টম্‌ খুড়ো/টমের বিক্রয় শ্রবণ করিয়া তাহার ভার্য্যার খেদ

টমের বিক্রয় শ্রবণ করিয়া তাহার ভার্য্যার খেদ।

 পরে শীত কালের কর্ম্ম সকল সমাধা হইয়াছে, এমত সময়ে টম শ্রবণ করিলেন, যে তিনি বিক্রীত হইয়াছেন, এবং তদীয় ভার্য্যার এ বিষয়টি কর্ণগোচর হওয়াতে অতিশয় ক্রন্দন করিতে লাগিলেন। তদ্দর্শনে টমের কপোলদেশ নয়ননীরে ভাসমান হইল। এইরূপ বিলাপ করিতে করিতে তাহার ভার্য্যা কহিল, হায়! এত দিনের পর আমার কি দুর্দ্দশা ঘটিল, অনাথিনী হইয়া এ জগতে কেমন করিয়া বাস করিব। আহা! সন্তান গুলিন তোমার অদর্শন হেতু কাতর হইলে কি বলিয়া প্রবোধ দিব? তুমিই বা তাহাদিগকে ছাড়িয়া কিরূপে প্রাণ ধারণ করিবে? জগদীশ্বরের কাছে কতই অপরাধ করিয়াছি, তাহাই তিনি আমাদিগকে এত দূর্ব্বিষহ দুঃখ দিতেছেন। এতাদৃশ দুর্ঘটনার অব্যবহিত পূর্ব্বেই এ অভাগিনীর মৃত্যু হইলে ভাল হইত। তোমার ওমুখ আর কস্মিন কালে দেখিতে পাইব না, তুমিও আর পুস্তক অধ্যয়ন করিতে পাইবে না, যে হেতুক কল্য প্রভাতে দুষ্ট বণিক তোমাকে দুর দেশে লইয়া যাইবে। যাহা হউক, টমের কুটির ক্ষুদ্র বটে, কিন্তু সপরিবারে সাতিশয় প্রণয়ে কাল যাপন করিতেন। তদীয় গাত্র কৃষ্ণবর্ণ ছিল, কিন্তু তাহার অন্তঃকরণ অতি নির্ম্মল এবং চরিত্র অতি সাধু, সর্ব্বদাই ঈশ্বরোপাসনায় তৎপর থাকিতেন, তথাচ এমন ব্যক্তি দেশাচার বশতঃ বিক্রীত হইল? যখন তাহার সহধর্ম্মিণী এরূপ বিলাপ করিতেছিলেন, তখন তাহার সন্তান গুলিন নিদ্রাবস্থায় ছিল। টম আপন দুঃখিতা ভার্য্যাকে সান্ত্বনা করণ জন্য বিস্তর প্রবোধ বাক্য বলিতে লাগিলেন। হে প্রিয়া লূ! আমি বিক্রীত হইয়াছি বলিয়া তুমি আর অনুতাপ করিও না। সন্তানগুলিকে লইয়া নিরাপদে এখানে বাস কর। আমাদিগের এ বিচ্ছেদ অতিসামান্য। কিছু দিনের জন্য দুরে থাকিব বটে, কিন্তু মানবলীলা সম্বরণান্তে স্বর্গে গমন করিলে পুনরায় আমাদিগের মিলন হইবে। হারিকে লইয়া ইলাইজা যেরূপ পলায়ন করিয়াছিলেন, টমও সেইরূপ পলায়ন করিতে পারিতেন। পরন্তু শিলবাই সাহেব ক্রীত দাস ব্যবসায়ির কতকগুণ্ডলিন টাকা কর্জ্জ করিয়াছিলেন, কি জানি সেই টাকা পরিশোধের জন্য যদি তদীয় ভার্য্যা বা সন্তানদিগকে বিক্রয় করে, এই আশঙ্কায় পলায়ন না করিয়া চুপ করিয়া রহিলেন। যখন ক্রীতদাস ব্যবসায়ি টমকে লইয়া যায়, তখন তাহার সহধর্ম্মিণীও সন্তানগুলিন বিস্তর ক্রন্দন করিতে লাগিলেন, এবং অন্যান্য দাসগণেরা তা হার বিচ্ছেদে সাতিশয় দুঃখার্ণবে নিমগ্ন হইলেন।