তরুণের স্বপ্ন/হিন্দু-মুসলমান প্যাক্ট
হিন্দু-মুসলমান প্যাক্ট
[হিন্দু-মুসলমান প্যাক্ট ও তাহার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আলোচনা প্রসঙ্গে লিখিত ইংরেজী চিঠির অংশবিশেষের বঙ্গানুবাদ]
আমি আপনাদের ইস্তাহার ও শ্রীযুক্ত সেনগুপ্ত লিখিত তাহার প্রতিবাদ-পত্র পাঠ করিয়াছি; এ পর্য্যন্ত সেনগুপ্তের প্রতিবাদের কোন প্রত্যুত্তর দেখি নাই। প্যাক্টকে পুনরায় গ্রহণ করিবার কথা উঠিতেই পারে না। গত সিরাজগঞ্জ সম্মিলনীতে যখন প্যাক্ট গৃহীত হয়, তখনও ইহার বিরুদ্ধে একদল মুক প্রতিবাদী ছিলেন এবং দেশবন্ধু তাহা জানিতেন; শুধু গোপনে নয়, প্রকাশ্যেও ৺দেশবন্ধু বার বার স্পষ্ট বলিয়াছিলেন, তাঁহার উদ্দেশ্য দেশের দুই সম্প্রদায়ের মিলনের একটা স্পষ্ট ভিত্তি স্থাপন করা।
এই জন্য উক্ত প্যাক্ট-এর দুই একটী অংশ বা বিধি যদি উদ্দেশ্যসাধনের পরিপন্থী বা গ্রহণের অযোগ্য বলিয়া বিবেচিত হয়, তাহা হইলে সেগুলির পরিবর্ত্তনে তাঁহার আপত্তি ছিল না। যতদূর স্মরণ আছে, তাহাতে মনে হয়, গত কোকনদ কংগ্রেসে তিনি এরূপও বলিয়াছিলেন, যে বেঙ্গল প্যাক্ট এখনই কংগ্রেস কর্ত্তৃক গৃহীত হোক, তিনি ইহা চান না। তাঁহার ইচ্ছা মাত্র এই ছিল যে, উক্ত প্যাক্ট যেন নিখিল-ভারত কংগ্রেস-কমিটি দ্বারা আলোচিত হয়।
কিন্তু তখন সমগ্র কংগ্রেস ইহার ঘোরতর বিরোধী ছিল এবং কংগ্রেসের সভ্যগণ তখন প্যাক্ট আলোচনা করিলেও স্বীকৃত হন নাই। কোকনদ কংগ্রেসের পর সিরাজগঞ্জ সম্মিলনীতে প্যাক্ট গৃহীত হয়। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। কিন্তু প্যাক্ট গ্রহণের পূর্ব্বেও দেশবন্ধু সকলকে এই আশ্বাস দিয়াছেন যে, তিনি প্যাক্ট সম্পর্কে কোনরূপ তর্ক বা আপোষের কথা শুনিবেন না, এরূপ নয়; বরং তিনি প্যাক্টএর কোনও কোনও অংশ বা বিধির পরিবর্ত্তন প্রয়োজন হইলে তাহা করিতে স্বীকৃত ছিলেন।
আমার এই জন্য মনে হয়, দেশবন্ধুর অনুরক্ত ভক্ত হইয়াও প্যাক্টএর কোনও কোনও অংশ পরিবর্ত্তন করিবার অধিকার দাবী করা যায়। সঙ্গে সঙ্গে আমি ইহাও মনে করি, মাত্র দেশবন্ধুকে লইয়া বা তাঁহার মৃত্যুর পর হাতজোড় করিয়া নিখিল-ভারত কংগ্রেস-কমিটির মুখ চাহিয়া বাঙ্গলার সমস্যার মীমাংসার জন্য বসিয়া থাকিলে চলিবে না। হিন্দু-মুসলমান-সমস্যা নিখিলভারতের দিক হইতে মীমাংসিত হইলেও বাঙ্গলার সমস্যা বাঙ্গালীকেই সমাধান করিতে হইবে।
সংবাদপত্র পাঠে যতদূর সম্ভব আমি বর্ত্তমান ঘটনাস্রোত অনুসরণ করিয়া কয়েকটী দৃঢ় ধারণা লাভ করিয়াছি। বর্ত্তমানের বিপদসঙ্কুল সময়ে আমাদের সর্ব্বাপেক্ষা বেশী অভাব—সকল বিষয়ে স্পষ্ট দূরদর্শিতা। ……ইতি—