তীর্থ-সলিল/হাফেজের রুবাইয়াৎ
হাফেজের রুবাইয়াৎ।
তুমি বলেছিলে “ভাবনা কি? আমি তোমারেই ভালবাসি;
আনন্দে থাক, ধৈর্য্য-সলিলে ভাবনা সে যাক্ ভাসি।”
ধৈর্য্য কোথায়? কিবা সে হৃদয়? হৃদয় যাহারে কয়,
সে ত’ শুধু এক বিন্দু শোণিত আর ভাবনার রাশি।
সমীর! গোপনে আমার কথাটি বলিয়া এস হে তায়,
জানাও আমার মরমের জ্বালা তা’রে শত জিহ্বায়;
তেমন করিয়া বল না যাহাতে বেদনা সে মনে পায়,
নানা বারতার মধ্যে আমার কথাটি জানায়ো, হায়।
মরণের বাণ জীবন-দেউল যখন করিবে চূর্ণ,
সেই মুহূর্ত্তে জীবন-পাত্র ভরিয়া হইবে পূর্ণ!
তখন হাফেজ! সতর্ক থেকো, যবে ল’য়ে যাবে তুলি’
জীবন-গৃহের সব তৈজস ক্রমশঃ কালের কুলি।
নদীতীরে যেয়ো মদিরা-পাত্র সাথে লয়ে,—যদি পার,
প্যান্পেনে যত কুনোদের ছেড়ে দূরে থেকো, ভাল আরো;
এমন সাধের জীবন মোদের দিন দশ বই নয়,
তাজা বুকে হাসি মুখে থাকা ওগো তাইত উচিৎ হয়।
গোপনে গোলাপ-মুকুল রয়েছে তোমায় দেখে,
সরমে চামেলি রয়েছে হোথায় মুখানি ঢেকে;
গোলাপের কলি কোথা পাবে হায় অমন কায়া?
যে রবির রূপে রূপসী সে,—তাহা তোমারি ছায়া!
তোমার বিরহে তপ্ত অশ্রু গলিছে বাতির মত,
পেয়ালার মত গোলাপী আঁথিয় জল ঝরে অবিরত;
হৃদয়ের, এই সঙ্কট-দিনে শুনি যদি বীণা-তান,
আঁখি-বারি রূপে হৃদয়-রক্ত ঝরে ব্যাকুলিয়া প্রাণ।
হৃদয়ে করেছি কাঁদিবার ঠাঁই তোমার বিরহে স্বামী!
সান্ত্বনা—তাও রেখেছি হৃদয়ে যতনে লুকায়ে আমি,
শত ঝঞ্ঝার আঘাতে পরাণ যতই পীড়িছ প্রভু!
অটল হৃদয়,—প্রত্যয় তার ভাঙিয়া পড়ে না তবু।
সকল কামনা সফল করিতে তুমি আছ কৃপাময়!
তুমি কাজী, তুমি কোরাণ আমার, তুমি মোর সমুদয়,
আমার মনের কথাটি তোমায় কি আর জানা’ব আমি?
তোমার অজানা কিছু কি জগতে আছে অন্তর্যামী!