বন্দী সারস

বন্দী সারস দাঁড়ায়ে আছে,
পিঞ্জরতলে আঙিনা মাঝে,
উড়ে যেতে তার মন চায়;
সাগর পার যাবে আবার,—
সে আশা এখন মিছে হায়।

এক পায়ে ভর করিয়া রহে,
বোজা চোখ দিয়ে সলিল বহে,
আর পায়ে ফিরে করে ভর;
বদল করে, ভাবিয়া মরে,
হায় অসহ্য অবসর!

কভু মাথা গোঁজে পাখার নীচে,
সুদূরের পানে তাকায়,—মিছে,—
প্রাচীরে ঘিরেছে চারিদিক;
নাহিক ফাঁক, শিলার থাক,
মিছে চেয়ে থাকা অনিমিখ।

আকাশের পানে আঁখি ফিরায়,
দেখে চেয়ে চেয়ে,—উড়িয়া যায়
স্বাধীন সারস দলে দল
দেখিতে দেশ; সে শুধু ক্লেশ
সহিছে, দহিছে অবিরল!

আজো ভুলে আছে মিছে আশায়,
ভাবে,—ফিরে পাখা গজাবে, হায়,
উড়িতে আবার হ'বে বল;
বন অগাধ ভ্রমিতে সাধ,
মন হয়ে উঠে চঞ্চল।

শ্যাম লাবণ্যে শরৎ হাসে,
সারসের দল আর না আসে,
পিঞ্জরে একা আছে সেই;
বন্দী পাখী অন্ধ আঁখি,
রন্ধ নেই একেবারেই।

আকাশের পথে কারা ও যায়!
পাখার শব্দ ধ্বনিছে, হায়,
কে যায় পাখায় করি’ ভর!
পাতিয়া কান শোনে সে তান
উড়ে চলে কোন্ নভচর।

মনের আবেগে উড়িতে চায়,
অক্ষম পাখা,—পড়িয়া যায়,
উঠিতে শকতি নাহি তার,
পাখায় আর সহে না ভার,
বেড়ে ওঠে শুধু হাহাকার।

হায় পাখী! মিছে ভরসা রাখা,
আর কি তোমার হ'বে গো পাখা?
হ’লেও সে,—লাভ নাহি তায়;
যতই হোক,—নিচুর লোক—
বারে বারে কেটে দিবে, হায়।

আরাণী।