শান্তি।

যমুনা-তীরেতে,  কুসুম ফুটায়ে
বহিত মৃদুল বায়;
তটিনীহিল্লোলে,  আকুল হইয়ে,
ধাইত পরাণ তায়।

সখীটির সাথে,  মিলায়ে প্রভাতে,
একটী রমণী তথা,
মৃদু মৃদু তানে,  লহর উঠায়ে,
ঢালিত সুধার ধারা।


স্বপনের মত,  আবেশে চলিয়ে,
যেন সে পড়িত তথা;
আঁখিতে কথন,  অন্তরে স্বপন,
নীল জলে দিত সাড়া।

বেণী এলাইয়ে,  থির সন্ধানিয়ে,
কামধনুছাড়া তীর,
মারিত আমারে,  পাগল করিত,—
পড়িত আঁখিতে নীর।

উধাও হইয়ে,  পড়িতাম তথা,
লুটাতেন পদতলে;
শুনিত না তবু,  মারিত আর’সে,
ফুলের ধনুকে জুড়ে!

কেন যে সাপিনী,  এবে কুহকিনী,
জর জর করে দেহ,
বুঝিতে পারিনে,  তবু যাই ধেয়ে,
আমি যেন তার কেহ!

সম্পদে মাখিয়ে,  নরকে ডুবিয়ে,
তুলিতে যেতাম ফুল;—

সহসা এক দিন,  স্বরগ-জ্যোতি,
ভাঙ্গিল আতুর-ভুল!

বিস্মিত হইয়ে,  দেখিলাম জ্যোতি,
আসিছে আকাশ ভেদি;
সপ্ত স্বর্গ হ’তে  একটী মাণিক,
ধীরে ধীরে আসে নামি!

আমার পরাণ  আকুল হইল,
দেখিয়ে এবে সে আলো;
নয়ন আমনি,  মুদিয়া মাসিল,
স’তে না পেরে সে আলো!

কত যে কাঁদিল,  বুক ব’হে গেল,
আঁধারে খুঁজিল দিশি;
পথ না পাইল,  আকুল ছইল,
দেখিতে না পেয়ে দীপি!

‘বুঝি দেব,  মোরে দয়া না করিবে,’
শুধাই শূন্যেতে আমি;–
প্রতিধ্বনি মোর,  ভাসিতে ভাসিতে,
অসিত ফিরিয়ে কাঁদি।


যে দিকে তাকাই,  সকলি আঁধায়,
বহিছে অনল-বায়;
ছুটিয়া যেতাম,  শান্তির তরেতে,
আতুর পাগল প্রায়!

এমন সময়ে,  একটী বালিকা,
নয়ন কিরণে বাঁধি,
লইয়া চলিল,  স্বরগের পানে,
দেখায়ে উজল জ্যোতি!

চলিলাম সাথে,  উজানে বহিয়ে,
ভীষণ সাগর পারে;
কাঁপিছে পরাণ,  টলমল দেহ,
পড়িয়া বা যাই পাছে।

নহি আয় আমি  কুহকিনী-দাস,
কিবা ভয় মোর আর,
যাইব ছুটিয়া  বীরের মতন,
ভীষণ আঁধার পার!

সম্পূর্ণ।