ত্রিপুরার স্মৃতি/লাল্‌মাই পর্ব্বতপ্রান্তদেশস্থ কতিপয় প্রাচীন স্থান

লুয়া ত্রুটি মডিউল:Header_template এর 241 নং লাইনে: attempt to call method 'getId' (a nil value)।

লাল্‌মাই পর্ব্বতপ্রান্তদেশস্থ কতিপয় প্রাচীন স্থান

 কুমিল্লা নগরীর পশ্চিম প্রান্তে “লাল্‌মাই” নামে খ্যাত ন্যূনাতিরেক ৮ মাইল দীর্ঘ অরণ্যসঙ্কুল যে এক গিরিশ্রণী অবস্থিত, তাহার নানা স্থানে রাজধানী স্থাপন পূর্ব্বক কোন এককালে কতিপয় নৃপাল রাজত্ব করিয়াছিলেন—এইরূপ জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। তৎকালের যে কতিপয় প্রাচীন নিদর্শন অধুনা ঐ সমুদয় স্থানে বর্ত্তমান রহিয়াছে, এবং সেই সমস্তের সম্বন্ধে লোকমুখে যাহা কিছু অবগত হওয়া যায়, তদ্বিষয় নিম্নে বিবৃত হইল।

 কোট্‌বাড়ী

 উল্লিখিত পর্ব্বত-প্রান্তদেশস্থ কোটবাড়ী নামক জনপদে কতিপয় ইষ্টক-নির্ম্মিত ভবন ও প্রাচীরাদির অধুনা বহু সংখ্যক বিকীর্ণ ও স্তুপীকৃত ইষ্টকরাশি ব্যতীত তথায় আর কিছুই দৃষ্টিপথে পতিত হয় না। জনশ্রুতি এই—তৎসমুদয় সুপ্রাচীন কালের জনৈক রাজা কর্ত্তৃক নির্ম্মিত দুর্গ ও নিকেতনাদির বিধ্বস্ত অংশ। কিন্তু কোন্‌ সময়ে কাহার দ্বারা ঐ দুর্গ ও ভবনাদি নির্ম্মিত হইয়াছিল, এই কথা কেহই বলিতে সক্ষম নহে।

 স্মরণাতীতকাল অবধি জনসাধারণ কর্ত্তৃক এই স্থান “কোটবাড়ী” নামে অভিহিত হইয়া আসিতেছে। কোট শব্দ দুর্গ শব্দের পরিবর্ত্তে পূর্ব্ববঙ্গের জনসাধারণে প্রয়োগ করিয়া থাকে; ইহাতে প্রতীয়মান হয় যে, কোন মহীপ একদা এই স্থানে দুর্গনির্ম্মাণ পূর্ব্বক বাস করিয়াছিলেন—কালবিবর্ত্তনে তাঁহার বিষয় বিষ্মৃতির তিমিরময় গর্ভে নিহিত হইয়াছে।

 শালবানপুর

 কোটবাড়ীর দক্ষিণদিকে এক মাইল দূরবর্ত্তী উক্ত জনপদটী রাজা গোপীচাঁদের গুরু সিদ্ধাচার্য্য “হরিপা” ও “চৌরঙ্গী”র জন্মস্থান বলিয়া কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। কথিত আছে যে, হরিপার পিতা “শালবান” নামক জনৈক রাজার নামানুসাবেই গ্রামটী “শালবানপুর” বলিয়া অভিহিত এবং উক্ত বাজাব নাম সমম্বিত যে এক বৃহৎ সবোবর পল্লীমধ্যে আছে, তাহাও উক্ত রাজা কর্ত্তৃক খনিত হইয়াছিল। এতদ্ব্যতীত তাঁহাদিগেব সম্বন্ধে আর কোন কথাই জ্ঞাত হওয়া যায় না।

 ভোজরাজার কোট

 প্রাগুক্ত কোটবাড়ীর উত্তরে, অর্দ্ধ মাইল দূরে—“ভোজ রাজার দীর্ঘিকা” নামক সুপ্রসিদ্ধ যে এক সরোবর আছে, তাহার পশ্চিমদিকে ইষ্টক নির্ম্মিত ভবনাদির কতিপয় বিধ্বস্ত অংশ দৃষ্টিপথে পতিত হয়। জনশ্রুতি এই—তৎসমুদয “ভোজ” নামক এতৎ প্রদেশস্থ জনৈক রাজা কর্ত্তৃক নির্ম্মিত নিকেতনাদির ধ্বংসাবশেষ। এতদঞ্চলের সর্ব্বসাধারণের এই স্থানকে “ভোজরাজার কোট” নামে অভিহিত করে।

 আনন্দ রাজার কোট

 প্রাগুক্ত ভোজ দীর্ঘিকার উত্তরদিকে “আনন্দ-সাগর” নামক প্রসিদ্ধ এক পুষ্করিণীর পশ্চিম প্রান্তে কতিপয় প্রাচীরাদির ধ্বংসাবশেষ ও ইষ্টকরাশি বিক্ষিপ্ত রহিযাছে। ঐ সমস্তের সম্বন্ধে জনশ্রুতি এই—“আনন্দ” নামে খ্যাত জনৈক রাজা একদা এতদঞ্চলে রাজত্ব করিয়াছিলেন বলিখা যে প্রবাদ প্রচলিত আছে, সেই সময় তৎকর্ত্তৃক এই স্থানে যে সমুদয় নিকেতনাদি নির্ম্মিত হইযাছিল, উল্লিখিত বিকীর্ণ ইষ্টকাদি তাহারই ধ্বংসাবশিষ্ট অংশ। এই পল্লী “আনন্দ রাজার কোট” নামে জনসমাজে পরিচিত।

 “লালমাই” নামক প্রাগুক্ত পর্ব্বতমালার প্রান্ত দেশস্থ কতিপয় স্থানে যে সকল মহীপগণ রাজত্ব করিয়াছিলেন বলিয়া কথিত আছে, তাঁহারা কোন্‌ বংশসম্ভূত এবং কোন সময়ই বা তাহাদিগের রাজত্বকাল—জনশ্রুতি ব্যতীত এই সকল বিষয়ের প্রামাণিক ইতিবৃত্ত কিছুই অবগত হওযা যায় না।