টম্ খুড়ো/সন্তানের বিক্রয় জন্য ইলাইজার খেদ
বৎস! ঈদৃশ দশা সম্পন্ন হইলে তোমার দুঃখের আর পরিসীমা থাকিবে না, আমি কি অভাগিনী কঠিন হৃদয়া যে আমি জীবিতা থাকিয়া তোমার এই দুর্ব্বিষহ দুঃখ দেখিলাম, তুমি কেন এতাদৃশী দুর্ভাগা কামিনীর উদরে জন্ম পরিগ্রহ করিয়া ছিলে, হায়! তোমার দুঃসহ যন্ত্রণার সময়ই বা কে যন্ত্রণাপনোদনে যত্নশীল হইবে; প্রয়োজনীয় দ্রব্য সমূহের প্রয়োজন হইলেই বা কে প্রদান করিবে? পীড়ায় অভিভূত হইলে কে তোমাকে ভেষজ সেবন করাইয়া সুস্থ করিবে? এবং কোন দুঃখে আকুল হইলে কাহাকে মা বলিয়া ডাকিবে? কে তোমার মুখপানে চাহিয়া আহার প্রদান করিবে? আমি আর তোমার প্রদোষকালীন শ্রোত্রসুখদ মধুরময় ঈশ্বরোপাসনা শুনিতে পাইব না। তোমার বদন চন্দ্রিমা আর কস্মিনকালে দেখিতে পাইব না। তোমার কমলাস্য বিনির্গত পীযুষ মাথা মা বোল শব্দে শ্রুতিপাত করিব না। এই সমস্ত ব্যাপার চিন্তা করিয়া আমার হৃদয় বিদীর্ণ হইতেছে। অসু দেহপরিহারে একান্ত সমুৎসুক হইতেছে, জীবন তৃষ্ণা বলবতী বলিয়াই পরিত্যাগ করিতেছে না। হে বজ্র! তুমি ধরাতলে পতিত হইয়া নির্দ্দোষি মহীরুহ কদম্বকে দগ্ধ ও বিনষ্ট কর, পরন্তু আমার মস্তকে কেন বিনিপাতিত হওনা? হে বসুন্ধরে; তুমি দ্বিধা হও, তোমার অভ্যন্তরে প্রবেশ করি, আর এ দাসত্ব শৃঙ্খলের দুঃখ সহ্য হয় না।
হে জগদীশ্বর! তোমার কাছে কত অপরাধিনী হইয়াছি তন্নিবন্ধন আমাকে আজন্মাবধি দাসত্ব নিগড়ে বদ্ধ রাখিয়াছ। এ দুঃখিনীর দুঃখের কথা কি বলিব, নয়ননীরে ভাসমান হইয়া দিন যামিনী অতিবাহন করিতে হয়। আবার একি বিড়ম্বনা, যে সন্তানের মুখাবলোকন করিয়া সকল দুঃখ নিবারণ করি, সেই হৃদয় সর্ব্বস্ব বাছাধনকে অপহরণ করিয়া লইয়া যাইবে, হা বিধাতঃ! তোমার মনে কি এই ছিল, দিনাবশেষে বাছাকে অঙ্কে ধারণপূর্ব্বক শ্রমাপনোদন করি, এবং মুখ চুম্বন করিয়া তাপিত শরীর জুড়াই। একবার ভাবি, হলাহল পান করিয়া তনু ত্যাগ করি, আরবার মনে করি, ইহকালে ঈদৃশী দশা সম্পন্না হইয়াছি, আবার আত্মঘাতিনী হইয়া কেন পারলৌকিক সুখে বঞ্চিত হইব, যে হেতুক আত্মঘাতি ব্যক্তিরা অবশেষে নিরয়গামী হয়। এইরূপ চিন্তা করিতে করিতে তামসী বিভাবরী সমুপস্থিতা চতুর্দ্দিগ অন্ধকারে আবৃত এবং গগনমণ্ডল তারকাস্তবকে বিমণ্ডিত হইল। পরে নিবিড় কুজ্ঝটিকা ও তুষারে পথ ঘাট আচ্ছন্ন করিলে নিঃশব্দ রজনীতে স্বীয় সন্তানটিকে ক্রোড়ে লইয়া প্রস্থান করিয়া যেরূপে পলায়ন করিয়াছিলেন, তাহা পাঠকগণ ক্রমশঃ নিস্নস্থ ইতিহাস পাঠ করিলেই জানিতে পারিবেন।