তীর্থরেণু/মহাশঙ্খ
নিতান্ত হিম, অতি নির্জীব, কপাল-অস্থি ওরে,
মাের হাতে তুমি হ’য়েছ পরিস্কৃত;
ধৌত ধবল অমল তােমায় ক’রেছি যতন ক'রে
ঠায়ে ঠায়ে নাম লিখেছি সঙস্কৃত।
পাঠের বেলার সঙ্গী আমার! ওরে বিষন্ন! তােরে
কোণে ফেলে আমি রাখিতে কি পারি্, বল্,
সময় কাটে না, কাছে আয় তুই ভুলায়ে রাখিবি মােরে,
কথা বল্ ওরে বাড়িছে কৌতূহল।
বল্ মােরে আজ বল্ কতবার এই তাের মুখখানি
চুম্বন-লােভে সঁপিয়াছে আপনায়?
বল্ মােরে বল্ মিলন-বেলায় সে কোন্ মধুর বাণী
ব্যক্ত ক’রেছে মৃদু কল-বেদনায়?
নিথর! পারনা উত্তর দিতে, বাছারে, ক্ষমতা নাই,
জন্মের মত বন্ধ হ’য়েছে মুখ;
পথে যেতে যেতে মৃত্যু আপন অস্ত্র হেনেছে, তাই
জীবনের সাথী টুটেছে মাধুরীটুক্।
একি গাে দারুণ বারতা জানালে, মােরা যে রেখেছি ভেবে
জীবন টিঁকিতে পারে অনন্ত দিন;
এই সুখ, এই রূপ যৌবন, এও কি ফুরাবে, তবে,
এই ভালবাসা-এও তবে হ’বে ক্ষীণ!
কর্ম্ম-কঠোর দিন শেষে পাঠে ব্যস্ত র’য়েছি যবে,
একেলা নীরবে নির্জ্জন এই ঘরে,
পরাণ আমার গুরু ভাবনার ভাষাহীন গৌরবে
ধীরে ধীরে ধীরে এমনি করিয়া ভরে।
তোর পানে চেয়ে কেটে যায় বেলা নিয়তির কথা ভেবে,
বাহিরে আঁধার, নয়নে স্বপ্নঘোর;
সহসা ও তোর ললাটের লেখা দেখে ভয়ে উঠি কেঁপে,-
“মর্ত্ত মানুষ! সময় আসিছে তোর!”