তীর্থ-সলিল/দ্বিধার জীবন
দ্বিধার জীবন।
যে অবধি না হয় ছিন্ন,
জীবনের এই মধুর চিহ্ন,
যে অবধি ব্যক্ত না হয়,―
ব্যক্ত যাহা হবেই হবে;―
সে পর্য্যন্ত মন রে আমার,
পূজার্চ্চনার কি ফল তোমার?
মন্ত্রজপে―ছেলেখেলায়
মিথ্যা নিয়ে মত্ত র’বে?
নূতন কিবা বল্ব কথা,
নব নিঝর বয় না সেথা,
নূতন ক’রে পায় না ব্যথা
মানুষ কভু মরণ-শেষে;
বরষ পরে বরষ নেমে,
দেয় গো ঢেকে কতই প্রেমে;
হর্ষ-গীতি যায় গো থেমে,
অশ্রুজলের স্রোতে ভেসে।
একটি দিনের কর্ম্ম যদি,
আবিল করে জীবন-নদী,
মানুষ যদি হয় গো ঋণী
মৃত্যু-মহাজনের কাছে;―
ধাক্কা স’য়ে যদি সে তা’র
শক্তি ফিরে হয় দাঁড়াবার,
জেগেই যদি উঠ্বে আবার
দু’দিন আগে দু’দিন পাছে;―
তবে কেন কান্নাকাটি?
কেন হৃদয় ফাটাফাটি?
জীবন কেন হ’বে মাটি
উপাসনায়―উপবাসে?
যতই ডাক করপুটে,―
যতই মর মাথাকুটে,―
জীবন তবু যাবে টুটে
মৃত্যু সাড়া দিলে এসে।
কাল!―সে বটে সবার প্রভু;―
এড়িয়ে কেহ যায় না কভু;
একটু হাসিখুসি তবু
ওরি মধ্যে লুট্তে হ’বে;
নইলে শুধু জীবন, মরণ,
দুঃখ ও সুখ, শান্তি ও রণ,
কেবল গণন এবং স্মরণ
কর্ত্তে শুধু থাক্বে ভবে!
দু’দিন পরে ভাঙ্লে মেলা
সকল তা’তেই সমান হেলা,―
ইষ্ট মন্ত্র, জপের মালা,
কর্ম্ম, খেলা, কান্না, হাসি;
যে ক’টা দিন আছিস্ বেঁচে,
ফিঙের মত বেড়াস্ নেচে,
বিশ্ব ব্যাপার এঁচে, এঁচে,
মরিস্ নে আর শূন্যে ভাসি’।