তীর্থ-সলিল/নিষ্ঠুরা সুন্দরী
নিষ্ঠুরা সুন্দরী।
কি ব্যথা তোমার ওহে সৈনিক,
কেন ভ্রম একা ম্রিয়মাণ!
শুকায় শেহালা হ্রদে হ্রদে, পাখী
গাহে না গান।
সৈনিক কিবা ব্যথিছে তোমায়?
কেন বা শ্রীহীন? কেন ম্লান?
শাখা-মূষিকের পূর্ণ কোটর,
মরাইয়ে ধান।
কমলের মত ধবল ললাটে
কেন বা ছুটিছে কাল-ঘাম?
কপোল-গোলাপ উঠিছে শুকা’য়ে,—
নাহি বিরাম।
“মাঠে মাঠে যেতে নারী সনে ভেট,—
সুন্দরী সে যে পরী-কুমারী,—
দীঘল চিকুর, লঘুগতি, আঁখি
উদাস তারি।
“গাঁথি’ মালা দিনু শিরে পরাইয়া,
কাঁকন, মেখলা কুসুমে গড়ি’;
চাহি’ মোর পানে আবেগে যেন সে
উঠে গুমরি’।
“চপল ঘোড়ায় লইনু তুলিয়া,
অনিমিখ সারা দিনমান;
পাশে হেলি’ সে যে গাহিল কেবলি
পরীর গান!
“আনি’ দিল মোরে কত ফলমূল,
দিল বনমধু, সুধারাশি গো
কহিল কি এক অপরূপ ভাষে,—
‘ভালবাসি গো!’
‘অপ্সর-বনে লয়ে গেল মোরে,
নিশ্বাসি’ কত কাদিল হায়;
মুদিনু তাহার ত্রস্ত নয়ন
চারি চুমায়।
“সেইখানে মোরে দিল সে নিদালি,
স্বপন দেখিনু কত হায়,
চরম স্বপন—তা’ও দেখেছি এ
গিরির গায়।
“মরণ পাংশু কত রথী, বীর,
কত রাজা মোরে ঘিরিয়া ঘোরে,
কহে তারা “হায়, নিঠুরা রূপসী
মজা’ল তোরে!
“দেখিনু তাদের ক্ষুধিত অধর,
লেখা যেন তাহে ‘সাবধান’
জেগে দেখি আমি হেথায় পড়িয়া,
গিরি শয়ান।
“সেই সে কারণে হেথা আমি আজ,
তাই ভ্রমি একা ম্রিয়মান;
যদিও শেহালা মরে হ্রদে, পাখী
না গাহে গান।”