সাধের ফুল।

কার প্রেমে ফুটেছ ললনে, এ বিপুল বিশ্ব মাঝে?
—ধনী জনে চাহে,
—প্রবীণে আদরে,
—যুবক সন্তাষে,
—যুবতী মাথায় পরে অতি সযতনে;
কি মোহন তানে তুই ভুলালি আমারে!
না জানি কি তান তোর আছে হৃদে গাঁথা,—

হই মাতোয়ারা;
স্বপ্নময় আঁখি দুটি স্বপনে খেলায়
—স্বপনে মিলায়।
বহু দিন পরে যবে দেখেছিনু তোরে, '
ভুলেছিনু আপনা হারায়ে,
কহ প্রিয়তমে, সেরূপ কি জাগে আর?—
আহা, বাল্য সখা গিয়েছে আমার!

একদিন লাল মেঘ উঠেছে আকাশে,
প্রভাতের বায়ু মোর লাগিল গায়েতে;
ধরি হাত দুইজনে চলিনু কাননে,
ফুল তুলিবার তরে।
দূর হ’তে দেখা’ল মালতী মোরে,—
“দেখ দাদা,
কি সুন্দর ফুল এক ফুটেছে বাগানে?”
হাত তার ধরিয়া যতনে
কহিনু আদরে—
“মালতি, ভগিনি আমার,
গোলাপ ইহারে কহে, জাননা কি তুমি?”
“না দাদা,”—কহিল সে,
চাহি মম মুখপানে।
হাসি তার ফুটিল অধরে,—

পুন মিলাইয়ে গেল!
আদরিতে তারে কহিনু তখন আমি—
“মালতি, আয় তোরে ফুল তুলে দিই”

স্ব-আহ্লাদে বালিকা ধাইল,
পুন হাসি দেখা দিল,
দূর হ’তে দেখাল কেমন—
মেঘে যেন অলকা শোভিল!
কণ্টকিত কলেবব, স্পর্শ করি বালিকার,
চম্পক অঙ্গুলি হ’তে রক্ত বাহিরিল,
আরক্তিম মুখে ধীরে, ধীরি চাহি মোর পানে,
কাঁদিয়া ফেলিল বালা আকুল অন্তরে।
ধারা তার বহিল নয়নে,—
দিগন্তের প্রান্তর ভাসায়ে,
সান্ত্বনিতে তারে, কহিনু সাদরে আমি—
“ভগিনি আমার, কাঁদিও না আর,
দিতেছি আমিলো উহা।”

—বিনোদিনী বিমোহিনী তান জাগিছে পরাণে,
জাগিছে পরাণে শৈশবের খেলা ধূলাসনে,
এবে ভুলিব কেমনে বল মোরে ফুল?
নিশাকালে, অনন্ত আকাশতলে, কেশ এলাইয়ে,

তটিনী বহিয়া যায়;
গুন গুন স্বরে, কল কল নাদে,
কখন কি ভাবে প্রাণ ঢেলে দেয়;
শুনিছি জীবনে, তুমিও গুনেছ,
কভু কি বুঝেছ তাদের কথা?
তাই বলি ফুল,  বুঝেছ কি তুমি,
আমার অন্তর ব্যথা?
আমি ত পারিনে সখি বুঝিতে তাহার কথা।
কি জানি কি কথা কয়,
সদা শূন্য পানে চায়,
ধেয়ে যায় আপনা পাসরি;
তাই বলি ফুল,  বুঝেছ কি তুমি,
আমার অন্তর ব্যথা–
অভাগার মরমের কথা?
আদরের ধন,  তুমিলে গোলাপ,
হৃদয় পরশমণি,
না জানি না বুঝি, তবু’তান শুনি,
হৃদয় গলায়ে, প্রাণ ঢালিয়ে,
আপনে আপন হারা হই।