শব্দহীন বাণী।

মৃদুল লহর নাচাইয়া যায়,
কত যে কথা গোপনেতে কয়,
মৃদু চুমি চুমি
ঢুলিয়া ঢুলিয়া,
প্রাণের মাঝারে আপনি বায়!

শব্দহীন যেন কি এক কথা,
আপন হৃদয়ে আপনি গাথা,

সরমেতে মরে—
তবুও সে কয়,
ফুটন্ত ফুলের অজানিত ভাষা।

নিভন্ত রবির আধ আধ ছায়া,
প’ড়েছে তাহার কোমল প্রাণে,
তটিনীর সনে,
সন্ধ্যা সমীরণে,
ব’হে যায় যেন গানের বিভা৷

এ পারে সন্ধ্যা, ও পারে দিবা,
মাঝেতে ব’সিয়ে গোধূলি রাণী,
অস্ফুট আলোকে,
আঁধারের সনে,
কহিছে গোপনে কানন-কথা।

আলোকে আঁধারে খেলিছে তথায়,
স্বপনের সরে মিশিয়ে দোঁহে;
দুটী হাত দিয়ে,
লতিকার মত,
জড়ায়ে ধ'রেছে মোহন গলায়!


বিদায়-চুম্বন নয়নে হইল,—
এ হ’তে মধুৰ দেখেছ কোথায়?
ছিন্নলতা প্রায়
ভূতলে পড়িল,—
দিবস তবুও চলিয়া গেল।

অজানিত, তবু পথ দেখাইয়ে,—
আসিছে তারকা চুপেতে চুপেতে;
বুঝি আলো দিতে,
সাধ করে তার,—
অনন্ত আঁধার কানন মাঝেত!

ক্ষুদ্র জ্যোতি তোর, কেমনে বল গো,
সহিবে হৃদয়ে এতেক আঁধার,
কোমল নয়ান—
কোমল পরাণ–
এত জ্বালা প্রাণে সহিবে কি তব?

আঁখি ছল ছল অমনি বালার,—
গরবের ধারা ফেলিল তখনি
উজল তারকা,
উজল হইল,
ক্ষণেকের তরে ঘুচিল আঁধার!


নিস্তব্ধ অর্ণধার, কানন মাঝে—
গাহিল পাখী সন্ধ্যা-সমীরণে;
পুলকে উঠিল
তাহার সে তান,
গগনের কোলে, তারার পায়ে!

গান গেয়ে সন্ধ্যা চলিয়ে গেল,
অভাগা মানব তবু না শিখিল;
প্রেম-গীতি মাঝে,
জগত ভাসিছে,
অন্ধজ্ঞানে ডুবে সকলি হারা’ল!

সন্ধ্যা চ’লে গেল, কি কথা কহিল,
নীরবে ফুটিল যামিনী-হাসি,
তারা অগণন,
ভৎর্সনা করিল,—
পথহারা তারা সকলি সহিল!

জীবন টুটিল, কথা না ফুরা’ল,
উদ্ভ্রান্ত বাণী আপনি উঠিছে।

গলায়ে পাষাণ,
গায় সুমধুর,
কাননের কথা বুঝিতে নারিল!