হুতাশ।

কুহকে মাখান হায়, হৃদয় আমার;
ঝরে না’ক অশ্রুজল,
জলে হৃদে প্রেমানল,
প্রেম আশে মাতোয়ারা—উদাস পরাণ!

অগণ্য তারার মালা, প্রাণের উচ্ছ্বাস,
দেখাইয়া চলে পথ,
তাই হৃদে এত সাধ,
ফুল লভিবারে তাই মানস আমার।

অনন্ত-অনন্ত বলি, হৃদয়ে ডরাই;–
তাই পরাণ গলাই,
পুন হৃদয় জুড়াই,
বলি, প্রাণপ্রিয়ে, পুন পাব কি তোমায়?

সরমে জড়িত আধ যামিনী প্রকাশ;
সুখের সলিলে ভাসি,
মৃদু মৃদু হাসি শশী
কুঞ্জের আড়াল থেকে করে বিলোকন!


মানস কুসুম সম, সে স্বপন মোর,
একটী তারকা সহ,
অনন্তে বিলীন হ’ল
স্বপনের ধূলা খেলা স্বপনে বিলীন!

ব’সে রই মগ্ন মনে,—আকুল পরাণ,
ধেয়ে যায় কোন্‌ পথে,
শুধালে না কথা কহে,
উপহার দিতে শুধু সাধ করে প্রাণ!

ফুরাইল রত্নখনি, রত্নের ভাণ্ডার;–
কোথা পাইব আবার,
তাই সুধি অনিবার,
সারদে! দিয়ে রত্ন কেন হ’রে লও?

বুঝেছি, জন্মেছি আমি হইয়ে অভাগা,
তা না হ’লে কেন কাঁদি,
কাঁদাও আমারে তুমি,
ভালবাসা লীলাখেলা, সকলি স্বপন?

জীবন্ত প্রতিমা তুমি, প্রাণের মাঝারে;
তবু কেন থাক দূরে—

ওই সাগরের পারে?—
ইচ্ছা হয় যাই ভেসে, সমীরণ স্রোতে!

আহা! কি সুন্দর স্থান, নীলিমা বিরাজে,
সারি—সারি, দূরে- দুরে,
শিশুগুলি হেসে হেসে,
ঢলিয়া পড়েছে গায়,—কুসুম শয্যায়!

হবে কি এমন দিন, শিশুটীর মত—
ভেসে ভেসে সমীরণে,
হেলে দুলে বীণাতানে,
শুইয়া থাকিব ওই তুষার শয্যায়?

চাহি না জীবন আব, মরণ কে চায়,
জীবন মরণ মোর,
ওই খানে হবে ভোর,
হে সারদে, এই মাত্র ভিক্ষা তব পায়!

শিশুকালে যবে দোঁহে, খেলিতাম বনে;—
হাত দুটী ধরি মোরে,
কহিত মৃদুল স্বরে—
এস ভাই খেলা করি তটিনীর ধারে!”


সে তান ভাসিয়ে গেছে, দক্ষিণের বায়,—
জীবন যৌবন মোর,
যার তরে সমর্পণ,
প্রাণাধিকে, তার কি লো এই প্রতিদান?

ভাল ভাল, পরীক্ষায় বুঝিনু সকল;
ক্রমে ক্রমে জ্ঞান হ’ল,
শূন্যভরে উড়ে গেল,
ভালবাস লীলাখেলা, সকলি স্বপন!