টম্ খুড়ো/হারিকেলইয়া ইলাইজার পলায়নের উদ্যোগ
ইলাইজা এইরূপ পলায়ন করিবার অব্যবহিত পূর্ব্বে কাগজ ও পেনশীল লইয়া কৃতজ্ঞতা সুচক একখানি পত্র লিখিয়া ঐ বাটীর কর্ত্রীর নামে শিরোনামা দিয়া গৃহ মধ্যে রাখিলেন। যে হেতুক ঐ কত্রী হারির বিক্রয় নিবারণে জন্য বিস্তর চেষ্টা পাইয়াছিলেন, কিন্তু কৃতকার্য হন নাই। ঐ পত্রের তাৎপর্য এই, যে হে কৃপাময়ী কর্ত্রী! এরূপ পলায়ন করাতে আমাকে কৃতঘ্ন বা নিষ্ঠুর বোধ করিবেন না। আমার তনয়কে উদ্ধার করণ হেতু এরূপে পলায়ন করিতেছি, ভবদীয় দয়ার্দ্র চিত্ত নিবন্ধন জগদীশ্বর তোমাকে ইহকালে সুখস্বচ্ছন্দে রাখুন, এবং পরকালেও পুরস্কার করুন, পরে ইলাইজা আপন সন্তান জন্য মঞ্জুষা হইতে কতকণ্ডলিন বসন সংগ্রহ করত স্বীয় কক্ষ দেশে দৃঢ়রূপে বন্ধন করিলেন। হায়! বাৎসল্য স্নেহের কি প্রভাব, এরূপ ভয়ানক সময়েও তদীয় বালকের কয়েকটি মনোরম্য পুত্তলিকা লইতে বিস্মরণ হয়েন নাই। হারি তৎকালে নিদ্রাবস্থায় তাহার কেশ সকল লোলিত হইয়া বদনে পতিত এবং আস্য অর্দ্ধ বিকসিত প্রায় ক্ষুদ্র করদ্বয়, শয্যার বহির্ভাগে রহিয়াছিল, এমত সময়ে তদীয় জননী বলিতে লাগিলেন, হে বৎস্য! তোমাকে বিক্রয় করিয়াছে, অনতি বিলম্বেই লইয়া যাইবে, কিন্তু এ অভাগিনী, তোমার উদ্ধার জন্য উদ্যোগ পাইবে। এবম্বিধ কৃতস্থির অধ্যবসায় স্বীয় সুষুপ্তি শৈশব সন্তানকে জাগরিত করিলেন, এবং আপনি আপন বসন পরিধান করিয়া তাহাকেও জামা ও টুপি পরিতে কহিলেন, মাতার এইরূপ আহ্বানে বালকের নিদ্রাভঙ্গ হইল, এবং তৎক্ষণাৎ গাত্রোত্থান করত বাল স্বভাব বশতঃ কতিপয় কাষ্ঠ নির্ম্মিত পক্ষী লইয়া খেলা করিতে আরম্ভ করিল, এবং খেলিতে খেলিতে বলিলেন, হে মাত! কোথায় গমন করিতে হইবে? বালকের আস্যবিগলিত এই শব্দটি শ্রবণ করিবামাত্র ইলাইজা শিশু সমীপে যাইয়া, ক্ষণেককাল তাহার মুখের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া কহিলেন, রে বাছা! চুপ কর, এরূপ উচ্চৈঃস্বরে কথা কহিও না, যদ্যপি পার্শ্ববর্ত্তী গৃহের লোকেরা আমাদিগের কথাবার্ত্তা শ্রবণ করে, তাহা হইলে তোমার উদ্ধার বিষয়ে অনেক ব্যাঘাত জম্মাইবে, এবং সেই নৃশংস তোমার অভাগিনী মাতার কোল শূন্য করিয়া লইয়া যাইবে। তজ্জন্য আমি তোমাকে অগ্রে লইয়া পলায়ন করিব, তখন সজল নয়নে জগদীশ্বরের প্রার্থনা করিতে লাগিলেন, হে সর্ব্বকরুণাকর জগৎ পিত! আমি যেন হারির উদ্ধার বিষয়ে কৃতকার্য্য হই।