মা

কে আমায় করে’ছিল গর্ভে স্থান দান,
কে আমায় করাইত স্তন-দুগ্ধ পান।
কে আমায় কোলে করি’ চুপ করাইত,
কে আমায় স্নেহভরে চুম্বন করিত।

আমার নয়ন হ’তে নিদ্রা গেলে চলে,
কে ঘুম পাড়া’ত যত্নে, আয় আয় বোলে।
পাছে আমি কাঁদি বলে, দোলাটি ধরিয়া,
কে আমায় ঘন, ঘন, দিত দোলাইয়া।
যখন পীড়ার কষ্টে, অস্থির হইয়া,
কেঁদে কেঁদে উঠিতাম, থাকিয়া থাকিয়া।
একদৃষ্টে আমাপানে চাহিয়া, তখন,
অমঙ্গল ভয়ে, কেবা করিত রোদন।
কে এসে আমার কাছে বসিত যখন,
কতই আরাম আমি পেতাম তখন।
চরণ অশক্ত ছিল শৈশবে যখন,
যেতে যেতে, যদি পড়ে’ যেতাম তখন,
ছুটোছুটি কে আসিয়া আমারে ধরিত,
আহা রে, আমার বাছা, বলিয়া তুলিত।
কে করিত এ সকল তুমি কি জাননি?
আমার জননী তিনি, মা আমার তিনি।
বাৰ্দ্ধক্যে যখন তাঁর কেশ শুভ্র হবে,
শরীরের, মানসের শক্তি নাহি রবে,
হায়! কি তখন আমি এমনি হইব,
এত দয়া এত স্নেহ সকলি ভুলিব?

 এ চিন্তারে মনে কি মা, স্থান দিতে পারি,
এক মনে সেবিব মা চরণ তোমারি।
ঈশ্বর যদ্যপি মাতঃ, করেন কল্যাণ,
অকালে আমার যদি নাহি যায় প্রাণ;
তাহ’লে বার্দ্ধক্যে তব বসি শয্যা-পাশে,
যতন করিব তব আরামের আশে।
উঠিয়া যাইতে ইচ্ছা যখন করিবে,
আমার বাহুই তব আশ্রয় হইবে।
যখন যে কাজ মাতঃ, বলিবে করিতে,
সেই ক্ষণে, তাহা আমি করিব ত্বরিতে।
আমারে ছাড়িয়া তুমি যা’বে মা যখন,
আমারো শোকের অশ্রু পড়িবে তখন।