নব্য জাপান ও রুষ জাপান যুদ্ধের ইতিহাস/সামাজিক রীতিনীতি

সামাজিক রীতিনীতি।

আচারব্যবহার, বেশভূষা, খাদ্য, কুসংস্কার ও

ক্রীড়াকৌতুক প্রভৃতি।

 সাধারণতঃ জাপানের অধিবাসিগণকে নিম্নলিখিত সাত ভাগে বিভাগ করা যাইতে পারে। ১ম সম্ভ্রান্তবংশ, ২য় যাজক, ৩য় রাজকর্ম্মচারী, ৪র্থ বণিক, ৫ম সৈনিক, ৬ষ্ঠ শিল্পী ও ৭ম শ্রমজীবিগণ। ([])

 সন্ত্রান্তবংশীয় ব্যক্তিগণ, যাজক-সমাজ, রাজকর্ম্মচারিগণ ও বাণিজ্যজীবি সম্প্রদায় লইয়া উচ্চশ্রেণী গঠিত হইয়াছে। এই শ্রেণীর পুরুষদিগের বর্ণ গৌর, শরীর দীর্ঘ ও মুখমণ্ডল শ্মশ্রুল। তাঁহাদের আকৃতি ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গাদির গঠন প্রণালী অনেকাংশে ভারতীয় শ্রেষ্ঠজাতিগণের অনুরূপ। তাঁহাদিগকে সহসা দর্শন করিলে, ব্রাহ্মণ, কায়স্থ প্রভৃতি উচ্চশ্রেণীর বাঙ্গালী বলিয়া ভ্রম উপস্থিত হয়।

 সৈনিক, শিল্পিগণ ও শ্রমজীবি সম্প্রদায় লইয়া নিম্নশ্রেণী গঠিত হইয়াছে। এই শ্রেণীর লোকদিগের বর্ণ পীত, আকৃতি খর্ব্ব, শ্মশ্রু বিরল, অধরোষ্ঠ স্থূল ও নাসিকা চেপ্টা। ইহারা অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও কষ্টসহিষ্ণু।

 জাপানী কুল-লক্ষ্মিগণের গঠন অতি সুন্দর। বর্ণ উজ্জ্বল গৌর, নয়নদ্বয় ভাসমান ও স্থির-কটাক্ষবিশিষ্ট। ভ্রমরকৃষ্ণ কেশরাশি অপূর্ব্ব কৌশলে পৃষ্ঠোপরি বিন্যস্ত। পাশ্চাত্য যুবতীসুলভ বিলাস বিভ্রম নাই, কিন্তু তথাপিও প্রথম দর্শনে দর্শক মাত্রেরই চিত্ত আকৃষ্ট হয়। বস্তুতঃই জাপানী স্ত্রী সুশীলা, একান্ত পতিপরায়ণা, সর্ব্বথা সংসার শুভকারিণী।

 জাপানে রমণীগণের নাম রাখায় একটু বিশেষত্ব আছে। প্রায়ই নামের পূর্ব্বে ‘ও’ এবং পরে ‘সান’ শব্দ ব্যবহৃত হয়। যাঁহার নাম তারা, তাঁহাকে সম্বোধন করিবার সময়ে “ও তারা সান” অর্থাৎ হে তারাসুন্দরী বলিয়া সম্বােধন করাই জাপানী সভ্যতা। “সান” শব্দ পুরুষের নামের পরে ব্যবহৃত হইলে মহাশয় অর্থ বুঝায়।

 “কাইমনো” জাপানবাসী পুরুষ ও রমণীগণের জাতীয় পরিচ্ছদ। ইহা দেখিতে অনেকাংশে বিলাতী অলষ্টার বা এদেশীয় আলখেল্লার অনুরূপ। কাইমনো স্কন্ধদেশ হইতে পাদমূল পর্যন্ত লম্বিত, ইহার ভিতরভাগ অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পকেটে পরিপূর্ণ। “ওবি” নামক নাতিপ্রসস্ত ৭।৮ হস্ত দীর্ঘ বস্ত্রখণ্ড দ্বারা কটিবন্ধের কার্য্য হইয়া থাকে। কাইমনো ও ওবি সাধারণতঃ কার্পাস সূত্রে নির্ম্মিত হয়। অবস্থাবানেরা রেশম নির্ম্মিত পরিচ্ছদাদি ব্যবহার করিয়া থাকেন। জাপানে অলঙ্কার পরিধানের প্রথা দেখিতে পাওয়া যায় না।

 জাপানের বালক বালিকারা বাল্যকাল হইতে পিতা, মাতা, জ্যেষ্ঠভ্রাতা প্রভৃতি গুরুজনের আদেশ প্রতিপালনে অভ্যস্থ হয়। ইহার ফলে জাপানিগণের পারিবারিক জীবনে কোন অশান্তি পরিলক্ষিত হয় না। জাপানী বালিকারা শৈশব হইতেই রন্ধন, গৃহমার্জ্জন, শয্যারচন, নিমন্ত্রিতগণের ভােজ্যাহরণ প্রভৃতি আবশ্যকীয় গৃহকার্য্য সমূহ অতি যত্নপূর্ব্বক সম্পন্ন করিয়া থাকে। জাপান কুমারী অতি অল্প বয়স হইতেই পতিব্রত্যধর্ম্মের শিক্ষা পাইয়া থাকে। ঘুড়িউড়ান, নদীরজলে কাগজের নৌকাচালান, কৃত্রিম যুদ্ধ, বিবাহাভিনয়, পুতুলের তীর্থযাত্রা, ধুলাখেলা প্রভৃতি এদেশীয় বালক বালিকাগণের প্রধান ক্রীড়া।

 জাপানে প্রত্যেক বালিকার যােগ্য বয়সেই বিবাহ হইয়া থাকে। উচ্চশ্রেণীরমধ্যে বিবাহের গড় বয়স পাত্রপক্ষে বাইশ ও পাত্রিপক্ষে ষোল বৎসর দৃষ্ট হয়। পিতা মাতা প্রভৃতি প্রকৃত অভিভাবকেরাই বিবাহসম্বন্ধ স্থির করিয়া থাকেন। ইহাতে কোন পক্ষ বিরাগ প্রদর্শন করে না। ([]) নিজ পরিবার বা আত্মীয় স্বজনের-মধ্যে কন্যার বিবাহসম্বন্ধ স্থির হইতে পারে না। কোনও জাপানী কুমারী স্বেচ্ছায় স্বয়ংবরা হইতে পারে না। সম্প্রদায় বিশেষে কন্যাপণ ও বরপণ প্রচলিত আছে। বিবাহ রজনীতে পানভােজন ব্যতীত অন্য কোন বিশেষ ধর্ম্মানুষ্ঠানের সংস্রব নাই। স্ত্রী-আচার প্রচলিত আছে। বিবাহ সমাপ্ত হইলে বর-বধূ তুষার-শুভ্র-পরিচ্ছদ পরিধান পূর্ব্বক গুরুজনের নিকট সৌন্দর্য্যবর্দ্ধন ও দীর্ঘজীবন কামনা করিয়া আশীর্ব্বাদ গ্রহণ করিয়া থাকে। বিবাহের একটী নিষ্ঠুর প্রথা এই যে, দম্পতি যুগলের একের বা উভয়ের মৃত্যু হইলে শবদেহ আবৃত করা হইবে বলিয়া, পরিণয়ের নবীন পরিচ্ছদ অতি যত্নপূর্ব্বক রক্ষা করা হইয়া থাকে।

 বালিকাবধূ বিবাহের অল্পদিবস পরেই পতিগৃহে গমন করিয়া থাকে। তথায় তাহাকে শ্বশ্রূঠাকুরাণীর সম্পূর্ণ শাসনাধীনে বাস করিতে হয়। তাহাকে প্রত্যুষে সকলের অগ্রে শয্যা হইতে গাত্রোত্থান করিয়া সংসারের যাবতীয় কর্ম্ম সম্পন্ন করিতে হয়। জাপানী যুবতীরা আপনাদিগকে পতির সমকক্ষ বলিয়া ধারণা করে না। তাহারা স্বামীকে দেবতার ন্যায় ভক্তি করিয়া থাকে। স্বামী অসচ্চরিত্র হইলেও তাহারা অসূয়া-পরবশ হয় না। তাহাদের বিশ্বাস, প্রবৃত্তি শান্ত হইলেই, স্বামীর চরিত্র আপনিই শােধিত হইয়া যাইবে। জাপানীবধূর ভালবাসা অপরিসীম হইলেও তাহা ইয়ুরােপীয় ললনাগণের ভালবাসার ন্যায় উদ্দাম ও চাঞ্চল্যপরিপূর্ণ নহে। ফলতঃ জাপানী স্ত্রীই পতি হৃদয়ের চির প্রহ্লাদিনী; সংসার সরােবরের প্রফুল্ল কমলিনী; সংসার তরুর বিনােদ বল্লরী; শান্তিকুঞ্জের সুরভি মল্লিকা।[]

 প্রাচীন ও মধ্যযুগে জাপানে বহু বিবাহ প্রচলিত ছিল। তৈহো সংহিতা নামক জাপানের প্রাচীন ধর্ম্মশাস্ত্রের ব্যবস্থানুসারে ভার্য্যা ব্যাভিচারিণী, মিথ্যাভাষিনী, শ্বশ্রূজনবিদ্বেষিনী, কন্যাপ্রসবিনী, চৌর্যাদি দোষাক্রান্তা ও পীড়িতা হইলে স্বামী অধিবেদন করিতে পারিত।[] এক্ষণে স্ত্রী ব্যাভিচারিণী, অভিভাবকের অসম্মতিতে গৃহত্যাগিনী ও চৌর্য্যাদি দোষাক্রান্তা হইলে, রাজবিধানের সাহায্য লইয়া পত্নীত্যাগ করিতে হয়। যাহারা লেখ্য-সাহায্যে চুক্তিবদ্ধ হইয়া বিবাহ করে, তাহারা রাজসাক্ষিক লেখ্যের চুক্তি অনুসারে বিবাহসম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন করিতে পারে।

 জাপানে নিম্নশ্রেণীর অশিক্ষিত সম্প্রদায়েরমধ্যে বিধবা বিবাহ প্রচলিত আছে। উচ্চ ও সম্ভ্রান্ত পরিবারমধ্যে এই প্রথা নিন্দনীয় বলিয়া অভিহিত হইয়া থাকে। অতি পূর্ব্বে সন্ত্রান্তবংশে সহমরণ প্রথা প্রচলিত ছিল, এক্ষণে রাজব্যবস্থা দ্বারা তিরােহিত হইয়াছে।

 জাপানে ভিন্ন ভিন্ন আখ্যাধারী বহুসংখ্যক বংশের পরিচয় পাওয়া যায়। প্রত্যেক বংশেই একজন করিয়া “ইউজি-নো- কামি” অর্থাৎ প্রধান আছে। পূর্ব্বে জাপানে প্রত্যেক বংশ রেজেষ্ট্রী হইত এবং রেজেষ্ট্রী পুস্তকে বংশের প্রধান ব্যক্তির নাম ও বাসস্থান লিখিত থাকিত। শেষ পুস্তকে ১১৮২টী বংশের উল্লেখ আছে।

 জাপানের প্রাচীন ধর্ম্মপুস্তকে ত্যজ্যপুত্রের উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়। পুত্র বংশের প্রধান ব্যক্তিকে অপমান করিলে, বংশগৌরবের হানিকর কোন কার্য্য করিলে, পুত্র উন্মত্ত বা ক্লীব হইলে ও চৌর্য্যাদি দোষাক্রান্ত হইলে পিতা কর্ত্তৃক পরিত্যজ্য হইত। এক্ষণে রাজবিধানের সাহায্য ব্যতীত ত্যজ্যপুত্র সিদ্ধ হয় না। জাপানে “কিউযোশী” অর্থাৎ পােষ্যপুত্র গ্রহণ প্রথা প্রচলিত আছে। চারি পুরুষের মধ্যস্থিত জ্ঞাতি হইতে ১০ বৎসরের ন্যূনবয়স্ক বালক দেখিয়া পােষ্যপুত্র লইতে হয়। জামাতাকে পােষ্যপুত্ররূপে গ্রহণ করা যায় না। তবে কোন বালককে গৃহে আনিয়া পােষ্যপুত্র করিয়া কন্যার সহিত বিবাহ দেওয়া যাইতে পারে। ইহাকে “মুকোযোশী কহে।” সম্প্রতি এই প্রথা জাপানে অত্যধিক বৃদ্ধি প্রাপ্ত হওয়ায় নুতন দেওয়ানী আইনের ৮৩৯ ধারায় ও রেজেষ্ট্রী আইনের ১০২ ধারায় মুকো-যােশী সম্বন্ধে কয়েকটী অভিনব নিয়ম সন্নিবেশিত হইয়াছে।

 জাপানে জ্যেষ্ঠপুত্রই পিতার সন্মান (বােটোকো-সােজোকু) ও সম্পত্তি (আইসান-সােজোকু) লাভ করিয়া থাকে। পুত্রাভাবে মৃত ব্যক্তির পিতা, পিতার অভাবে মাতা, তদাভাবে প্রথমা পত্নী, তদাভাবে মৃতের সহােদর, সহােদরাভাবে সহােদরা, তদাভাবে অন্য পত্নীগণ, তদাভাবে মৃতের জ্ঞাতি ভ্রাতাগণ সম্পত্তির উত্তরাধিকার করিয়া থাকে।

 অন্ন, মৎস্য ও শাকসব্জি জাপানিদিগের প্রধান খাদ্য। অতি সন্ত্রান্ত ব্যক্তি হইতে দীন পর্য্যন্ত সকলেই ভাত, মাছ, শাক আহার করিয়া থাকে। নিম্নে কয়টী উৎকৃষ্ট জাপানি ব্যঞ্জনের নাম লিখিত হইল।

জাপানী নাম বঙ্গীয় নাম জাপানী নাম বঙ্গীয় নাম
মিয়া সিম সুক্ত মাছিটোরি শাকের ঘণ্ট
লুইমনো মাছের ঝোল উমেনী শাক, মাছ ও লেবুর রস সহযোগে অম্ল
নিজাকানা আলু ও মাছের কালিয়া সুকিমনো আচার
টেরায়াকি মাছের চড়চড়ি গােসেন পায়ষ
সাসিমা চিংড়িমাছ ভাজা সিওয়াকি মাছের কাবাব

 মধ্যশ্রেণীর পরিবারে ভাত, চিংড়িসিদ্ধ, কাঁকড়ার কাবাব, কেবাকী (বাইন) ও জেটাচাকা (চাঁদা) মৎস্যের অম্ল নিত্যই রন্ধন হইয়া থাকে। নিম্নশ্রেণীর জাপানীরা অন্ন অপেক্ষা মৎস্য অধিক পরিমাণে ভোজন করিয়া থাকে।

 জাপানীরা পৃথিবীর অন্যান্য জাতির ন্যায় উচ্চাসনে উপবেশন করিয়া ভােজন করে না। তাহারা বঙ্গবাসীর ন্যায় পিঁড়ি ও পত্রের উপর উপবিষ্ট হইয়া হস্তসাহায্যে ভোজন করিয়া থাকে।

 জাপানে শূকর ও গো-মাংস ভক্ষণ চলিত নাই। এখানে কেহই গাে হত্যা করিতে পারে না। খৃষ্টধর্ম্মাবলম্বী ও ইয়ুরােপ প্রত্যাগতদিগের মধ্যে কেহ কেহ বিদেশাগত শুষ্ক গো-মাংস ও টেবিনেব (মুরগী) ভক্ষণ করিয়া থাকেন। জাপানিরা পরমান্ন ও পিষ্ঠকাদি ব্যতীত কেবলমাত্র দুগ্ধপান করে না। তরকারী বিশেষে দুগ্ধ, ঘৃত, নবনীত, তৈল ও চর্ব্বি ব্যবহৃত হইয়া থাকে।

 জাপানের অধিকাংশ নরনারী প্রত্যহ চা-পান করিয়া থাকে। সাকি ও সয় জাপানের জাতীয় সুরা, প্রায় সকলেই পান করিয়া থাকে। সাকি চাউল হইতে প্রস্তুত হয়। ইহা প্রথমে ওসাকা নগরে প্রস্তুত হইয়াছিল বলিয়া ইহার নাম “সাকি” হইয়াছে। চিকিৎসকের অনুমতি ভিন্ন জাপানে কেহই অহিফেন সেবন করিতে পারে না। এখানে সিগারেট ও বিবিধ প্রকারে তাম্রকূট সেবনের প্রথা আছে।

 জাপানবাসিদিগের মধ্যে অনেকগুলি কুসংস্কার বর্ত্তমান আছে। এখানে রাত্রে লবণ ধার করিতে নাই। মাসের শেষ শনিবারে বস্ত্র ধৌত করিতে নাই। বিবাহের দিনে বরকন্যার পরিচ্ছদ লাল বা বেগুনি বর্ণের হইলে উভয়ের মধ্যে দাম্পত্যবন্ধন স্থায়ী হইবে না। কোন বালক দর্পণে মুখ দেখিলে, তাহাকে যৌবনে যমজ সন্তানের জনক হইতে হয়। গ্রহণের সময়ে জলপান করিলে শরীরমধ্যে বিষ প্রবিষ্ট হয়। কুকুর কাঁদিলে গৃহস্থের অকল্যাণ হয়; মোরগ চালে উঠিলে গৃহদাহের আশঙ্কা আছে। মৎস্য ধরিবার মানসে যাত্রা করিয়া পুরোহিতের সহিত সাক্ষাৎ হইলে, বাটীতে ফিরিয়া আসাই মঙ্গল। গ্রামে বসন্ত ও কলেরা প্রভৃতি সংক্রামক পীড়ার প্রাদুর্ভাব হইলে, গৃহস্থেরা দ্বারদেশে লিখিয়া দেয় যে, এবাটীতে বালক বালিকা একটীও নাই। জাপানীরা যাত্রা কালে বক ও সুকি নামে কচ্ছপ দেখিলে বড়ই আনন্দানুভব করিয়া থাকে।

 জাপানবাসিরা সর্ব্বদাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকিতে ভালবাসে। অনেকে প্রত্যহ তিনবার স্নান করিয়া থাকে। এখানে প্রতি গৃহস্থের বাটীতে কয়েকটী ফুলের গাছ, একখণ্ড ক্রীড়াভূমি ও একটী কূপ দেখিতে পাওয়া যায়। জাপানীরা প্রাণ ভরিয়া মুক্তবায়ু সেবন করিতে পারিলে বড়ই প্রফুল্ল হয়।


  1. জাপানে “এটা”, “এনো” ও “হিনিও” নামে তিন শ্রেণীর আদিম অবিধাসী আছে। তাহারা সাধারণতঃ পার্ব্বত্যজাতি নামে অভিহিত হইয়া থাকে। যেশোদ্বীপের উত্তরাংশে হিমপ্রধান পার্ব্বত্য প্রদেশে ইহাদিগকে অধিক দেখিতে পাওয়া যায়।
  2. সম্প্রতি জাপানের শিক্ষিত-সমাজে একটী নূতন প্রথার প্রচলন হইয়াছে। বিবাহ সম্বন্ধ স্থাপনের পূর্ব্বে ভাবী জামাতাকে নিমন্ত্রণ পূর্ব্বক বাটীতে আনিয়া, তথায় তাঁহাকে ভাবী বধূর সহিত সাক্ষাৎ করিবার অবসর দেওয়া হয়। সাক্ষাৎ হইয়া গেলে, বর, যথাক্রমে কন্যার গুণ, বিদ্যা ও রূপ সম্বন্ধে তিনটী আপত্তি উত্থাপন করিতে পারেন। কন্যার কোন অধিকার নাই।
  3. জাপানের স্ত্রী-শিক্ষানীতি কিরূপ আনন্দপ্রদ, জাপানী মহিলাগণের চরিত্র কিরূপ উন্নত ইহা বিশদরূপে অবগত হইতে হইলে “Unbeaten tracks in Japan” অর্থাৎ “অগম্য পূর্ব্ব জাপান” নামক গ্রন্থখানি পাঠ করা কর্ত্তব্য।
  4. “তৈহো সংহিতার” সহিত অস্মদীয় মনুসংহিতা প্রভৃতির বিশেষ সাদৃশ্য লক্ষিত হয়। অধিবেদন সম্বন্ধে মনু লিখিয়াছেন;

    মদ্যপাহ সাধুবৃত্তা চ প্রতিকূলা চ যা ভবেৎ।
    ব্যাধিতা বাধিবেত্তব্যা হিংস্রার্থঘ্নী চ সর্ব্বদা॥
    বন্ধ্যাষ্টমেঽধি বেদ্ব্যাব্দে দশমে তু মৃতপ্রজা।
    একাদশে স্ত্রীজননী সদ্যস্ত্বপ্রিয় বাদিনী॥ ৯ম অঃ ৮০৷৮২

     অর্থাৎ মদ্যাপানাসক্তা, দুশ্চরিত্রা, গতিবিদ্বেযিণী, ব্যাধিগ্রস্থা, অপকার-সাধনক্ষমা ও ধনক্ষয়কারিণী স্ত্রী সত্ত্বে স্বামী বিবাহ করিবে। স্ত্রী বন্ধ্যা হইলে, মৃতবৎসা হইলে, কন্যাপ্রসবিনী হইলে, অপ্রিয়ভাষিণী হইলে অধিবেদন করিবে।

     The commentators of the Taiho code say that the sterility here dose not mean actul barrenness, but the failure of male issue. অর্থাৎ তৈহোসংহিতার টীকাকারেরা বলিয়াছেন, কেবল বন্ধ্যা নহে, কন্যাপ্রসবিনী স্ত্রী সত্ত্বেও দারান্তর করিবে।