ডিটেক্টিভ পুলিস (প্রথম কাণ্ড)/অবতরণিকা
ডিটেক্টিভ পুলিশ।
প্রথম কাণ্ড
অবতরণিকা।
এই কলিকাতা সহরের কোন বিমা আফিসের বড় সাহেব একদিবস একখানি বেনামী পত্র প্রাপ্ত হয়েন। ঐ পত্রের সারমর্ম্ম এইরূপ—“আপনাদিগের আফিসে ‘ডাক্তার বাবুর’ ভ্রাতার ত্রিশ হাজার টাকার জীবন বিমা আছে, ও ঐ বিমা ভ্রাতার নিকট হইতে ডাক্তার বাবু খরিদ করিয়াছেন। সম্প্রতি ভ্রাতার মৃত্যু হওয়ায় বিমার টাকা আদায় করিবার নিমিত্ত ডাক্তার বাবু নিশ্চয়ই আপনাদিগের নিকট গমন করিবেন। কিন্তু তাঁহার ভ্রাতার মৃত্যু সম্বন্ধে বিশেষরূপ অনুসন্ধান না করিয়া ঐ টাকা প্রদান করিলে, আপনারা নিরর্থক ক্ষতিগ্রস্ত হইবেন; কারণ, অনুসন্ধান করিলেই অবগত হইতে পারিবেন, তাঁহার ভ্রাতার মৃত্যু-সম্বন্ধে কিরূপ রহস্য বাহির হইয়া পড়ে।”
সাহেব এই বেনামী পত্র পাইয়া আমাদিগের সাহায্য গ্রহণ করিলেন। এই মৃত্যু-সম্বন্ধে যদি কোন প্রকার রহস্য প্রকাশিত হইয়া পড়ে বা তাঁহাদিগকে আইনানুসারে ঐ ত্রিশ হাজার টাকা প্রদান করিতে না হয়, তাহা হইলে অনুন্ধানকারী কর্ম্মচারীগণকে পাঁচ সহস্র মুদ্রা পারিতোষিক প্রদান করিবেন, এইরূপ অঙ্গীকারেও আবদ্ধ হইলেন। এখন বলিতে কিন্তু বড়ই লজ্জা হয় যে, তাঁহার ইচ্ছামত কার্য্য সম্পন্ন হইলেও পরিশেষে তিনি তাঁহার প্রতিজ্ঞা প্রতিপালন করিতে সমর্থ হয়েন নাই।
এই অনুসন্ধানের ভার ক্রমে আমারই হস্তে আসিয়া উপস্থিত হয়। আমি গোপনে ইহার অনুসন্ধান আরম্ভ করি। নানারূপ কৌশল ও ছল অবলম্বন করিয়া ডাক্তার বাবুরই পরিবারবর্গ ও আত্মীয় স্বজনের মধ্য হইতে সংবাদ সংগ্রহপূর্ব্বক তাঁহাকে রাজদ্বারে আনিয়া উপস্থিত করি। ডাক্তার বাবু এবার ৬ বৎসরের নিমিত্ত কঠিন পরিশ্রমের সহিত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েন।
যে সময়ে ডাক্তার বাবু জেলের ভিতর আবদ্ধ ছিলেন, সেই সময়ে কোন কার্য্যোপলক্ষে আমাকে জেলের ভিতর গমন করিতে হয়। সেই স্থানেই ডাক্তার বাবুর সহিত আমার সাক্ষাৎ হয়। ইতিপূর্ব্বে তাঁহার চরিত্র সম্বন্ধে অনুসন্ধান করিয়া আমি অনেক কথা অবগত হইতে পারিয়াছিলাম; সামান্য যে দুই একটী বিষয় আমি অবগত ছিলাম না, সেই দিবস তাহাও তাঁহার নিকট হইতে জানিয়া লই। সেই সকল বিষয় অবলম্বন করিয়া ডাক্তার বাবুর নিজের কথার ভাবে তাঁহার জীবন-চরিত লিখিত হইল। ডাক্তার বাবু যে, কিরূপ ভয়ানক লোক, এবং মনুষ্যের মধ্যে এইরূপে মহাপাপে কেহ লিপ্ত হইতে পারে কি না, এই প্রকৃত জীবন-চরিত পাঠ করিলেই পাঠকগণ তাহা উত্তমরূপে অবগত হইতে পারিবেন।