নাগপাশ (হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ)/প্রথম খণ্ড/প্রথম পরিচ্ছেদ

প্রথম খণ্ড।

দুঃখের আভাষ।

প্রথম পরিচ্ছেদ।

দত্তপরিবার।

ধূলগ্রামের দত্তপরিবার সম্ভ্রান্ত বংশ। শিবচন্দ্রের প্রপিতামহ মুর্শিদাবাদে নবাবসরকারে কার্য্য করিতেন। তখনও দেশে রেল বা ষ্টীমার আইসে নাই; রাজপথ শ্বাপদভয়ে ও দস্যুতস্করের অত্যাচারে দুর্গম; জলপথ জলদস্যুবর্জ্জিত নহে; যাহাদের হস্তে দেশের শান্তিরক্ষার ভার ছিল, তাহারা রক্ষক না হইয়া প্রায় ভক্ষক হইয়া উঠিত; শৃঙ্খলাভাবে দিল্লীর শাসনদণ্ড বাঙ্গালায় ও মুর্শিদাবাদের শাসনপ্রতাপ বাঙ্গালার ভিন্ন ভিন্ন জিলায় প্রসারিত হইত না; দেশের লোকের ধনপ্রাণ নিরাপদ ছিল না; যাহার ধনসম্পত্তি থাকিত—তাহাকে তাহার রক্ষার ব্যবস্থা করিতে হইত। সেই সময় শিবচন্দ্রের প্রপিতামহ দেশে পারসী শিখিয়া বহুকষ্টে মুর্শিদাবাদে উপনীত হয়েন, এবং অক্লান্ত চেষ্টায় নবাবসরকারে চাকরী লাভ করেন। অসাধারণ প্রতিভা, অনন্যসাধারণ শ্রমশীলতা ও প্রচুর কার্য্যদক্ষতা বশতঃ তিনি অল্পদিন মধ্যেই উচ্চপদে উন্নীত হয়েন। সেই হইতেই দত্তদিগের সৌভাগ্যের সূত্রপাত। তিনি এক জীবনে যে পরিমাণ অর্থ অর্জ্জন করিয়াছিলেন, এখনকার দিনে চাকরী করিয়া এক জীবনে সে পরিমাণ সংগ্রহের আশা একান্তই সুদূরপরাহত। তিনি আপনার পিতৃহীন, একমাত্র ভ্রাতুষ্পুত্ত্রকে ও স্বীয় জ্যেষ্ঠ পুত্ত্রকে নবাবসরকারেই কার্য্যে ব্রতী করিয়া দিয়াছিলেন; কিন্তু তীক্ষ্ণবুদ্ধিবলে অল্পদিনেই যখন বুঝিয়াছিলেন, তাঁহার অবর্ত্তমানে তাহারা কোনরূপেই কার্য্য চালাইতে পারিবে না, তখন তাহাদিগকে কার্য্য হইতে অবকাশ লওয়াইয়া গৃহে প্রেরণ করিয়াছিলেন। তাহার প্রধান কারণ, তাঁহার পদোন্নতি অনেকের ঈর্ষ্যার ও মনোবেদনার কারণ হইয়া উঠিয়াছিল; তাহারা যে সুযোগ পাইলেই তাঁহার অনিষ্ট করিবে, ইহা তিনি বিলক্ষণ জানিতেন। যে তীক্ষ্ণপ্রতিভাবলে তিনি তাহাদিগের অনিষ্টচেষ্টা ব্যর্থ করিয়াছিলেন, সেই প্রতিভাহীন পুত্ত্রকে ও ভ্রাতুষ্পুত্ত্রকে লইয়া পাছে তাঁহাকে বিপন্ন হইতে হয়,এই আশঙ্কায় তিনি তাহাদিগকে আর কার্য্যে ব্রতী রাখেন নাই। কিন্তু তাঁহার কৃপায় তাঁহার জ্ঞাতি, কুটুম্ব, স্বদেশীয় ও স্বজাতীয় অনেকে নবাব সরকারে কার্য্য পাইয়াছিলেন। তখন লোকে সমাজ বলিতে ব্যক্তির সমষ্টি না বুঝিয়া পরিবারের সমষ্টি বুঝিত; তখনও আত্মীয় স্বজনাদির উপকার দেবসেবারই মত খয়রাতখাতে খরচ পড়িতে আরম্ভ হয় নাই।

 কর্ম্মস্থানেই তাঁহার মৃত্যু হয়। তাঁহার চারি পুত্ত্র ও এক ভ্রাতুষ্পুত্ত্র একত্র এক সংসারে বাস করিতে লাগিলেন। তখনও বাঙ্গালায় “ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই” হইবার ব্যবস্থা হয় নাই। এই সময় হইতে লক্ষ্মী চাঞ্চল্য প্রকাশ করিতে লাগিলেন। পরিবার বাড়িতে লাগিল, সঙ্গে সঙ্গে আশ্রিতদিগের সংখ্যাও বাড়িতে লাগিল। অতিথি আসিলে ফিরাইবার রীতি নাই; ক্রিয়াকর্ম্মে ব্যয়সংক্ষেপ করাও হইয়া উঠে না; কারণ, যে অবস্থা-পরিবর্ত্তনের সূচনা দেখিয়া ব্যয়সঙ্কোচ করিতে যায়, তাহার সহজেই মনে হয়, ইহাতে লোকে তাহার অবস্থা একান্ত শোচনীয় বলিয়া মনে করিবে। অর্থস্রোতঃ সমানভাবে ভাণ্ডার হইতে প্রবাহিত হইতে লাগিল, কিন্তু আর পূর্ব্বের মত অবারিতগতিতে ভাণ্ডার পূর্ণ করিত না।

 এই সময় দত্ত-পরিবারে আর একটি দুর্ঘটনা ঘটিল। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বিষয়কর্ম্মাদিতে অভিজ্ঞ হইতেছিলেন; তাঁহার মৃত্যু ঘটিল। তাঁহার পত্নী স্বামীর চিতায় আরোহণ করিয়া মরণে পতির সহগামিনী হইলেন। ‘তাঁহাদিগের একমাত্র পুত্ত্র—শিবচন্দ্র ও নবীনচন্দ্রের পিতা তখন বালক। তখন সংসারের সকল ভার শিবচন্দ্রের এক খুল্লপিতামহের হস্তে ন্যস্ত হইল। তিনি বিষয়কর্ম্মাদিতে যেমন অনভিজ্ঞ, তেমনই অপারগ। তিনি মিতব্যয়িতা জানিতেন না। পরিবারস্থ সকলে পূর্ব্বের অভ্যাসে ব্যয়সঙ্কোচ করিতে শিক্ষা করেন নাই। তিনি তাঁহাদের ব্যবহারের প্রতিবাদ করিতেন না,—করিতে পারিতেন না। ভালবাসার পাত্রগণ সকল সময় সুবিধা অসুবিধা বুঝে না। তাহাদিগের জন্য মানুষ সাধ্যের অধিক করিবার চেষ্টা করে, অসম্ভবকে সম্ভব করিবার প্রয়াস পায়; কারণ, প্রণয়াস্পদের হৃদয়ে বেদনা বাজিলে, সে ব্যথা যে ভালবাসে, তাহার হৃদয়ে দ্বিগুণ বাজে। অত্যাচারের মধ্যে ভালবাসার অত্যাচার নিষ্ঠুরতম; দৌরাত্ম্যের মধ্যে স্নেহের দৌরাত্ম্য সমধিক ক্লেশদায়ক। তখন, গৃহকর্ত্তা গৃহকষ্টে অনভিজ্ঞ হইলে যাহা হয়, তাহাই হইল; সম্ভ্রান্ত দত্ত-পরিবারের ধনভাণ্ডার ছিদ্রপথনিঃশেষিতবারি কুম্ভের মত অন্তঃসারশূন্য হইতে লাগিল; সেই পরিবার মেঘাবৃতশিখর পর্ব্বতের দশাগ্রস্ত হইল। তাঁহার অপেক্ষাকৃত দীর্ঘজীবনকালেই দত্ত-পরিবারের ধনসম্পদ ও জন-সম্পদ হ্রাস প্রাপ্ত হইল। ছেলেরা কেহ কেহ কর্ম্মের চেষ্টায় গৃহত্যাগ করিতে বাধ্য হইল; পরিবারের দৃঢ় বন্ধন শিথিল হইয়া আসিল।

 তাঁহার মৃত্যুর পর সম্পত্তির বিভাগ হইল। কর্ম্মোপলক্ষে বিদেশে যাইয়া যিনি যে স্থানে সুবিধা করিতে পারিয়াছিলেন, তিনি সেই স্থানেই স্থায়ী হইয়া বসিলেন। যাঁহারা কোথাও সুবিধা করিতে পারেন নাই, এবং যাঁহারা গ্রামেই ছিলেন, তাঁহারা—যিনি যে স্থানে সম্পত্তির অংশ পাইলেন, বা সুবিধা বুঝিলেন, সেই স্থানে যাইয়া বাস করিতে আরম্ভ করিলেন। শিবচন্দ্রের পিতা পৈত্রিক বাসগৃহ, পুষ্করিণী, বাগান ও সামান্য জমী জমা লইয়া পৈত্রিক ভিটাতেই বাস করিতে লাগিলেন। কিন্তু তাঁহারই বিপদ সর্ব্বাপেক্ষা অধিক। জমীজমার আয়ে কোনও রূপে সাংসারিক ব্যয়নির্ব্বাহ হয় মাত্র। কিন্তু তখনও গ্রামে অতিথি আসিলে দত্তগৃহেই উপস্থিত হয়; তখনও পূজার দালানে দুর্গোৎসব ভিন্ন আর সকল পূজাই হয়। দুর্গোৎসব না হইবার কারণ, একবার বোধনে বলির পশু খড়্গের প্রথম আঘাতেই খণ্ডিতমুণ্ড হয় নাই; পরদিন গৃহে একটি বালকের মৃত্যু ঘটে —সেই হইতে দত্তগৃহে দুর্গোৎসব বন্ধ হয়। গৃহকর্ত্তা প্রথমে বলিয়াছিলেন, “মা দিয়াছিলেন, মা'ই লইয়াছেন; পূজা বন্ধ করিব না।” কিন্তু পরে অপরের অজ্ঞাত কোনও কারণে তাঁহার বিশ্বাস জন্মে, পূজা বন্ধ হওয়াই দেবীর অভিপ্রেত।

 পিতার মৃত্যুর পর শিবচন্দ্র ও নবীনচন্দ্র দেখিলেন, পৈত্রিক সম্পত্তির আয়ে সংসারের আবশ্যক ব্যয়ের নির্ব্বাহ হওয়াই দুষ্কর; জীর্ণ গৃহের সংস্কারাদির ব্যয় আসিবে কোথা হইতে? পূজা পার্ব্বণ বন্ধ হইল,—চণ্ডীমণ্ডপের তক্তপোষ আর উঠে না। সঙ্কীর্ণ আয়ে নানারূপ ব্যয়ের সঙ্কুলান হয় না।

 এই সময় পিতামাতার অপেক্ষাকৃত অধিক বয়সে—শিবচন্দ্রের পুত্র প্রভাতের জন্ম হইল। আর অতর্কিতভাবে— অপ্রত্যাশিত পথে কমলার কৃপা দত্তদিগের জীর্ণগৃহে প্রবেশ করিল। শিবচন্দ্রের জ্যেষ্ঠা ভগিনীর শ্বশুর ব্যবসায়ে বিশেষ সঙ্গতিপন্ন হইয়াছিলেন। দারুণ বিসূচিকায় তাঁহার ও পর দিবস তাঁহার পুত্রের মৃত্যু ঘটে। তাঁহার পত্নী কাশীবাসিনী হইবার ইচ্ছা করিলে বিধবা পুত্রবধূই বলিলেন, “মা, ভিটা যে শূন্য হইবে!” শেষে উভয়ে যুক্তি করিয়া এক জ্ঞাতিপুত্রকে আনিয়া পালন করিলেন। কিন্তু পতিপুত্রশোকে শাশুড়ীর শরীর ভাঙ্গিয়া গিয়াছিল,—বৎসর ফিরিতে না ফিরিতেই তাঁহার মৃত্যু হইল। বধূ জ্ঞাতিপুত্রকে লইয়া শ্বশুরের ভিটায় বাস করিতে লাগিলেন। শিবচন্দ্রের যখন পুত্রলাভ হইল, তাহার অব্যবহিত পূর্ব্বেই তাঁহার জ্যেষ্ঠা ভগিনীর সেই পালিত জ্ঞাতিপুত্রের মৃত্যু হইয়াছে। তিনি তখন অগত্যা শ্বশুরের গৃহ ত্যাগ করিয়া পিত্রালয়ে আসিলেন।

 পিসীমা'র অর্থ তাপতপ্ত ধরাবক্ষে নিদাঘদিনান্তের স্নিগ্ধ বর্ষণের মত দত্তগৃহে বর্ষিত হইল। বিষয়বুদ্ধিসম্পন্ন শিবচন্দ্র পৈত্রিক গৃহের কতক অংশ ভাঙ্গিয়া অবশিষ্ট অংশের সংস্কার করিয়া লইলেন, এবং অর্থের সুযোগমত ব্যবহারে আয়ের পথ প্রশস্ত করিলেন।

 প্রভাত পিসীমার শূন্য অঙ্ক ও শূন্য হৃদয় পূর্ণ করিল। তাহাকে লইয়া পিসীমার আর বিশ্রাম রহিল না। এমন কি, তিন বৎসর পরে, দুইটি মৃতসন্তান প্রসবের পর নবীনচন্দ্রের পত্নী যখন কমলকে প্রসব করিয়া দারুণ সূতিকায় শয্যাশায়িনী হইলেন, তখনও প্রভাত পিসীমার অঙ্কের মৌরশী পাট্টা আগুলিয়া রহিল। কোনও কোনও লতিকা যেমন ফললাভের সঙ্গে সঙ্গে শুকাইয়া যায়, নবীনচন্দ্রের পত্নীও তেমনই কমলের জন্মের চারি মাস পরে জীর্ণদেহ ত্যাগ করিলেন। কমলের প্রতি যে পিসীমার স্নেহ ছিল না, এমন নহে; তবে প্রভাত তাঁহার প্রিয়তম। কমল জ্যোঠাইমা'র অঙ্ক অধিকার করিয়া লইল, জ্যেষ্ঠতাতের ‘মা’ হইয়া দাঁড়াইল।

 নবীনচন্দ্র আর বিবাহ করেন নাই। শিবচন্দ্রেরও অন্য সন্তান হয় নাই।

 যথাকালে শুভদিনে প্রভাতের হাতে-খড়ি হইয়া গেল। কিন্তু প্রথম প্রথম তাহাকে পড়ান লইয়াই বিপদ উপস্থিত হইল। তাহাকে তিরস্কার করিলে পিসীমা’র তাহা সহিত না। গ্রামের পাঠশালার গুরুমহাশয়ের শাসনের ভয়ে তাহাকে পাঠশালায় পাঠান বন্ধ করিতে হইল। শিবচন্দ্র চিন্তিত হইলেন। তখন নবীনচন্দ্র স্বয়ং তাহার শিক্ষার ভার লইলেন—খেলার সঙ্গে শিক্ষাদান চলিতে লাগিল। প্রভাত বুদ্ধিমান ছিল; নবীনচন্দ্রের যত্নে অল্প দিনেই পাঠে উন্নতি লাভ করিতে লাগিল।

 নবীনচন্দ্র যতদিন পারিলেন, স্বয়ং তাহাকে গৃহে পড়াইলেন। পরে এক জন শিক্ষক আনাইয়া তাহার পাঠের ব্যবস্থা হইল। পরীক্ষার সময় নবীনচন্দ্র স্বয়ং তাহাকে সঙ্গে লইয়া কলিকাতায় যাইলেন; প্রভাত প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়া আসিল।

 প্রভাত যখন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইল, তখন তাহাকে পাঠার্থ কলিকাতায় প্রেরণ করাই স্থির হইল। পিসীমা বুঝিলেন, আর তাহাকে রাখিতে পারিবেন না। তিনি হৃদয়ে বিষম বেদনা পাইলেন;—শেষে বিদেশে তাহার যাহা কিছু আবশ্যক হইতে পারে, সব দিয়া তাহার বাক্স গুছাইয়া দিলেন। নবীনচন্দ্র তাহাকে কলিকাতায় ছাত্রাবাসে রাখিয়া আসিলেন। গৃহ শূন্য হইল;—পূর্ব্বেই পার্শ্ববর্ত্তী গ্রামে কমলের বিবাহ হইয়াছিল। সে শ্বশুরালয়ে ছিল।

 কলিকাতায় ছাত্রাবাসে ছাত্রগণ সাধারণতঃ মাসে যে পরিমাণ অর্থ পায়, প্রভাত তাহার অপেক্ষা অধিক অর্থ পাইত, এবং ব্যয় করিত। বিদ্যালয়ের বেতনাদি আবশ্যক ব্যয় ত সে পাইতই, তদ্ব্যতীত প্রত্যেকবার কলিকাতা-যাত্রার সময় পিসীমা তাহাকে কিছু কিছু অর্থ দিয়া দিতেন,— আবার নবীনচন্দ্র প্রতি মাসেই দাদার অজ্ঞাতে তাহাকে কিছু টাকা পাঠাইতেন। প্রভাত বেশবিন্যাসাদিতে অতিরিক্ত মনোযোগ দান করিত— অধিক ব্যয় করিত। শিবচন্দ্র তাহা নিবারণ করিবার চেষ্টা করিলে, নবীনচন্দ্র সে চেষ্টা ব্যর্থ করিতেন। শৈশবে যেমন পিসীমা তাহার সকল দোষ ঢাকিবার চেষ্টা করিতেন, এখন তেমনই খুল্লতাত তাহার দোষ বিষয়ে ভ্রাতাকে অন্যমনস্ক রাখিবার প্রয়াস পাইতেন। এবারও তাহা হইল। পুত্ত্রের বেশে একটা নূতন দ্রব্যের সংযোগ দেখিয়া শিবচন্দ্র কনিষ্ঠকে বলিলেন, “নবীন, দেখিয়াছ—প্রভাত ‘সাহেব’দের মত গলায় একটা কি কঠিন দ্রব্য ব্যবহার করে? কেবল অপব্যয়।” নবীনচন্দ্র উত্তর করিলেন, “দাদা, ওটা ঠিক অপব্যয়ও নহে। এখন ছেলেরা মূল্যবান গরম জামা ব্যবহার করে। ওটা নহিলে জামা মলিন হয়। ও সব এখন রেওয়াজ হইয়াছে। আপনি যেন ঐ জন্য আবার প্রভাতকে তিরস্কার করিবেন না।” শিবচন্দ্র পুত্রকে তিরস্কার করিলেন না; কিন্তু এ কৈফিয়ৎ তাঁহার নিকট সন্তোষজনক বোধ হইল না। তিনি মনে করিলেন, পুত্ত্র অমিতব্যয়ী হইতেছে।

 প্রভাত গত বৎসর এফ্. এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া বি. এ. পড়িতেছে; পূজার ছুটীতে বাড়ী আসিয়াছে।

 কয় মাস পরে বাড়ীর একমাত্র ছেলে বাড়ী আসিয়াছে; পিসীমা ও নবীনচন্দ্র অজস্র আদরে তাহাকে যেন বিব্রত করিয়া তুলিলেন। কমল কয় দিন পূর্ব্বে শ্বশুরালয় হইতে আসিয়াছিল। প্রভাতের জন্য গৃহে নিত্য যে বৃহৎ আয়োজন হইতে লাগিল, তাহা স্নেহ ব্যতীত অন্য কোনও কারণে হইতে পারে না। পিসীমা ও কমল, উভয়ে নিকটে বসিয়া তাহাকে আহার করান,— নবীনচন্দ্র তাহাকে না লইয়া বাটীর বাহির হয়েন না।