিতেছে আন মনে—
গীত-খণ্ড ভাসিতেছে প্রভাত-সমীরে!
রাঙা আভা মেখে গায়,
রাঙা বরণে ঢাকিয়ে—
সেই বালিকা আমার,
গাঁথিতেছে ফুল-হার,
কি জানি কাহার তরে!
সুধাইনু আমি ধীরে, ধরিয়া তাহার কর—
“হে বালা, বলত আমারে
কার তরে গাঁথ ফুল-হার?”
আনত নয়ন তার,
ধীরে ধীরে নত করি আরো
কুসুম লইয়ে এক ছিঁড়িতে লাগিল!
—বুঝিনু তখন নিজে,
ভাগ্যবান আমি আজ পৃথিবী মাঝারে।
হাসি কুতুহলে কহিনু বালারে-
“হৃদয়ের রাণী মোর, তুমি সুহাসিনী,
দাও মালা, যতনে পরিব উহা,
ভুলে যাব জীবনের সে দুঃখ কাহিনী!”
কুসুম ফুটায়ে যেন হাসিয়া বালিকা,
গলে দিল কি—স্বরগ সুন্দর মালিকা;
দুখ ভুলি গেল, বাহু প্রসারিল,
অনন্ত-উদাস প্রাণে ঘুরিতে লাগিল!