তীর্থরেণু/বানর
একটা বানর বসেছিল সরল গাছের শাথে,
আমি ব’সে ভাবছিলাম ‘সে খায় কি? কোথায় থাকে?’
অলসভাবে ভাব্তে এবং চাইতে চাইতে ক্রমে,
কখন চক্ষু পড়্ল ঢুলে স্বপ্ন এল জমে।
স্বপ্নে দেখি বছে বানর “ওহে পোষাকধারী!
দেখ্ছ? আমার নেইক দর্জ্জি, নেই কোনো দিক্দারী,
মাসে মাসে নেই তাগাদা, পরিনে হ্যাট্কোট্,
নেইক নিত্য সান্ধ্য-সভায় নিমন্ত্রণের চোট।
বেণের ঘরে দিন দুপুরে রসদ কেড়ে খাই,
বেটা তবু বেজায় মোটা, আমি কাহিল, ভাই!
যাইনে কারো গাড়ীর পিছে, ঘরের হোক কি ঠিকে,
দিইনে নজর অন্য কোনো মর্কটের স্ত্রীর দিকে।
খোস্ পোষাকী নইকো মোটেই ঢাকিনে গা পর্দ্দায়,
বাংলো-বাড়ী নেইকো আমার ঘুমাই সুখে ফর্দ্দায়;
কিনিনে দস্তানা আংটি, চোখ ঠারিনে মনকে,
সুন্দরীদের জন্য পয়সা দিইনে হ্যামিল্টনকে।
দ্বন্দ করি নিজের মধ্যেই, ভার্য্যা এবং ভর্ত্তা,
বানর-গিন্নি স্পষ্ট জানেন আমিই তাঁহার কর্ত্তা।
ম্যালেরিয়ার ভয় করিনে, নেইক দেনার দায়,
মানুষ জাতটা দেখলে আমার বড্ড হাসি পায়।”
হঠাৎ জেগে দেখি আমার মাখন-মাখা রুটি
সংগ্রহ-না-ক’রে বানর যাচ্ছে গাছে উঠি।
মুখখানা তার রক্তবর্ণ গায়েতে লোম কত!
খেতে খেতে চুলকায় মাথা, ঠিক বানরের মত।
শিষ্ট সে নয়, সভ্য সে নয়, নেহাৎ হনুমান,
(তবু) সাদাসিধে বানর হ’তে চাইলে আমার প্রাণ!
বল্লাম তারে “ভদ্র বানর! কর্লেন অন্তর্যামী
খোস্ মেজাজী বানর তোমায়, আমায় কর্লেন আমি!
বিদায় বন্ধো! শনৈঃ শনৈঃ যাচ্চ আপন ঘরে,
ভুলনা, হায়, তুমি হতে ইচ্ছা করে নরে।”