টম্ খুড়ো/টমখুড়োর বিষয়
এক্ষণে যে অনকেলটমের নামে এই পুস্তকের নামকরণ হইয়াছে, সেই অনকেলটমের বিষয় বর্ণনা করিতে প্রবৃর্ত্ত হইলাম, তিনি জেট ফলের ন্যায় কৃষ্ণবর্ণ কাফ্রিকুলজাত ছিলেন, শিলবাই নামক একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন, যাঁহার নিকট ইলাইজা ও হারি প্রথমে ছিলেন, টম তাহারি একজন ক্রীত দাস, ঐ ধনাঢ্য ব্যক্তির বিস্তর ভূমি সম্পত্তি থাকাতে কুষিকার্য্য সম্পাদনার্থে অনেক ক্রীত দাস রাখিয়াছিলেন, তন্মধ্যে টম খৃষ্ট ধর্ম্ম পরায়ণ এবং অন্যান্য দাসগণের প্রতি দয়াবান হওয়াতে সকল দাসেরা তাহাকে টমখুড়ো বলিয়া সম্বোধন করিত। এবং তাহার প্রভু সকলকেই সমভাবে দয়া করিতেন, কিন্তু টম তাঁহার সমস্ত বিষয় সাবধান পূর্ব্বক রক্ষণাবেক্ষণ করিতেন বলিয়া তাহাকে কিছু বিশেষ স্নেহ করিতেন, তিনি আপন প্রভুর প্রাসাদের নিকটে একটী কাষ্ঠের কুটির নির্ম্মাণ করিয়া বাস করিতেন, এবং তৎসম্মুখবর্ত্তী উদ্যানে আসেরিকা দেশ জাত নানাফল ফুলের ও লতাদির বৃক্ষ থাকাতে সেই স্থানের অতিশয় মনোহর শোভা সন্দর্শন হইত। এবং টমের স্বীয় বর্ণের ন্যায় কৃষ্ণবর্ণ একটী সহধর্ম্মিণী ছিল, যাহার নাম লূ। তিনি শিলবাই সাহেবের সূপকারিণী এবং পাঠকগণেরও স্মরণ থাকিতে পারে যে, এই সূপকারিণীই ইলাইজার অন্বেষণার্থে বণিকের যাত্রা কালে রন্ধন করিতে বিলম্ব করিয়াছিলেন। যাহা হউক, অনকেলটম দুইটী পুত্র ও একটী কন্যা লইয়া ভার্য্যাসহ কুটিরে সুখস্বচ্ছন্দে কাল যাপন করেন। এবং তিনি খৃষ্টধর্ম্ম পরায়ণ ছিলেন। তন্নিমিত্তে যখন তিনি ঈশ্বরোপাসনা ও ধর্ম্ম পুস্তকের গীত সকল গান করিতেন, তখন ঐ স্থানের দাসনীচয়েরা তচ্ছ্রবণার্থে তাহার কুটিরে আগমন করিত। যে হেতুক দাসগণের অন্য কোন ধর্ম্ম মন্দির ছিল না। আমেরিকা দেশস্থ ভদ্রলোকেরা দাসগণের সহিত একত্রে ঈশ্বরোপাসনা করিত না। দাসেরা তাহাদিগের সমীপে অতি অধম বলিয়া পরিগণিত হইত।
অধুনা শিলবাই সাহেবের একটী গুণবান্ সন্তান ছিল, যাঁহার নাম জর্জ শিলবাই। তিনি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা প্রদান করিয়া বিস্তর পুরস্কার প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। তিনি অনকেলটমকে অতিশয় ভাল বাসিতেন। প্রতিদিন সদ্যার সময় তিনি কুটীরে আগমন করত টমকে লিখাইতেন এবং উত্তম উত্তম পুস্তক অধ্যয়ন করাইতেন। টমের অত্যন্ত ইচ্ছা ছিল যে, তিনি ধর্ম্মপুস্তক উত্তমরূপে পাঠ করিতে পারেন এবং তাহার সহধর্ম্মিণী লূ, সুপকারিণী জর্জশিলবাইয়ের নিমিত্তে অতি সুখাদ্য দ্রব্য সকল রন্ধন করিয়া দিতেন এবং যখন তিনি টমকে শিক্ষা প্রদানার্থে তথায় গমন করিতেন, তখন সন্তান গুলিন পরিবেষ্টিতা হইয়া তাহাকে রন্ধন করিতে দেখিয়া অতিশয় প্রীতি পাইতেন, কিন্তু কি দুঃখের বিষয়, এরূপ সুখের অবস্থা বিস্তর দিন রহিল না। যে হেতুক শিলবাই সাহেবের প্রচুর অর্থ না থাকাতে এক জন ক্রীতদাস ব্যবসায়ির নিকটে কিছু টাকা ধার করিয়াছিলেন, তাহার পরিশোধের জন্য পূর্ব্বে হারিকে বিক্রয় করেন। পরে অবশিষ্ট টাকা শোধের কারণ টমকে বিক্রয় করিলেন। হায়! যে কুটীরস্থ পরিবার সকলকে সন্দর্শন করিলে নেত্র সুশীতল হইত, এক্ষণে কি বিষাদিত ঘটনা সমুপস্থিত হইল।