নদী-সংবাদ।

বিশ্বামিত্র।
ত্যজি’ গিরি-জঙ্ঘায়,
ভাঙিয়া মন্দুরায়,
সাগর সঙ্গে মিলিতে রঙ্গে চলেছে তটিনী সঘনে; 
এলায়ে সলিল-পাশ,
শতদ্রু সনে বিপাশ—
সুন্দর তনু ধেনু-যুগ্মক ছুটেছে বৎস-লেহনে! 
ইন্দ্র প্রেরিত রথী,
সিন্ধুর পথে গতি,
ইন্দ্রাভিলাষ-পূর্ণকারিণী বাঞ্ছিত ধন কর দান 
একই প্রবাহে দুলি’
তরঙ্গে রঙ্গে ফুলি’

সমান গমনে ঊর্ম্মি মিলায়ে সাগরে করগো অভিযান; 
বৎস-লেহনকামী
ধেনু সম দ্রুতগামী
যেন মিলি দোঁহে সন্তান মোহে চলেছ অধীর গমনে; 
শতদ্রু মাতার পাশে
বিপাশা নদী সকাশে
আসিয়া হ’য়েছি উপনীত আজি—ক্লান্ত হইয়া ভ্রমণে। 
নদীদ্বয়।
আমরা রঙ্গে চলেছি,
সিন্ধুর দিকে ঢলেছি,
ফিরিবার নহে আমাদের গতি ফিরিবার নহে কভু সে; 
কেন বারবার তবে,
ডাকে ঋষি আমা সবে,
সব জেনে শুনে কেন অকারণে ডাকে আমা সবে তবু সে? 
বিশ্বামিত্র।
ওগো জলময়ী নদী,
ক্ষণতরে দোঁহে যদি
দাঁড়াও,—শুনাই নূতন স্তোত্র প্রসাদের অভিলাষী গো, 
আমি কুশিকের পুত্র,
রচিব নূতন স্তোত্র,
যাহে শত ধারে ঈপ্সিত সোম ক্ষরি’ পড়ে রাশি রাশি গো? 

নদীদ্বয়।
নাশিয়া বিরোধী বৃত্রে
নদীও নদ খনিত্রে
খনিলা ইন্দ্র বজ্র, আয়ুধ,— চলেছি তাঁহারি নির্দেশে, 
দ্যুতিমান, পটুহস্ত,
যে কাজে করিলা ন্যস্ত,
তাই সাধিবারে ছুটিয়াছি মোরা,—ছুটিয়াছি দেশে বিদেশে 
বিশ্বামিত্র।
বাসবের বীরকর্ম্ম
কীর্ত্তন করা ধর্ম্ম,—
কেমনে ইন্দ্র বজ্রে বিঁধিলা জলের অরাতি অহিরে; 
বাসবের গাহি জয়
কেমনে সলিল চয়
আসিয়া মিলিল,—মিলিয়া ধাইল উর্ব্বরা করি’ মহীরে। 
নদীদ্বয়।
ওগো ঋষি, ওগো হোতা,
বলিলে আজি যে কথা
ভুলিয়োনা তাহা, উক্‌থ রচিয়া আমাদের ক’র’ তুষ্ট, 
করি গো নমস্কার,
আমাদের তুমি আর
পুরুষের মত ক’র’ না ক’র’ না বাচালতা-দোষ-দুষ্ট! 

বিশ্বামিত্র।
শোনো গো আমার স্তুতি
দাও দোঁহে অনুমতি
বহুদূর হ’তে এসেছে এজন লয়ে ধন নানা মত; 
তোমাদের যত জল
যাক্ সে রথের তল,
সুখে পর পারে যেতে দাও মোরে হও ওগো অবনত। 
নদীদ্বয়।
ওগো ঋষি, ওগো হোতা,
শুনিনু সকল কথা;
সুখে হও পার ল’য়ে সে তোমার রথ ও তুরগ যত; 
সন্তানে দিতে স্তন,
পতিৱে আলিঙ্গন,
নারী সে যেমন হয় অবনত, রহিলাম তা’রি মত। 
বিশ্বামিত্র।
পার হয় যত নর
ভরত-বংশধর,—
ইন্দ্রপ্রেরিত তাহারা তোমার নির্দেশে নেমেছে নীরে; 
পেয়েছি গো অনুমতি
রচি’ তোমাদের স্তুতি
গা’ব সব ঠাঁই থাকি সে যেথাই,—যজ্ঞে যজ্ঞে ফিরে। 

ভরত-বংশধর
পার হ’ল যত নর,
রচি’ মনোজ্ঞ উক্‌থ নবীন করিছেন স্তুতি বিপ্র; 
অন্নদে! ধনপ্রদে!
ক্ষুদ্র নদী ও নদে
পবিত্র জলে ভরিতে ভরিতে চল দেশে দেশে ক্ষিপ্র। 

ঋগ্বেদ, তৃতীয় মণ্ডল, ৩৩ সূক্ত।