টুনটুনির বই/পিঁপড়ে আর হাতি আর বামুনের চাকর
এক পিঁপড়ে ছিল আর তার পিঁপড়ী ছিল, আর তাদের দুজনের মধ্যে ভারী ভাব ছিল।
একদিন পিঁপড়ী বললে, ‘দেখ পিঁপড়ে, আমি যদি তোমার আগে মরি, তবে কিন্তু তুমি আমাকে গঙ্গায় নিয়ে ফেলবে। কেমন পিঁপড়ে, ফেলবে তো?’
পিপড়ে পিপড়ীকে কাঁধে করে নিয়ে গঙ্গায় চলল। [পৃঃ ১২১
পিঁপড়ে বললে, ‘হ্যাঁ পিঁপড়ী, অবশ্যি ফেলব। আর আমি যদি তোমার আগে মরি, তবে কিন্তু তুমি আমাকে গঙ্গায় নিয়ে ফেলবে। কেমন পিঁপড়ী, ফেলবে তো?’
পিঁপড়ী বললে, ‘তা আর বলতে, অবশ্যি ফেলব।’
এমনি দুজনের কথাবার্তা হয়েছে, তারপর একদিন পিঁপড়ী মরে গেল। তখন পিঁপড়ে অনেক কাঁদল, তারপর ভাবল, ‘এখন পিঁপড়ীকে তো নিয়ে গঙ্গায় ফেলতে হয়।’
এই ভেবে সে পিঁপড়ীকে কাঁধে করে নিয়ে গঙ্গায় চলল; সেখান থেকে গঙ্গা অনেক দূরে, যেতে অনেক দিন লাগে। পিঁপড়ে পিঁপড়ীকে নিয়ে সমস্ত দিন চলল। তারপর যখন সন্ধ্যে হল, তখন সে দেখল যে সে রাজার হাতিশালে এসেছে—সেই যেখানে তাঁর সব হাতি থাকে। পিঁপড়ের বড্ড পরিশ্রম হয়েছিল, তাই সে পিঁপড়ীকে নিয়ে সেইখানে বসে বিশ্রাম করতে লাগল। সেইখানে মস্ত একটা হাতি বাঁধা ছিল, সেটা রাজার পাটহস্তী। হাতিটা শুঁড় নাড়ছিল, আর ফোঁস-ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলছিল, আর তাতে পিঁপড়ীকে সুদ্ধ পিঁপড়েকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কাজেই পিঁপড়ে রেগে বললে, ‘খবরদার!’ হাতি কিন্তু তা শুনতে পেল না। সে আবার নিশ্বাস ফেললে, আবার তাতে পিঁপড়েকে উড়িয়ে লিল। তাই পিঁপড়ে আরো রেগে খুব চেঁচিয়ে বললে, ‘এইযো! খবরদার! ভালো হবে না কিন্তু! হতভাগা, পাজী!’
হাতি ভাবলে, ‘ভালোরে ভালো, ওখান থেকে কে আমায় চিঁঁ চিঁ করে গাল দিচ্ছে? আমি তো কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।’ এই বলে সে তার পা দিয়ে সে জায়গাটা ঘষে দিলে!
পিঁপড়ের তো এখন ভারী বিপদ। সে ভাবলে, ‘মাগো, এই বুঝি পিষে গেলুম!’ কিন্তু তারপরেই সে দেখলে যে সে পিষে যায়নি, হাতির পায়ের তলায় যে ছোট ছোট গর্ত থাকে তারই একটায় ঢুকে সে বেঁচে গিয়েছে, আর পিঁপড়ীকেও ছাড়েনি!
তখন আর তার আনন্দ দেখে কে? সেই গর্তের ভিতরে বসে সে হাতির পায়ের মাংস খুঁড়ে খেতে লাগল। যতক্ষণ না সে পিঁপড়ীকে নিয়ে একেবারে হাতির মাথার ভিতরে গিয়ে ঢুকেছিল ততক্ষণ সে খুঁড়তে ছাড়েনি।
হাতির কিন্তু তাতে ভারী অসুখ হল। সে খালি মাথা নাড়ে, আর চ্যাঁচায় আর পাগলের মতন ছুটোছুটি করে। সকলে বললে, ‘হায়-হায় হাতির কি হল?’ তারা কেউ জানে না যে, হাতির মাথায় পিঁপড়ে ঢুকেছে। যদি জানত আর হাতির পায়ের তলায় খুব করে চিনি মাখাত, তাহলে সেই চিনির গন্ধে পিঁপড়ে তখুনি বেরিয়ে আসত। কিন্তু তারা তো আর তা জানে না! তারা বদ্যি ডাকল, ওষুধ খাওয়াল, আর তাতে হাতি মরে গেল।
সেদিন রাত্রে রাজামশাই স্বপ্ন দেখলেন যে, তার হাতি যেন এসে তাঁকে বলছে, ‘মহারাজ, তোমার জন্যে আমি অনেক খেটেছি আমাকে নিয়ে গঙ্গায় ফেলবে।’
সকালে ঘুম থেকে উঠেই রাজামশাই হুকুম দিলেন, ‘আমার হাতিকে নিয়ে গঙ্গায় ফেলতে হবে।’
তখুনি তিনশো লোক সেই হাতির পায়ে মোটা দড়ি বেঁধে, তাকে ‘হেঁইয়ো! হেঁইয়ো!’ করে টেনে নিয়ে গঙ্গায় চলল। ভয়ানক বড় হাতি, তাকে টানা মুশকিল। সেই লোকগুলি তাকে নিয়ে খানিক দূরে যায়, আর দড়ি ছেড়ে দিয়ে বসে হাঁপায়।
আমি ওটাকে একলাই নিয়ে যেতে পারি।
এমন সময় হয়েছে কি—সেইখান দিয়ে এক বামুনঠাকুর যাচ্ছেন, তাঁর সঙ্গে এক চাকর। সেই লোকগুলিকে বসে হাঁপাতে দেখে সেই চাকরটা বললে, ‘ইঁদুরের মতো একটা হাতি, তাকে টানতে গিয়ে তিনশো লোক হাঁপাচ্ছে! আমি হলে ওটাকে একলাই নিয়ে যেতে পারি।’
এ কথা শুনেই তো সেই তিনশো লোক লাফিয়ে উঠল। তারা বললে, ‘কি, এত বড় কথা! আমরা তিনশো লোক যা পারছিনে তুই একলাই তা করতে পারবি? আচ্ছা, এর বিচার না হলে তো আমরা আর হাতি টানছি না। চল বেটা, রাজার কাছে চল, দেখব তুই কেমন জোয়ান!’
তাতে সেই চাকর বললে, ‘আচ্ছা চল না! আমি কি তোদের মতো জোয়ান?’
তখন মাঠে হাতি ফেলে রেখে তারা সকলে রাজার কাছে এসে বললে, ‘দোহাই রাজামশাই, এর বিচার হয়! আমরা তিনশো লোক আপনার হাতি
লাঠিসুদ্ধ সেই পুঁটুলি কাঁধে ফেলল! [পৃঃ ১২৪ টেনে হাঁপিয়ে গেলুম, আর এই বেটা বলছে কিনা সে একলাই সেটা নিয়ে যেতে পারে। এর বিচার না হলে আপনার হাতি ছোঁব না।’
একথা শুনে রাজামশাই বামুনের চাকরকে বললেন, ‘কি রে, সত্যি কি তুই ঐ হাতি একলা নিয়ে যেতে পারিস?’
চাকর জোড়হাতে নমস্কার করে বললে, ‘মহারাজের যদি হুকুম হয়, তলে পারি বৈকি। কিন্তু আগে আমাকে পেট ভরে চারটি খেতে দিতে হবে।’
রাজা বললেন, ‘দাও তো ওকে এক সের চাল আর ডাল তরকারি। আগে পেট ভরে খেয়ে নিক, তারপর হাতি নিয়ে যেতে হবে।’
তাতে সে চাকর হেসে বললে, ‘মহারাজ, এক সের চাল তো ঝাড়ুওয়ালারা খায়—তাতে কি হাতি টানা চলে?’
রাজা বললেন, ‘তবে তুই কি চাস?’
চাকর বললে, ‘মহারাজ, বেশী আর কি চাইব?—এই মণ দুই চাল, দুটো খাসী তার এক মণ দই হলেই চললে।’
রাজা বললেন, ‘আচ্ছা তাই পাবি, কিন্তু খেতে হবে সব।’
চাকর বললে, ‘যে আজ্ঞে, মহারাজ!’
বামুনের চাকর সেই দু মণ চালের ভাত আর দুটো খাসী, আর এক মণ দই দিয়ে পেট ভরে খেয়ে তো আগে খুব এক চোট ঘুমিয়ে নিল। তারপর নিজের গামছাখানি দিয়ে সেই হাতিটাকে জড়িয়ে, বেশ করে একটি পুঁটুলি বাঁধল। তারপর পুঁটুলিটিকে লাঠির আগায় ঝুলিয়ে, সে লাঠিসুদ্ধ সেই পুঁটুলি কাঁধে ফেলল। তারপর গণ্ডা দশেক পান মুখে গুঁজে গান গাইতে গাইতে গঙ্গায় চলল। তা দেখে রাজামশাই হাঁ করে রইলেন, তার তিনশো লোক হাঁ করে রইল, আর সকলে ছুটে বাড়িতে খবর দিতে গেল।
ততক্ষণে সে চাকর অনেক দূরে চলে গিয়েছে, আর খুব চনচনে রোদ উঠেছে। আরো অনেক দূর গিয়ে চাকর বললে, ‘উঃ! কি ভয়ানক রোদ! আমার গলাটা বড্ড শুকিয়ে গেছে, একটু জল খেতে পেলে হত!’
বলতে-বলতেই সে দেখল যে খানিক দূরে একটি পুকুর রয়েছে, সেই পুকুরের ধারে গাছপালার আড়ালে একটি কুঁড়ে ঘর। চাকরটি পুকুরের ধারে তার পুঁটলিটি রেখে, সেই ঘরের কাছে গিয়ে দেখলে সেখানে একটি ছোট মেয়ে বসে আছে।
সে সেই মেয়েটিকে বললে, ‘বাছা, আমার বড্ড তেষ্টা পেয়েছে, একটু জল খেতে দেবে?’
মেয়েটি বললে, ‘মোটে এক জালা জল আছে। তোমাকে যদি দিই, তবে বাবা মাঠ থেকে এসে কি খাবেন?’
একথা শুনে চাকর রেগে বললে, ‘বটে! তুই একটু জল খেতে দিবিনে? আচ্ছা, দেখি এরপর তোরা কোত্থেকে জল খাস।’
এই বলে সে সেই পুকুরে নেমে, চোঁ-চোঁ করে তার জল খেতে লাগল। যতক্ষণ সেই পুকুরে জল ছিল, ততক্ষণ খালি চোঁ-চোঁ শব্দ শোনা গিয়েছিল। দেখতে দেখতে সে সেই এক পুকুর জল খেয়ে শেষ করল! জল খেতে-খেতে তার পেটটা ফুলে আগে ঢাকের মতো হল, তারপর হাতির মতো হল, শেষে একেবারে পাহাড়ের মতো হয়ে গেল। এমনি করে পুকুরের সব জল খেয়ে বামুনের চাকর দেখল যে, সে জল আর কিছুতেই তার পেটে থাকতে চাচ্ছে না। তখন সে আর কি করবে, তাড়াতাড়ি একটা বটগাছ গিলে ফেললে। সেই বটগাছ তার গলার মাঝামাঝি গিয়ে ছিপির মতো আটকে রইল—জল আর বেরুতে পারল না।
তারপর বামুনের চাকর খুব খুশী হয়ে, সেই পুকুরের ধারে শুয়ে বিশ্রাম করতে লাগল। তার পেটটা তালগাছের চেয়েও উঁচু হয়ে উঠল, যেন একট পাহাড়। সেই মেয়েটির বাপ তখন মাঠে কাজ করছিল। সে সেই পাহাড়ের মতো পেট দেখে ভাবল, ‘বাবা, না জানি ওটা কি!’ বলে সে তাড়াতাড়ি বাড়িতে ছুটে এল।
সে বাড়িতে আসতেই তার মেয়ে বললে, ‘বাবা, বাবা, দেখ কি দুষ্টু লোক! আমার কাছে জল চেয়েছিল। ঘরে এক জালা বই জল নেই, ওকে দিলে তুমি এসে কি খাবে? তাই আমি জল দিইনি বলে আমাদের পুকুরের সব জল খেয়ে ফেলেছে।’
বলতে-বলতে তারা দুজনে সেই চাকরের কাছে এল। সেখানে এসে সে মেয়েটি ভয়ানক নাক সিঁটকিয়ে বললে, ‘উঃ হুঁ হুঁ! কি গন্ধ! দেখ বাবা, একটা পচা ইঁদুর না কি পুঁটুলিতে বেঁধে এনেছে?’
এই বলে সে এক হাতে নাকে কাপড় দিয়ে, আর এক হাতের দু-আঙুলে সেই হাতিসুদ্ধ পুঁটুলিটা ছুঁড়ে ফেলে দিল। সে পুঁটুলি পড়ল গিয়ে একেবারে সেই গঙ্গায়।
আর মেয়ের বাপ করেছে কি! কষে কোমর বেঁধে মুখ খামাটি করে মেরেছে বামুনের চাকরের পেটে এক লাথি! সে কি যেমন তেমন লাথি! লাথির চোটে, সেই বট গাছের ছিপিসুদ্ধ তার পেটের সব জল বেরিয়ে ঘর-বাড়ি, জিনিস-পত্র মেয়ে-টেয়ে একেবারে ভাসিয়ে নিয়ে গেল! বাকি রইল খালি মেয়ের বাপ আর বামুনের চাকর। তখন তারা দুজনে মিলে কোলাকুলি করতে লাগল।
কোলাকুলি শেষ হলে সেই মেয়ের বাপ বললে, ‘আরে ভাই, তোর মতন জোয়ান তো তার কোথাও দেখিনি! এক পুকুর জল খেয়ে সব শেষ করলি!’
বামুনের চাকর বললে, ‘ভাই, তোর মতন জোয়ানও তো আমি তার কোথাও দেখিনি। এক লাথিতে আমার পেট হালকা করে দিলি।’
এই কথা নিয়ে তখন তাদের মধ্যে ভারী তর্ক আরম্ভ হল। এ বলে তুই বেশী জোয়ান, ও বলে তুই বেশী জোয়ান। এখন কার কথা ঠিক, তা কে বলবে!
অনেক তর্ক করে তারা এই ঠিক করলে, ‘চল একটা খুব বড় বাজারে গিয়ে দুজনে কুস্তি লড়ি, তাহলেই দেখা যাবে কে বেশী জোয়ান!’
এই বলে তারা দুজন কুস্তি লড়তে বাজারে চলেছে, এমন সময় এক মেছুনীর সঙ্গে তাদের দেখা হল। মেছুনী ঝুড়িতে করে মাছ নিয়ে বাজারে বেচতে যাচ্ছিল। তাদের দুজনকে দেখে জিজ্ঞেস করলে, ‘হ্যাঁ, গা, তোমরা কোথায় যাচ্ছ?’
তারা বললে, ‘বাজারে যাচ্ছি, কুস্তি লড়তে।’
তা শুনে মেছুনী বললে, ‘বাজার তো ঢের দূর বাছা, এত কষ্ট করে তোরা সেখানে যাবি কি করতে? তার চেয়ে আমার ঝুড়ির ভিতর এসে কুস্তি কর। কুস্তি করতে-করতে যার দিকে ঝুড়ি ঝুঁকে পড়বে, আমি জানব তারই হার হয়েছে।’
শুনে তারা দুজনে বললে, ‘বাঃ, বেশ কথা! কুস্তিও করতে পাব, হাঁটতেও হবে না।’
এই বলে তারা মেছুনীর ঝুড়িতে ঢুকে কুস্তি আরম্ভ করল, আর মেছুনী সেই ঝুড়ি মাথায় করে বাজারে চলল।
এমন সময়ে এক কাণ্ড হয়েছে। সেই দেশে এক সর্বনেশে চিল থাকত। সে গরু, মহিষ, হাতি, ঘোড়া, যা পেত তাই ধরে গিলত। খালি সেই মেছুনীর কাছে সে জব্দ ছিল। মেছুনীর ঝুড়ি ধরতে এলেই, মেছুনী তাকে এমনি বকুনি দিত যে, সে পালাবার পথ পেত না। কিন্তু তাতে তার রাগ আরও বেড়ে যেত আর সে ভাবত যে, যেমন করেই হোক একদিন ঐ ঝুড়িটা কেড়ে নিতে হবে।
সেদিনও সেই চিল খাবার খুঁজতে বেরিয়েছে, দূর থেকে তার পাখার শোঁ-শোঁ শব্দ শোনা যাচ্ছে।
এক গোয়ালা সাতশো মোষ মাঠে চরাতে এনেছিল। সে সেই শব্দ শুনে ভাবলে, ‘সর্বনাশ। ঐ সেই চিল আসছে, আমার মোষ খেয়ে ফেলবে। এখন কি করি?’
এই ভেবে গোয়ালা সেই সাতশো মোষ ট্যাঁকে গুঁজে নিয়ে, ভোঁ-ভোঁ করে বাড়ির পানে ছুটল।
বাড়ির লোকে জিগগেস করল, ‘কি হয়েছে? অত যে ছুটে এলে?’
সে বললে, ‘ছুটব না। চিল আসছে যে, আমার মোষ খেয়ে ফেলবে।’
তারা বললে, ‘তবে মোষ কোথায় রেখে এলে?’
সে বললে, ‘রেখে আসব কেন? সঙ্গে এনেছি।’
তারা বললে, ‘তবে কই মোষ?’
সে বললে, ‘এই দেখ না।’
বলে সে ট্যাঁক খুলে দিল, আর সাতশো মোষ তার ভিতর থেকে বেরিয়ে এল।
তা দেখে তারা খুব খুশী হয়ে বললে, ‘ভাগ্যিস তুমি ট্যাঁকে করে নিয়ে এসেছিলে, নইলে আজ সব মোষ খেয়ে ফেলত।’
} সেই চিল তো খাবার খুঁজতে বেরিয়েছে, আর মেছুনীর ঝুড়ির ভিতরে থেকে দুই পালোয়ান কুস্তি লড়ছে। মেছুনী খালি তাদের কথাই ভাবছে, চিলের কথা আর তার মনে নেই। ঠিক এমনি সময় চিল তাকে দেখতে পেয়ে ছোঁ মেরে তার মাথা থেকে ঝুড়ি নিয়ে পালাল।
সেই দেশের রাজার মেয়ে ছাতে বসেছিলেন। দাসী তার চুল আঁচড়ে দিচ্ছিল।
রাজার মেয়ে আকাশের দিকে চেয়ে দেখছেন, এমন সময় তার চোখে কি যেন পড়ল।
রাজার মেয়ে চোখ বুজে বললেন, ‘দাসী, দেখ দেখ, আমার চোখে কি পড়েছে।’
দাসী কাপড়ের কোণ পাকিয়ে, তাতে থুথু লাগিয়ে, তাই দিয়ে রাজকন্যার চোখের ভিতর থেকে ভারী চমৎকার একটি ছোট্ট কালো জিনিস বার করলে।
রাজকন্যা বললেন, ‘কি সুন্দর! কি সুন্দর। দাসী, এটা কি?’
দাসী বলতে পারলে না সেটা কি। বাড়ির ভিতরের সকলে দেখলে, কেউ বলতে পারলে না সেটা কি। রাজা এলেন, মন্ত্রী এলেন, তাঁরাও বলতে পারলেন না সেটা কি।
তখন রাজা বড়-বড় পণ্ডিতদের ডাকিয়ে আনলেন।
তাঁদের কাছে এমন সব কল ছিল, যা দিয়ে পিঁপড়েটাকে হাতির মতন দেখা যায়। সেই কলের ভিতর দিয়ে দেখে তারা বললেন, ‘এটা তে দেখছি একটা ঝুড়ি, তার ভিতরে কতকগুলি মাছ আছে, আর দুজন লোক কুস্তি লড়ছে।’